অনলাইন ডেস্কঃ
টোল প্লাজার কাজে ধীরগতির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা তিন দিন ধরে তীব্র যানজট লেগে আছে। মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজাই সৃষ্টি করছে এই দীর্ঘ যানজট। এ দুটি টোল প্লাজায় টোল পরিশোধ করতে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটসহ সব ধরনের গাড়িকে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। রবিবার সন্ধ্যায় সৃষ্টি হওয়া যানজট গতকাল আরও তীব্র হয়ে ওঠে। কখনো কখনো সন্ধ্যায় সৃষ্টি হওয়া হালকা যানজট গভীর রাত গড়িয়ে ভোর পর্যন্ত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দিনের কোনো কোনো সময় ধীরগতিতে গাড়ি চললেও বেশিরভাগ সময় গাড়ি বন্ধ করে বসে থাকতে হচ্ছে চালকদের। এতে কয়েক মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। এই দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে মেঘনা-গোমতী, মেঘনা সেতুর সংস্কার কাজ। এ দুটি সেতুর সংস্কার কাজ চলার জন্য একটি করে লেন বন্ধ রাখা হয়েছে। সরু দুই লেনে এক সারিয়ে গাড়ি চলছে ধীর গতিতে। যা যাত্রীদের দুর্ভোগ আর অপেক্ষার প্রহর বাড়িয়েছে অনেক গুণ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। সেই গাড়ি বা বাসে থাকা নারী শিশুরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনা-গোমতী, মেঘনা দুটি ব্রিজের যানজটে আটকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। এই মহাসড়ক চারলেন হওয়ার পর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগার কথা থাকলেও সেখানে ছয়-সাত ঘণ্টা সময় লাগছে। এজন্য যাত্রীরা দাউদকান্দি টোলপ্লাজার গাড়ি ছাড়ার ধীরগতি আর মেঘনা-গোমতী, মেঘনা দুটি ব্রিজের সংস্কার এলাকার যানজটকে দায়ী করেছেন। গত সোমবার থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা তিনদিন থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কুমিল্লা দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ৪০কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সোনারগাঁও থেকে দাউদকান্দির হাসানপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার যানজট ছিল। এতে রাস্তার দুই পাশে শত শত বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকে থাকতে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দুপুরে তীব্র রোদ ও আর গরমে মানুষের জীবন হাসফাঁস হয়ে উঠে তীব্র এই যানজটে।
কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী বাসের যাত্রী আবুল কালাম বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফোরলেন হওয়ার পর আমরা আশায় বুক বেঁধেছি যে, কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যাব দেড় ঘণ্টায়। আর এখন সেটা হয়েছে উল্টো। সময় লাগছে সাত ঘণ্টা। যানজটে আটকে থেকে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যায় কুমিল্লা থেকে রওনা করে রাত আড়াইটায় ঢাকায় পৌঁছেছি। যানজটে আটকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
লরি চালক জামাল উদ্দিন জানান, ‘তাদের ওজন স্কেলে সমস্যা আছে। একটিতে ৪৫টন ওজন হলে অন্যটাতে আবার ৪০টন দেখা যায়। এজন্য আমাদের হয়রানিতে পড়তে হয়। বিভিন্ন সারিতে গিয়ে দাঁড়াতে গিয়ে যানজট লেগে যায়।’
টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস লি. এর নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জিয়াউল আহসান বলেন, ৪৪ টন ওয়েটের অনুমতি দেওয়ায় ওভার ওয়েটের বেশি গাড়ি এখন টোল প্লাজায় খুব বেশি আসে না। ছুটির দিনে কিছু চাপ থাকে। মেঘনা-গোমতী সেতু দুই লেনের হওয়ায় মাঝে মধ্যে কিছু জট লাগে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন চালকদের ভোগান্তি রোধে আমরা তৎপর রয়েছি। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘মহাসড়কে সোনারগাঁওয়ের অংশে দুই লেনের সংস্কার কাজ চলছে। এতে সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। সকালে কুমিল্লার অংশে ৫-৬ কিলোমিটার এবং মেঘনার ওই পাশে কিছু যানজট ছিল। এখন যানজট কমে এসেছে। যানজট নিরসনে পুলিশ চেষ্টা করছে। এ ছাড়া ব্রিজগুলো দুই লেন হওয়ায় যানজট লেগে যাচ্ছে। বিশেষ করে সকালে ও সন্ধ্যায় মেঘনা-গোমতী ব্রিজে দুটি গাড়ি বিকল হয়ে যায়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।