সরকার বিচার বিভাগকে ‘অকার্যকর’ করে দিয়েছে: খসরু
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ছুটি শেষ হতে যাওয়ার পরও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদেশে রয়ে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ‘অকার্যকর’ করে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিচার বিভাগ আজকে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের আর বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা নাই। এটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছে বর্তমান সরকার। একজন প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেৃ কীভাবে বিতাড়িত হয়েছে, দেশের মানুষ সেটা পর্যবেক্ষণ করেছে, আমার বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নাই। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি হঠাৎই গত ৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি নেন। তার ছুটি নিয়ে অক্টোবরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর রাতে এস কে সিনহা অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন; সেখানে তার এক মেয়ে রয়েছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা ছুটির আবেদনে শারীরিক অসুস্থতার কথা লেখা থাকলেও যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে তা অস্বীকার করে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় বিব্রত হয়ে ছুটি নিয়ে সাময়িকভাবে দেশের বাইরে যাচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধান বিচারপতি। বিদেশ যাওয়ার পর বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের খবর গণমাধ্যমে আসে। গতকাল শুক্রবার ছুটির মেয়াদ শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত তার দেশের ফেরার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস স্মরণে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় বিচার বিভাগের এই টানাপোড়েনের পাশাপাশি নির্বাহী ও আইন বিভাগ সম্পর্কেও কথা বলেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু। তিনি বলেন, দেশের মোট তিনটি অঙ্গে মধ্যে কোনো অঙ্গ কাজ করছে না। নির্বাহী বিভাগকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণের মাধ্যমে ধবংস করে দেওয়া হয়েছে। দলীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যমে নির্বাহী বিভাগ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সংসদীয় যে প্রক্রিয়া… সংসদটি অনির্বাচিত সংসদ। এখানে সরকারি দল ও বিরোধী দল একাকার হয়ে গেছে, এখানে বিরোধী দল বলে আর কিছু নাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় কথিত বিরোধী দলের ভূমিকা সরকারের চেয়ে অনেক বেশি সরকারের পক্ষে। তারা তো আসলে বিরোধী দল নয়, গৃহপালিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এনিয়ে আগামীতে দেশে ‘বড় ধরনের বিপর্য্য়’ ঘটবে বলে আশঙ্কার বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের। আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। এর বাইরে আর কোনো পথ নেই। এখনো সময় আছে। আগামীতে যে নির্বাচনের দিকে আমরা যাচ্ছি, সেখানে যদি জনগণ নির্বিঘেœ নির্দ্বিধায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারি, সেখানে যদি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রতিফলন ফলাফলে না ঘটে, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে দেশ যাবে। আওয়ামী লীগকে সময় থাকতে সমঝোতা ও আলোচনার পথে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ এই পথ সকলের জন্য ভালো। এই পথের বাইরে আর কোনো পথ নাই। অন্য পথে যারা চলবে, সেই পথ এক জায়গায় গিয়ে শেষ হয়ে যাবে। তখন কিন্তু ফিরে আসার পথ থাকে না। ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ এবং খালেদা ইয়াসমীন বক্তব্য রাখেন।