রোহিঙ্গাদের কারণে দেড়শ’ কোটি টাকার বনজ সম্পদের ক্ষতি
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য এরইমধ্যে ১৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়েছে বলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। শরণার্থীদের কারণে কক্সবাজারের পাহাড়, জলাশয়, সমুদ্র সৈকতসহ পরিবেশের অন্যান্য খাতেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতির এই হিসাব দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে সংসদীয় কমিটি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা। বৈঠক শেষে সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, মানবিক কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণও যাচ্ছে। কিন্তু তাদের জ¦ালানির কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রাকৃতিক বন থেকে তারা জ¦ালানি সংগ্রহ করছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। টেকনাফ রুটের গাছগুলো উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত শুধু বনের ক্ষতি দেড়শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পরিবেশের ক্ষতির হিসাব অনেক বেশি। রোহিঙ্গাদের কারণে আগামীতে ‘ভয়াবহ’ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে মন্তব্য তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। কক্সবাজার অঞ্চলে পর্যটকদের যাওয়ার পরিবেশ নেই। পাহাড়-জলাশয় নষ্ট হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে। বনের পাশাপাশি পরিবেশের অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপন করে আগামি বৈঠকে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে সোয়া পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা চার লাখের মতো রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। বনের ক্ষতি কমাতে রোহিঙ্গাদের জ¦ালানি সাশ্রয়ী চুলা সরবরাহের সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। প্রয়োজনে তাদের জন্য বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কমিটির সদস্য টিপু সুলতান বলেন, এর মাধ্যমে বনের ক্ষতি ৫০ শতাংশ কমে আসবে। রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার পর যেসব এলাকা ফাঁকা হচ্ছে, সেখানে নতুন করে বনায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সেন্টমার্টিন এলাকার পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আগামী ৬ থেকে ১৭ নভেম্বর জার্মানিতে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। এ পর্যন্ত জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাপ্তি এবং ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রত্যাশা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটির কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নবী নেওয়াজ, গোলাম রাব্বানী, ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, টিপু সুলতান ও ইয়াসিন আলী অংশ নেন।