সোমবার (৩০ মে) বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস ও ডলার কেনাবেচা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে এ চিত্র দেখা যায়।
বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জের কর্তা ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৭ টাকা ১০ পয়সায়। এক্সচেঞ্জগুলো ডলার কিনছে ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একরেট বেঁধে দেয়ার পরেও কমেনি ডলারের দাম।
দাম কমা প্রসঙ্গে মানি এক্সচেঞ্জগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দর বেঁধে দিলেও খোলাবাজারে দাম কমেনি। আর বেশি কমবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ করোনার পর সব দেশ তাদের বর্ডার খুলে দিয়েছে। এখন বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। অনেকে শিক্ষা চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন, সামনে হজে যাবেন। এখন প্রচুর নগদ ডলারের প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তই দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
এর আগে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ (এবিবি) এর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৯ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল।
বেঁধে দেয়া একরেট অনুযায়ী, ৮৯ টাকায় ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডলার বিক্রি করলেও খুচরা পর্যায়ে ডলারের দাম এর কোনো প্রভাব পড়েনি। মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক সাধারণ মানুষের কাছে চড়া দামেই ডলার বিক্রি করছে।
সোমবার (৩০ মে) ব্যাংকগুলোর ডলার লেনদেন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পূবালী ব্যাংক খুচরা প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৯৫ টাকা ৫০ পয়সা, আর কিনছে ৯৪ টাকা ৫০ পয়সা। সিটি ব্যাংক নগদ খুচরায় প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৯৬ টাকা, আর কিনছে ৯৪ টাকায়। সিটি ব্যাংক বিসি সেলিং বা আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেট ৮৯ টাকা ১৫ পয়সায়। আইএফআইসি ব্যাংকও আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেটে। তবে খুচরায় প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৯৭ টাকা, আর তারা কিনছে ৯৫ টাকা ৫০ পয়সায়। ইউসিবি ব্যাংক খুচরায় প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৯৭ টাকা, আর তারা কিনছে ৯৪ টাকায়। তাদের বিসি সেলিং রেট ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা।
ব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, খুচরা ডলারের দাম বেশি কারণ বিদেশ যেতে অনেকে ডলার নিয়ে যাচ্ছে। হজ করতেও নগদ ডলার সঙ্গে নিয়ে যাবে। এসব কারণে চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি। তবে খুচরা বাজারেও ডলার দাম কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
উল্লেখ্য, দেশে ব্যাপক হারে আমদানির চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিন্তু তারপরও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।