January 10, 2025, 2:11 pm

সংবাদ শিরোনাম
জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর হাজার মামুষের ভালবাসায় চির বিদায় গাজী মারুফ মধুপুরে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত সাঘাটায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ, ঘটনা শুনে বাবার মৃত্যু বেনাপোল দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে নতুন শর্তপণ্য বারো ধরনের আমদানিতে পরীক্ষণ করবে আর আই এম মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি নেতা গাজী মারুফ মৃত্যু, বিএনপির মহাসচিব ও জেলা বিএনপির শোক,জানাযার নামাজ বুধবার সিলেট মেতেছে বিপিএল উন্মাদনায় ঘরেও জয়ের দেখা পায়নি সিলেট স্টাইকার্সের হেলস ঝড়ে জয়ে নিয়ে মাঠ ছাড়লো রংপুর

সরকার যা চাইছে তাই করছে নির্বাচন কমিশন: মওদুদ

সরকার যা চাইছে তাই করছে নির্বাচন কমিশন: মওদুদ

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ দিয়ে আচরণবিধির সংশোধনের নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে ‘দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্র’ বলেছেন মওদুদ আহমদ। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটা তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন; সরকার যা চাইছে তাই করছে। এখন তারা নির্বাচনী আচরণবিধি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। যেটা করছে এটা দুরভিসন্ধিমূলক। এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ এই আচরণবিধি পরিবর্তন করা। কারণ তারা (ক্ষমতাসীনরা) ভবিষ্যতে সাধারণ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে থেকে নিজের প্রচারণা যাতে করতে পারেন উইথ অল দ্যা প্রটোকলস, তার সমস্ত ক্ষমতা ও তার সমস্ত প্রভাব দিয়ে। সেটাকে মাথায় রেখে আজকে লেজুড় সংস্থা নির্বাচন কমিশন এই আচরণবিধি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। মওদুদের প্রশ্ন, এরপরও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা বাংলাদেশের মাটিতে করা সম্ভব হবে কি না। খুলনা সিটির মতো গাজীপুরে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, খুলনায় জনগণের নির্বাচন হয় নাই, পুলিশ-র‌্যাব নির্বাচন করেছে। সেখানে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হয় নাই। এখন তারা (ক্ষমতাসীন) খুলনা স্টাইলে গাজীপুরে নির্বাচন করতে চায়। খুলনা স্টাইলে গাজীপুরে হলে আমরাও দেখব, চেষ্টা করবো এটা প্রতিহত করার জন্য। এটা আমরা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করব গাজীপুরে যাতে খুলনা স্টাইলে নির্বাচন করতে না পারে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। খালেদার অন্যতম আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, আমি স্বীকার করি যে, একমাত্র আইন-আদালত করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়। তার একমাত্র পথ হলো রাজপথ। কোনো আন্দোলন ছাড়া জনগণের কোনো দাবি আদায় করা সম্ভবপর হয় নাই। যে পথে দাবি আদায় করা যাবে সেই পথ আমাদের বেঁছে নিতে হবে। রমজান মাসের পরে কঠোর কর্মসূচির পথ আমাদের সেই পথ বেঁছে নিতে হবে। মওদুদ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেছেন। আমি আশা করি, তিনি খালি হাতে ফিরবেন না। তিস্তা পানি বণ্টনের স্বাক্ষরিত চুক্তি হাতে নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। সরকার ব্যর্থ হয়ে দেশে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করছেন বলে অভিযোগ করেন মওদুদ। তিনি বলেন, আজকে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। যাদের হত্যা করা হচ্ছে ওরা কারা? যাকে মারছে সে মাদক ব্যবসায়ী কী ব্যবসায়ী না আপনি কি করে জানেন। কজনকে আপনি চিনেন। খবরের কাগজে দেখি এক হাজার দুই হাজার ইয়াবা পাওয়া গেছে তার কাছ থেকে মৃত্যুর পরে দেখা গেল। এরা তো বাহক, এরা তো মালিক না। এরা তো নিয়ন্ত্রণ করে না। এরা অন্যের জন্য ব্যবসা করে সেটা বিক্রি করে ওই বসকে দেন। ওই বসরা কারা? এই সরকারের মদদপুষ্ঠ ব্যক্তিরা হলো এই মাদক ব্যবসার মালিক। আমি বলব, বিনা বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। মাদক ব্যবসা বন্ধ করুন। আমরা চাই, মাদক ব্যবসা একেবারে উচ্ছেদ হোক। মাদক চোরাই পথে আমদানি বন্ধ হোক। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও হুমায়ুন কবীর ব্যাপারীর সঞ্চালনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা আবেদ রাজা ও আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদী নাগরিক সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অভিযোগ করে বলেন, সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছেতিনি বলেন, ৫৮ জন মানুষ মারা গেছে ৮ মে থেকে ২৫ মের মধ্যে গত ১৭ দিনে। মানুষের কি জীবনের কোনো মূল্য নেই? বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সভায় মওদুদ আহমেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকার এতোদিন নিশ্চুপ ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাদের কাছে তালিকা আছে। তাহলে এই অভিযান আগে থেকে চালিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি কেন? কারণ হলো এই মাদক ব্যবসায় তাদের নেতারা জড়িত। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা এখান থেকে আয় করেছে। বিএনপিও মাদক নির্মূল চায় জানিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরাও চাই মাদক নির্মূল করা হোক। কিন্তু তার মানে এই নয় বিনাবিচারে কাউকে হত্যা করা হবে। এর দায়দায়িত্ব সরকারের, আমাদের এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে এরা তো মালিক না, এরা তো বাহক। তারা বিক্রি করে মালিককেই দেয়। সেই মালিক কারা? তারা এই সরকারের মদদপুষ্ট। এভাবে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। মাদক ব্যবসা উচ্ছেদ হোক। কিন্তু মানুষ মারা চাই না। আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক এ আইনমন্ত্রী বলেন, খুলনায় জনগণের নির্বাচন হয়নি, হয়েছে পুলিশি নির্বাচন। খুলনা প্রায় ১০০ কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টরা দাঁড়াতে পারেনি। এখন তারা খুলনা স্টাইলে গাজীপুরে নির্বাচন করতে চায়। তারা যদি সেই চেষ্টা করে এবার আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সেটা প্রতিহত করার চেষ্টা করব। আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তাদের বাধা দিব। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, এরা সরকারের একটি তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন। সরকার যা চাইবে তারা তাই করবে। আচরণবিধি পরিবর্তন করছে। এখন সংসদ সদস্য প্রচার চালাতে পারবেন। সংসদ সদস্য মানে তো আওয়ামী লীগের, এরা যেন প্রচারে চালাতে পারে। এটির দূরভিসন্ধিমূলক লক্ষ্য আছে, তারা আগামি নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি করেছে। তারা সংসদ রেখে আগামি নির্বাচন করতে চায় বলেই এই নিয়ম রেখেছে। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, সর্বোচ্চ আদালত জামিন দেওয়ার পর কী আর কোনো কথা থাকে? যদি তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা থাকেও সেটাও দুই-একদিনেই জামিন হয়ে যায়। কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারকরা সরকার যা চাইবে তাই করবে। নির্বাচন কমিশনও তাই করে। খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, একদিন বেশিও যদি খালেদা জিয়া কারাগারে থাকেন তাহলে তার জনপ্রিয়তা দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। আইন আদালত ও শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া জনগণের কোনো দাবি কোনোদিন আদায় করা যায়নি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র উপায়ও রাজপথ। রমজান মাসের পরে আমাদেরকে কঠোর কর্মসূচির কথা চিন্তা করতে হবে। আর সেভাবেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন গণতন্ত্রের আন্দোলন। এটি অব্যাহত থাকবে। আমরা বর্তমান অবস্থার অবসান চাই। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে সম্পূর্ণভাবে নৈরাজ্য নিরাজ করছে না। দেশের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফর প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরবেন না। আমরা আশা করি, তিনি তিস্তার পানি চুক্তি বাস্তবায়ন করেই ফিরবেন। আর না হলে আমরা বলব তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। দুপুরের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর