অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবার শিয়া মুসলিমদের তাজিয়া মিছিলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোসেনি দালান ইমামবাড়ায় এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, আশুরা উপলক্ষে মোহাররমের মিছিলে সকল প্রকার ধাতব বস্তু বহন, জিঞ্জির, দা-ছুরি-তলোয়ার, ঢোল-লাঠিখেলা এবং আগুন খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা মিছিলে অংশ নেবেন, তারা মিছিলের শুরুর স্থানে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির পর অংশ নেবেন। পথের মাঝখান থেকে কেউ মিছিলে যোগ দিতে পারবেন না। ২০১৫ সালের আশুরায় তাজিয়া মিছিলে প্রস্তুতির সময় হোসেনি দালানে হামলার ঘটনা থেকেই এ বছর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে আছাদুজ্জামান বলেন, তাজিয়া মিছিলসহ মোহাররমের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। হোসনি দালান, বিবিকা রওজাসহ রাজধানীর বিভিন্ন ইমাম বাড়ায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল শুরু হয়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ধানমন্ডি লেক এলাকায়ও সিসি ক্যামেরা রাখা হয়েছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। শোভাযাত্রায় ঢাল, দা, বল্লম ব্যবহার ও কোনো ধরনের পটকা ফুটানো যাবে না মন্তব্য করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান আশুরা উপলক্ষে ইমামবাড়া থেকে এবারও তাজিয়া মিছিল বের হবে। এই তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তাজিয়া মিছিলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হোসেনী দালানের প্রতিটি গেটে থাকবে আর্চওয়ের ব্যবস্থা। ইমামবাড়ায় প্রবেশ করতে হলে আর্চওয়ের মধ্য দিয়েই তল্লাশির মধ্য দিয়ে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। প্রত্যেকটি ইমামবাড়া সিসিটিভির আওতায় থাকবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, নিরাপত্তা প্রত্যেকটি ইমামবাড়া সুইপিং করা হবে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), ডিএমপির ডগ স্কোয়াড ও র্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। আছাদুজামান মিয়া বলেন, মিছিলের বিভিন্ন রুটে ব্যারিকেড ব্যবস্থাপনা, পিকেট ব্যবস্থাপনা থাকবে। এ ছাড়া নির্ধারিত পোশাক ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। মিছিলের আগে-পিছে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আর কারবালায় থাকবে ডুবুরি, ফায়ার সার্ভিস। এবার শারদীয় দুর্গাপূজার বিসর্জন ও আশুরার তাজিরা মিছিল একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে। সে কারণে শোভাযাত্রা ও আশুরা মিছিলের অনুষ্ঠান উভয় সম্প্রদায়ের আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয় করা হয়ছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। আর মিছিলটি যেন সময়মতো শুরু হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সেজন্য আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কাঁচি, ছুরি তলোয়ার ব্যবহার সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন,পাইক নামে একটি শ্রেণি রয়েছে যারা তাজিরা মিছিলে মাতম করে। কোনো কোনো পাইক দা, কাঁচি, ছুরি তলোয়ার, বাজি, পটকা নিয়ে মাতম করে। সে সব কর্মকা- এবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ দা, কাঁচি, তলোয়ার নিয়ে মিছিলে যেতে পারবে না।
একই সঙ্গে মিছিলে অংশ নেওয়ার সময়ে শোভাযাত্রায় কোনো ধরনের ধাতব বস্তু পরিধান করা যাবে না। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হোসেনি দালানে বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর গত ৩১ মে অভিযোগ গঠন করা হলেও এখনও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। মামলায় অভিযুক্ত জেএমবির ১৩ সদস্যের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযানের সময় তিন জঙ্গি ক্রসফায়ারে মারা যান। গ্রেফতারদের মধ্যে ওমর ফারুক ওরফে মানিক, শাহ জালাল, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ ও চাঁন মিয়া গত বছরের ১৫ মার্চ থেকে ২৬ মে’র মধ্যে বিভিন্ন সময় জামিন পান। বাকি ছয় আসামি কারাগারে আছে। আসামিদের তিনজন ওই হামলায় দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
হোসেনি দালানে হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ওই মামলার কিছু আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিছু আসামি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে।