সিমেন্সের সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতা
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
পটুয়াখালীর পায়রায় ৩৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি।
আমদানি করা এলএনজিনির্ভর এই প্রকল্পই হবে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এ প্রকল্পের ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন আসবে ঋণ থেকে। বাকি ৪০০ মিলিয়ন ডলার থাকবে ইক্যুইটি হিসেবে।
বাংলাদেশে এটাই ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানান।
সিমেন্সের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুনীল মাথুর এবং নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম রোববার বিদ্যুৎ ভবনে এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
বিদ্যুত, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু অনুষ্ঠানে বলেন, “সরকারের লক্ষ্য কম মূল্যে গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দেওয়া। সে লক্ষ্য পূরণেই বিভিন্ন ধরনের জ¦ালানির বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করে যাচ্ছে সরকার।”
বর্তমানে পায়রায় চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার; যার ২৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পায়রায় কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গেই নতুন এ কেন্দ্রের জন্য ১০০ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে।
৩৬০০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১২০০ মেগাওয়াটের মোট তিনটি ইউনিট থাকবে। আমদানি করা এলএনজি এ কেন্দ্রে কীভাবে আনা হবে তা নিয়ে সমীক্ষা চলছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
জার্মানির প্রতিষ্ঠান সিমেন্স দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে ভৌত অবকাঠামোসহ স্বাস্থ্য, শিল্পখাতে কাজ করে আসছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে পায়রা ও এর আশপাশে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
সেখানে একটি বন্দরও করা হয়েছে; যেটাকে গভীর সমুদ্র বন্দর করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ ছাড়া পায়রার আশপাশে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলারও কাজ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভসহ) ১৫ হাজার ৮২১ মেগাওয়াট। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে নয় হাজার ২৫৪ মেগাওয়াটের ৮৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। তবে বর্তমানে সরকার বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দিকে নজর দিয়েছে। রূপপুরে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
এছাড়া মহেশখালীতে একাধিক কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাগেরহাটে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং দেশের অন্যান্য জায়গাতেও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
পিডিবির হিসাবে, ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ২৮ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১২ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৬টি কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। সাত হাজার ৩৭৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪১টি কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনাধীন রয়েছে নয় হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪টি প্রকল্প।
মহেশখালীতে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের আরও একটি আমদানি করা এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে সিমেন্সের সঙ্গে চুক্তি করা হবে বলে জানান বিপু।