-
- ধর্ম, সারাদেশে
- মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠায় হজ্বের ভূমিকা
- আপডেট সময় August, 2, 2019, 6:38 pm
- 269 বার পড়া হয়েছে
আবু তালহা তুফায়েল :

কালের চাকা ঘুরে আবারো আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে প্রভু প্রেমের স্মৃতি বিজড়িত অবিস্মরণীয় মাস “জিলহজ্ব”। এই জিলহজ্ব মাসেই বিশ্বের সমগ্র প্রান্তের উম্মাতে মুহাম্মদী একত্রিত হন পবিত্র মক্কায়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা আদায় করে থাকেন মহা পবিত্র হজ্ব। এ পবিত্র মাসেই আল্লাহ পাকের হাবীব রাসূলে কারীম সা. দিয়েছিলেন বিদায় হজ্বের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ।প্রিয় পাঠক! পবিত্র কাবার চত্বর, পবিত্র মক্কা নগরীর পথঘাট, অলিগলি এখন তালবিয়ার সুললিত ধ্বনিতে আলোড়িত মুখরিত,”লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা হামদা ওয়ান নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক”। অযুতকণ্ঠের সম্মিলিত উচ্চারণে, অপূর্ব তালবিয়ার ভাবগাম্ভীর গুঞ্জরণে হারাম শরীফের চারদিক এখন ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত, বিপুলভাবে স্পন্দিত। চলছে অবিরাম পবিত্র বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, হচ্ছে অনবরত সাফা-মারওয়ার সায়ী। আত্মনিবেদন, আত্মসমর্পণ, মহান আল্লাহর ইচ্ছার সিন্ধুতে আপনাকে বিলীন করে দেয়ার সে এক অপূর্ব দৃশ্য, দিলকাশ মানযার! প্রাণপ্রিয় পাঠক বন্ধু! দেখুন; হজ্বের মধ্যে মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার সে কী অপূর্ব নজীর, চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত। কারো কোনো গর্ব নেই, অহংকার নেই, উলঙ্গ মস্তকে একপ্রস্ত সেলাই বিহীন সাফেদ কাপড় পরিধান করে আর একপ্রস্ত গায়ে দিয়ে, একই বেশে একই কালিমা উচ্চারণ করে একই কাবাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে উম্মাতে মুহাম্মদীর ঐসব আল্লাহভক্ত, খোদাপাগল পূন্যার্থীরা। শুধু তাই নয়, আবারো দেখুন; গভীরভাবে লক্ষ করুন; ঐক্যের, একতার সে কী সুমধুর দৃশ্য! সাদাকালোর ভেদাভেদ নেই, আরবে আজমে ব্যবধান নেই, প্রাচ্য পাশ্চাত্যের ফরক নেই। আহ ঐক্যের সে কী অনবদ্য, অনুপম, হৃদয় জুড়ানো, মন মাতানো চিত্র!বর্ণ, ভাষা, গোত্র, আঞ্চলিকতার সব দেয়াল এখানে টুটে গেছে, বৈষম্যের সমস্ত প্রাচীর এখানে ধ্বংস হয়ে গেছে। এক আল্লাহর বান্দা, এক আদমের আঃ সন্তান, একই নবীর সাঃ উম্মত, এক কুরআনের অনুসারী, একই চন্দ্র সূর্যের স্নিগ্ধ ও গনগনে আলো উপভোগকারী, একই আসমানের নীচের ও জমিনের উপরের বাসিন্দারা আজ এ পবিত্র হজ্বের বদৌলতে আল্লাহ পাকের হারামে এসে একাকার হয়ে গেছে।মহামিলনের, মহা ঐক্যের, মহা সহমর্মিতার, মহা সৌভ্রাতৃত্বের সে এক অভাবনীয়, অকল্পনীয় অবস্থা! যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না।হজ্বের প্রকৃত আদর্শে আদর্শবান পাঠনবৃন্দ! দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য এই যে, আজ আমরা বিশ্বের সর্বত্র জালিম কুফরি শক্তির হাতে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, অপদস্থ, নিপীড়িত? কিন্তু কী এর কারণ? অথচ এমনটিতো কাম্য ছিলনা। কারণ আমাদের রয়েছে ১৫০ কোটি সুদক্ষ জনশক্তির ৩০০ কোটি হাত, আমাদের আছে প্রায় ৬০টি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আছে মুসলিম বিশ্বের পেট্রো ডলার ছাড়াও অফুরন্ত খনিজ সম্পদ, সর্বোপরি আমাদের আছে চমৎকার ভৌগলিক অবস্থান।-কিন্তু এত কিছুর পরও কেন আজ আমাদের এ করুণ দশা? কেন আজ আমরা সবার উপহাসের পাত্র? কেন নিন্দিত নিগৃহীত?আমার মতে এর মূল কারণ হল আজ আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই, একতা নেই, গায়েব হয়ে গেছে সহানুভূতি, অদৃশ্য হয়ে গেছে মমত্ববোধ।কথাগুলো তিক্ত হলেও এটাই বাস্তব সত্য। অথচ হজ্বের শিক্ষা ছিলো “তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে আকঁড়ে ধর এবং তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা”। (আল-ইমরান ১০৩) হজ্বের মূল তাৎপর্য তো ছিলো “নিশ্চয়ই সমস্ত মুমিন ভাই ভাই”। (হুজুরাত ১০) হজ্বের নসীহত তো ছিল “সব মুসলমান এক দেহের ন্যায়” এর অনুপম মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে, সকল খোদাদ্রোহী, কুফরী, তাগুতীবাদী ও বাতেল শক্তিসমূহের মুকাবেলায় সীসাঢালা প্রাচীর সৃষ্টি করা। হজ্বের প্রকৃত উদ্দেশ্য তো ছিল জাতি, গোত্র, বংশ, বর্ণ মর্যাদা পায়ে দলে, এক আল্লাহর বান্দা ও এক রাসূলের সাঃ উম্মাত হিসাবে ইসলামী ঐক্যের ঝাণ্ডাকে সমুন্নত রাখা। পাঠকবৃন্দ! সুতরাং আসুন; আমরা হজ্বের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষা লাভ করে, মূল চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে, সমস্ত বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলি, একটি মাত্র মুসলিম দেশ, একজন আমীরুল মুমিনীনের তত্ত্বাবধানে, একই পতাকাতলে একত্রিত হওয়ার শপথ গ্রহণ করি। তবেই হবে আমার এ আলোচনা স্বার্থক ও সফল।লেখক: আবু তালহা তুফায়েল (শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক)
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/০২ আগস্ট ২০১৯/ইকবাল
এ জাতীয় আরো খবর