রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম চালু করতে চায় ইসি
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার মধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম চালুর কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রতীকে ২১ ডিসেম্বর হতে যাওয়ার রংপুর সিটির ভোটে অংশ নিচ্ছে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিও। তবে বরাবরের মতো ইভিএমের বিরোধিতা রয়েছে দলটির। স্থানীয় নির্বাচনে ২০১০ সালে সীমিত পরিসরে ব্যবহার শুরু হলেও বুয়েটের তৈরি ওইসব ইভিএমের কারিগরি ক্রুটির ও রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে ২০১২ সালের পর আর কোনো নির্বাচনে তা ব্যবহার হয়নি। নির্বাচন কমিশন বলছে, এবার সীমিত পরিসরে মাত্র একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু পুরনো নাকি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় তৈরি নতুন ইভিএম ব্যবহার হবে তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি সংস্থাটি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, নিজেদের তৈরি নতুন ইভিএম ব্যবহার হবে। অন্যদিকে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলছেন, বুয়েটের বানানো সেই পুরনো ইভিএম ব্যবহার হবে। ইভিএমের যেগুলোয় ত্রুটি দেখা গিয়েছিল সেগুলো বাদ যাবে। যেখানে ভোট হবে সেই রংপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এ নিয়ে কোনো নির্দেশনাই পান নি। বর্তমান ইসির অধীনে দ্বিতীয় এই সিটি ভোটের তফসিল রোববার ঘোষণা করেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। এসময় রংপুর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে পরিকল্পনার বিষয়ে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, আমরা চেষ্টা করব ইভিএম ব্যবহারের। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করব। নতুন মেশিন ব্যবহার হবে। পুরনো ইভিএমের ত্রুটির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটা বিবেচনার রেখেই আমরা ইভিএম ব্যবহার করব। ভুল যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। নির্ভুল ভাবে ও গ্রহণযোগ্যভাবে যেন ব্যবহার করা হয়। আমরা ইভিএম ব্যবহারে ঝুঁকি নেব না। ভুল-ভ্রান্তির আশঙ্কা থাকলে আমরা ঝুঁকি নেব না। এ বছর নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটির ভোট করলেও তাতে ইভিএম আর ব্যবহার করতে পারে নি। সর্বশেষ ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন কমিশন রংপুরে ছোট পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ বছর পর আগে ‘ইভিএম অধ্যায়ের ইতি’ ঘটলেও কে এম নূরুল হুদার নতুন কমিশন স্থানীয়ভাবে ফের ইভিএম চালুর প্রক্রিয়া নিল। তবে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, একটি মাত্র কেন্দ্রে ইভিএম হলেও প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। নতুন ইভিএম হলেও ‘মহড়া’ করে পরীক্ষামূলক ব্যবহার আগে করা দরকার। এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণার পরও কেন্দ্র নির্দিষ্ট করা হয়নি। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি ওয়ার্ডে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়। পরে নায়ায়ণগঞ্জের কয়েকটি ওয়ার্ডে, নরসিংদী পৌরসভা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পুরো নির্বাচন ইভিএমে করা হয়। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন রাজশাহী ও ২০১২ সালে রংপুরে ছোট পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করে। বুয়েটের বানানো ওই ইভিএম কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে বুয়েট ও ইসির মধ্যে দ্বন্দ্বও দেখা যায়। ওই দ্বন্দ্বের পর ২০১৬ সালে ইসি নিজেদের উদ্যোগে ইভিএম বানানোয় হাত দেয়। এতে জালভোট ঠেকাতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সহায়তা নেওয়া হবে। নতুন এ পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে ভোটার পরিচিতি নিশ্চিত করা হবে। গত ১১ মে সিইসি কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির সামনে তা উপস্থাপনও করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও এ যন্ত্রটির পরীক্ষামূলক ব্যবহারও হয় নি। সিইসি তফসিলের সময় নতুন ইভিএম ব্যবহারের কথা বললেও তার আগে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, রংপুর নির্বাচনে ‘ভালো অবস্থায়’ থাকা পুরনো ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। অচল ইভিএমগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর রংপুর সিটির ভোটের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর সময় তিনি বলেন, এ সিটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে কোন কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে, সেটি তফসিল ঘোষণার সময় জানানো হবে বললেও তফসিলে তা আর জানানো হয়নি। এদিকে রংপুর সিটির ভোটে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান সেই নির্বাচনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, মাত্র ভোটের তফসিল দেওয়া হল। এখনও ইভিএম বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কোনো নির্দেশনাও পাই নি। শুধুমাত্র একটি কেন্দ্রে ব্যবহারের কথা থাকলে ‘স্বল্প সময়ে’ প্রচারণা ও ‘মক ভোটিং’ করে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষপাতি হলেও তার ঘোর বিরোধী বিএনপি। সর্বশেষ ইসির সংলাপেও ইভিএম নিয়ে দুই দলের অবস্থান বিপরীতমুখী। নিবন্ধিত ৪০ দলের অনেকে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছে। ইভিএমের ত্রুটি নিয়ে সমালোচনার মুখে রংপুরে ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে মত দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা এ নির্বাচনে অংশ নেব- এটা অনেকটাই নিশ্চিত। গ্রহণযোগ্য ভোটের পক্ষে আমরা; কিন্তু ইভিএমের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান। এ যন্ত্র এখনো মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি, এখনই তা যেন ব্যবহার না করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় নতুন ইসির কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের তফসিল দেয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশগ্রহণে সেটি ছিল বর্তমান ইসির অধীনে প্রথম নির্বাচন।