এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের অব্যাহত ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ
করেছে। গ্রামের পর গ্রাম বিলিন হলেও ভাঙ্গনরোধে কর্তৃপক্ষের কোন কার্যকারিতা নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আগড়ঘাটা, মালথ, হাবিবনগর, পাররামনাথপুর, দরগাহমহল, মামুদকাটি গ্রাম ভাঙ্গনের শিকার। ইতোমধ্যে হাবিবনগর, পাররামনাথপুর নদের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। স্থানীয় রহিম শেখ ও মেহের আলী মোড়ল জানায়, প্রায় ২ শতাধিক পরিবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। নদের গর্ভে বিলিন হয়েছে মসজিদ, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কবরস্থান ও দরগাহ। সম্প্রতিকালের অব্যাহত ভাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, অধ্যক্ষ মাওঃ সাইফুল ইসলামের বাড়ী ঘর ও সম্পদ-সম্পত্তি নদের গর্ভে চলে গেছে। আগড়ঘাটা বাজারে সিংহভাগ নদের গর্ভে বিলিন হওয়ায় বাজারটির অস্থিত্ব হুমকির মুখে। পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার। ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আবারো সড়কের অবস্থান পরিবর্তন করা লাগবে বলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ সালামউল্লাহ জানান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কওসার জোয়াদ্দার বলেন, নদের ভাঙ্গনরোধে খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করলেও আজও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে পাইকগাছা-খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এস.ও মোঃ ফরিদ উদ্দীন জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হওয়ায় পাইকগাছা উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কোন কিছু করার নেই। তবুও বিষয়টি ভয়াবহ হওয়ায় তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
বিজ্ঞানী পিসি রায়ের জীবন ও আদর্শ তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে – এমপি বাবু
এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
পাইকগাছা-কয়রার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু বলেছেন, নির্বাচনী এলাকার মাটি অনেক উর্বর ও সমৃদ্ধ। এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন অসংখ্য গুণীব্যক্তি। যাদের মধ্যে বিজ্ঞানী পিসি রায় ছিলেন অন্যতম। তিনি বলেন, বিজ্ঞানী পিসি রায় অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে শিল্পপতি, রসায়নবিদ, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ ও সমবায় আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন। এমপি বাবু বলেন, যে জাতি জ্ঞানীর মূল্যায়ন করে না, সে জাতি কখনো উন্নত হতে পারে না। বিজ্ঞানী পিসি রায় অসম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিরকুমার এ বিজ্ঞানী জীবনের অর্জিত সকল সম্পত্তি মানবকল্যাণে দান করে গেছেন। এ জন্য তিনি দেড়’শ বছর পরও অমর হয়ে রয়েছেন। গুণী এ বিজ্ঞানী শুধু পাইকগাছা নয়, গোটা দেশের গর্ব। তার জীবন ও আদর্শ ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিজ্ঞানীর জীবন আদর্শ সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে হবে। এ জন্য তিনি তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞানীর জীবন সম্পর্কিত বই বেশি বেশি পড়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা আজকে যে চিন্তা করেন, বিশ্ব তা একদিন পরে করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় বিশ্বাসী বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ দেশের সকল গুণীব্যক্তিদের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন। অন্যান্য গুণীব্যক্তিদের ন্যায় বিজ্ঞানী পিসি রায়েরও স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করা হবে। স্থানীয় তরুণ এ সংসদ সদস্য বলেন, আমি মানুষের সেবা ও এলাকার উন্নয়ন করার জন্য এমপি হয়েছি। সরকারিভাবে যে বরাদ্দ পাইবো তার সবটুকুই এলাকা ও এলাকার মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে। সরকারি একটি পয়সাও আমার সন্তান ও পরিবার পাইবে না। সবকিছুই করা হবে নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য। তিনি শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী পিসি রায়ের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিজ্ঞানীর জন্মস্থান পাইকগাছার রাড়–লীতে আয়োজিত জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তারা বিজ্ঞানীর নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বসতবাড়ীকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা, বিজ্ঞানীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, পাঠ্যপুস্তকে বিজ্ঞানীর জীবনী সম্পর্কিত অধ্যায় অন্তর্ভূক্ত, জাদুঘর ও সংগ্রহশালা স্থাপন সহ বিভিন্ন দাবী করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) মোঃ আছাদুজ্জামান আসাদ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপিকা ঢালী। প্রভাষক ময়নুল ইসলামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, অধ্যক্ষ মিহির বরণ মন্ডল, গোপাল চন্দ্র ঘোষ, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুনছুর আলী বিশ্বাস, আবুল কালাম আজাদ, প্রধান শিক্ষক গৌতম মন্ডল, দিপংকর কুমার দত্ত, আওয়ামী লীগনেতা আনোয়ার ইকবাল মন্টু, আরশাদ আলী বিশ্বাস, ডাঃ শংকর দেবনাথ, আব্দুল হাকিম গোলদার, আনন্দ মোহন বিশ্বাস, পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল আজিজ, যুবলীগনেতা এমএম আজিজুল হাকিম, উত্তম দাশ, শিক্ষার্থী প্রান্ত দাশ, লাবিবা হাসনাত ও মনিরা ফারজানা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিবৃন্দ বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান। আলোচনা সভা শেষে রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পাইকগাছা পৌরসভায় ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে বরফ; হুমকির মুখে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট
এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
পাইকগাছা পৌরসভার পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে বরফ তৈরী অব্যাহত রাখায় চাঁদখালীর আইচ ফ্যাক্টরীর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আইচ ফ্যাক্টরীটি স্থানান্তরসহ ভূ-গর্ভস্থতে পানি উত্তোলন বন্ধে আইচ ফ্যাক্টরীর মালিককে পৌরসভার পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পৌর ও আইচ ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করেছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে, ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাশেই আইচ ফ্যাক্টরী হওয়ায় এবং ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে বরফ তৈরী করায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পানিতে প্রতিনিয়ত লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে আইচ ফ্যাক্টরীর মালিক আরিফ জানিয়েছেন, চিংড়ি সমৃদ্ধ এলাকায় মৎস্য ও চিংড়ীর গুণগত মান বজায় রাখার জন্য বরফের কোন বিকল্প নাই।সূত্র মতে, ১৯৯৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হলেও পৌরবাসীর সুপেয় পানির কোন সু-ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৩ সালে উন্নয়ন সংস্থা নবলোক ও ওয়াটার এইডের সহযোগিতায় পৌরসভার উদ্যোগে বাস্তবায়িত হয় পাইপ লাইন পানি সরবরাহ প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সরল দীঘিরপাড়ে স্থাপন করা হয় ট্যাংক ও প্রকল্পের মূল কার্যক্রম। এ প্রকল্পের আওতায় ৫শ সংযোগের মাধ্যমে বর্তমানে পৌরসভার ১ হাজার ৬৮৬টি পরিবার নিরাপদ পানির সুবিধা পেয়ে আসছে। এছাড়া পৌর অভ্যন্তরে বিভিন্ন অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের যাবতীয় পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে। পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, যেহেতু পৌর এলাকায় ছোট ছোট পকেট লেয়ারে মিষ্টিপানি সঞ্চিত রয়েছে। তাই পানি উত্তোলনের পাশাপাশি যথাযথ রিচার্জ না হওয়ার কারণে এই লিয়ারে পানির সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে পানির প্লান্টের পাশের চাঁদখালী আইচ ফ্যাক্টরী প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার ভূ-গর্ভস্থ মিষ্টিপানি উত্তোলন করে বরফ তৈরী করছে। ফলে পৌরসভার পানি সরবরাহ প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে। প্লান্টের পানিতে প্রতিনিয়ত মাত্রারিক্ত লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রতিদিনের পাইপ লাইনের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষে বরফ কলের ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করা জরুরী। এ ব্যাপারে পৌরসভার মাসিক সভায় বরফ ফ্যাক্টরীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক বরফ ফ্যাক্টরীর লাইসেন্স বন্ধ রাখা সহ ফ্যাক্টরীর মালিককে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইচ ফ্যাক্টরীর মালিক আরিফ জানান, ফ্যাক্টরীটি পানির প্লান্টের অনেক আগেই তৈরী হয়েছে। এ ছাড়া অত্র এলাকা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মন চিংড়ি ও মৎস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এর থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পায়। উৎপাদিত হিমায়িত পণ্য ও মৎস্যের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য বরফ উৎপাদন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/০৩ আগস্ট ২০১৯/ইকবাল