December 26, 2024, 5:31 pm

সংবাদ শিরোনাম

শেখ হাসিনা যে বৈরী আচরণ করেছেন, তার জন্য আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি: খালেদা জিয়া

শেখ হাসিনা যে বৈরী আচরণ করেছেন, তার জন্য আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি: খালেদা জিয়া

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আমার ও শহীদ জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর শেখ হাসিনা যে বৈরী আচরণ করেছেন, তার জন্য আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি। প্রতিহিংসার আচরণ আমি করব না। আমি আহ্বান জানিয়েছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে সুন্দর একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলার। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে আমাদের কাছ থেকে আরো কিছু শিখতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনের মতো দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। আদালতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। এর খালেদা জিয়া আবারও স্থায়ী জামিনের জন্য আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন আদালত। পরে বিচারক ১৬ নভেম্বর এ মামলার পরবর্তী সময়ে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর আগে গত ২ নভেম্বর খালেদা জিয়া দুই মামলায় স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে দিয়ে মামলার শুনানির দিন গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছান। এরপরই খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্থায়ী জামিনের আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। পরে খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মামলার রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে, বিচারকগণ স্বাধীনভাবে বিবেকশাসিত হয়ে আইনসম্মতভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম কি না? আমাদের দেশের ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে বিচারের নামে অধিকার হরণের নমুনা দেখেছি। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকেও দুর্নীতির অভিযোগে কারাভোগ করতে হয়েছে। মরহুম মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, অলি আহাদের মতো জাতীয় নেতাদেরও কারাভোগ করতে হয়েছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে উপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কবিতা রচনা করায় রাষ্ট্রদ্রোহী সাব্যস্ত করে কারাদ- দেওয়া হয়। এ ছাড়া মাহত্মা গান্ধী, মাওলানা শওকত আলী, সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ ও জহরলাল নেহরুর মতো নেতাদেরকেও আদালতের রায়ে কারাভোগ করতে হয়। এ ছাড়া নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো মানুষদেরও বিচারিক সাজা দেওয়া হয়। তথাকথিতও সেইসব রায়ের পেছনে যুক্তি, অজুহাত ও আইন দেখানো হয়। হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও সক্রেটিসের মতো মহামানবদেরও বিচারের নামে সাজা দেওয়া হয়। এসব বিচারকে কি বিশ্ববাসী ন্যায়বিচার বলে মনে নিয়েছে? খালেদা জিয়া আরো বলেন, ইতিহাস এসব রায়ে কী দেখেছে? অপরাধী হিসেবে তাদেরকে সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু ইতিহাস তাদের দিয়েছে গৌরব, মহিমা। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয়, আবার কেউ নেয় না। যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, মানুষ তাদের সম্মানিত করে। আর যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের ঠাঁই হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। তারা মানুষের ধিক্কারে পরিণত হন। খালেদা জিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে আলোচ্য এ মামলাটি ইতিহাসের এক মূল্যবান উদাহরণ হবে। আমি আশা করি, এর জন্য আপনি নির্ভর করবেন সুবিবেচনা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহস ও সততার ওপর। তাহলে অনাগত দিন বলে দেবে আপনি সঠিক সিদ্বান্তটি নিতে পেরেছিলেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑখালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনÑমাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর