লোহাগাড়ায় এক লম্পট পিতার বিরুদ্ধে নিজের ঔরসজাত মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ করেছে মেয়ে নিজেই। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের ফকির পাড়া বর্তমানে শাহপীর পাড়ার আব্দুল মাবুদেও বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টার দিকে লোহাগাড়ায় কর্মরত একদল সাংবাদিক ঘটনার সত্যতা জানতে ভিকটিমের সাথে দেখা করতে যান। সে সময় ভিকটিম নিজে সাংবাদিকদের জানান, গত রমজানের ঈদের পর থেকে তার পিতা মাবুদ জোরপূর্বক তাকে ১০/১১ বার ধর্ষণ করেছেন। বিষয়টি তিনি তার দাদা-দাদিকে জানালেও তারা তা বিশ্বাস করতে চাননি।
ভিকটিম আরো জানিয়েছে, তার মায়ের সাথে পিতা মাবুদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তিন বছর আগে। এরপর আরো একটি বিয়ে করে মাবুদ। ২য় স্ত্রী বেশিরভাগ সময় বাপের বাড়িতে থাকায় বাড়িতে শুধু পিতা আর ২ সন্তান থাকতো। মাঝরাতে মাদকাসক্ত পিতা বাড়িতে ফিরে মেয়ের সাথে অনেক দুর্ব্যবহার করতেন।
মেয়েটি জানায়, একদিন সকাল ১১টার দিকে মেয়ে বাড়ির উঠোনে বসেছিল। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ছুরি দেখিয়ে হুমকি দেয় পিতা মাবুদ। কেউ জানলে ছুরি দিয়ে মেয়েকে খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। কয়েক দিন পরপর মেয়ে ধর্ষণ করতে থাকলে ঘটনাটি দাদা-দাদিকে জানায়। দাদা-দাদি কোনো ব্যবস্থা না নিলে মেয়েটি ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে নানাবাড়ি চলে যায়। বর্তমানে ভিকটিম নানাবাড়িতে রয়েছে। সেখানেই কথা হয় সাংবাদিকদের সাথে। ভিকটিমের বক্তব্যের অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে সাংবাদিকদের কাছে।
ভিকটিমের মামা বলেন, ‘আমার বোনের সাথে মাবুদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর গ্রাম্য সালিশি বৈঠকের রায় অনুযায়ী সন্তানেরা বাবার কাছে থাকে। আমার বোনকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেই। স্বাভাবিকভাবেই ওই পরিবারের সাথে আমাদের তেমন যোগাযোগ নেই। তবে মাঝেমাঝে ভাগিনা-ভাগিনীরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। তবে দিনে দিনেই চলে যেত। মূলত ভাগিনীর মুখে এ ঘটনা শুনে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জহির উদ্দিনের সাথে কথা বলেছি। তিনি এসে ভিকটিমের সাথে কথা বলেছেন এবং ধর্ষণের ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে আমরা আইনের দ্বারস্থ হবার জন্য পারিবারিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমি মেয়েটির সাথে কথা বলেছি। ঘটনা শুনে আমি নিজেও হতবিহবল হয়েছি। সভ্যতার এ যুগে ১৩ বছর বয়সী কন্যা তার পিতার হাতে ধর্ষিত হবে এটা অকল্পনীয় ব্যাপার। আমি ঘটনার তদন্তপূর্বক দৃষ্টানমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
তবে তিনি আরো বলেন, ‘অভিযুক্ত মাবুদ আমার কাছে এক লোকের মাধ্যমে খবর পাঠিয়ে দাবি করেছে, সে নির্দোষ। এটা তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।’
অভিযুক্ত পিতা আব্দুল মাবুদ পেশায় সিএনজি চালক বলে জানা গেছে। তিনি নিজেকে যুবলীগকর্মী বলে দাবি করেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাবুদের আইডির কাভার ফটোতে দেখা যায়, যুবলীগের সভামঞ্চে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি এবং প্রোফাইল পিকচারের জায়গায় আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সাথে একটি ছবি।
এ ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জহির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে কারো কপালে তো লেখা থাকে না, কার স্বভাবচরিত্র কিরকম। কতজনই তো এমপি মহোদয় ও আমাদের সাথে ছবি তোলে। তবে যুবলীগের কোনো কমিটিতে তার নাম নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।’
পিতার হাতে ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে ধর্ষিত হবার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চারিদিকে ছি ছি রব উঠে। এমন জঘন্য ঘটনায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছে।
লোহাগাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম বলেন, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি, তবে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’