রেজাউল করিম মজুমদার
দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলে পরিচিত প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অবদানের কথা বলতেই হয়। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা। রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে ২০২৪ সালে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে ছিলো বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশে সাড়ে ২৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বিশ্ব ব্যাংকের মতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। যেমন ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও এ অর্থ ব্যয় হয়। করোনাকালীন বাংলাদেশকে সংকটমুক্ত রাখতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা ছিলো উল্লেখযোগ্য।
এজেন্সি ও যাত্রী সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের প্রথম বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন থেকেই হঠাৎ করে বিমানের ভাড়া ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে রেমিটেন্স যোদ্ধারা। এজেন্সিদের সাথে যাত্রীদের সবকিছু কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী অতিরিক্ত বিমান ভাড়া নিয়ে পড়তে হয়েছে দুশ্চিন্তায়। বিদেশ যাওয়ার জন্য সবকিছু কমপ্লিট থাকার পরেও টিকেট পাচ্ছে না যাত্রীরা, বিভিন্নভাবে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুরানো হচ্ছে যাত্রীদের, বাড়তি রেটে কাটছে না টিকেট।
বেশিরভাগ যাত্রীদের জন্মগ্রহণ ক্ষুদ্র পরিবারে, পরিবারের চিন্তা করে স্বপ্ন পূরণের আশায় বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে কষ্ট করে ঋণ নিয়ে সবকিছু কমপ্লিট করে। শেষ মুহূর্তে ভর্তি হচ্ছে বিমান টিকেটের ঝামেলায়। অনেকে আবার সবকিছু এজেন্সির মাধ্যমে করলেও বিমান টিকেট ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে যেকোনো সময় চলে যেতে পারে। অনেকে আবার এ টু জেড এজেন্সির মাধ্যমে কমপ্লিট কন্টাক করে যেতে হয়, বর্তমানে সে ক্ষেত্রে পড়তে হয় ভোগান্তির মধ্যে, এজেন্সিদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়ায়, সময় মতো সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে বুঝে পাওয়ার পরেও পাচ্ছে না বিমান টিকেট।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়া থেকে বিভিন্ন দেশে যেতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে বিমান ভাড়া হয়ে যায়। আমরা জানি প্রতিদিন বা প্রতি মাসে বিমানের ভাড়া কয়েক হাজার টাকা আপডাউন করে। তবে এবারের বড় সিন্ডিকেটের কারণে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিমান ভাড়া বর্তমানে ৯০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে স্পেশাল ৪ গুণ বেড়ে ২ লাখ প্লাস হয়েছে।
বিভিন্ন এজেন্সির এজেন্ট এর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদেশমুখী সরকারি বেসরকারি যাত্রীবাহী বিমান গুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাই আমাদের এজেন্টের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে যাত্রীদের ঠিক টাইম মোতাবেক অনুযায়ী বিদেশ পাঠানো অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিমানের ভাড়া অতিরিক্ত জানতে পেরে অনেক যাত্রী যেতে চায় না। টিকেটের দাম কমবে বলে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ভিসার মেয়াদ পুড়িয়ে আসলে, কষ্ট করে হলেও তাদের কান্না নিয়ে যেতে হয় প্রবাসে।
বিমানের যাত্রী সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। প্রবাসীরা বিভিন্ন সময় ফেসবুক এবং গ্রুপে বিমান ভাড়া নিয়ে অসন্তুষ্ট স্ট্যাটাস দিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানববন্ধন করছে, বিমান ভাড়া কমানোর জন্য, তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার নজরদারি না থাকায় অতিরিক্ত বিমান ভাড়া কমছে না এবং রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অতিরিক্ত ভোগান্তির দিক হয়ে যাচ্ছে। প্রবাসীদের চিন্তা করে অতিরিক্ত বিমান ভাড়া না কমানো পর্যন্ত রেমিটেন্স পাঠানো নিষিদ্ধ ঘোষণায় প্রবাসী সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের কথা চিন্তা করে বিমান কর্তৃপক্ষ ও সরকার আলোচনায় এসে বিমান ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।