শিশুর জ্বর হলে যা করবেন
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
জ্বর একটা উপসর্গ, এটা নিজে কোনো রোগ নয়? উলেস্নখ্য যে, ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে ঘন ঘন জ্বর হয়? জ্বর হলো একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা শিশুকে সংক্রমণের বিরম্নদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে? তবে জ্বর যে কারণেই হোক জ্বরের চিকিৎসা করা প্রয়োজন? পাশাপাশি প্রয়োজন শিশুর সঠিক যত্ন? আপনার শিশুর জ্বর কমিয়ে স্বস্ত্মিকর অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নিচের ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করম্নন-
তাপমাত্রা পরিমাপ- সঠিক সময়ে তাপমাত্রা মাপুন শরীরের তাপমাত্রা সারাদিন ওঠা-নামা করে? তাপমাত্রা সাধারণভাবে শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার শুরম্নতে সবচেয়ে বেশি থাকে, আর সবচেয়ে কম থাকে সকাল বেলা? কিন্তু বিভিন্ন অসুখে জ্বরের ওঠা-নামা বিভিন্ন রকম? তাই জ্বরের এই ওঠা-নামা লক্ষ্য করে সঠিক সময়ে তাপমাত্রা মাপা খুবই জরম্নরি? ব্যায়াম করলে এবং গরম খাবার খেলে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটতে পারে? তাই বাচ্চা গরম দুধ বা পানীয় পান করে থাকলে তার ৩০ মিনিট পর তাপমাত্রা পরিমাপ করবেন?।
ঠিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রা মাপুন- শিশুর তাপমাত্রা সবচেয়ে ঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় পায়ুপথের থার্মোমিটারের (রেক্টাল থার্মোমিটার) সাহায্যে? এটা মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) চেয়ে ছোট এবং এর বাল্ক বেশি পুরম্ন? প্রথমে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে এটাকে পিচ্ছিল করে নেবেন, তারপর থার্মোমিটারটা ধীরে ধীরে পায়ুপথে ঢোকাবেন, লক্ষ্য রাখবেন দেড় ইঞ্চির বেশি যেন না ঢোকে? আর এটা আস্ত্মে করে কমপক্ষে তিন মিনিট ধরে রাখবেন? এটা করার সময় শিশুকে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে অথবা আপনার কোলের মধ্যে নিয়ে ডায়াপার পাল্টানোর পজিশনে এটা করতে পারেন? সহজে যাতে ঢোকে সেজন্য শিশুর পা দুটো উঁচু করে ধরতে পারেন? অথবা, আপনি শিশুকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে তারপর থার্মোমিটার ঢোকাতে পারেন?
বড় বাচ্চাদের মুখে অথবা বগলে মাপুন- যদি শিশুর বয়স চার বা পাঁচ বছর হয়, তা হলে মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) সাহায্যে তার মুখে তাপমাত্রা মাপতে পারেন? এ ক্ষেত্রে বাচ্চার জিভের নিচে ওরাল থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে? ডিজিটাল থার্মোমিটারগুলোতে দ্রম্নত ও ঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপা যায় এবং এগুলো কাচপারদ থার্মোমিটারের চেয়ে কিছুটা নিরাপদও? কিন্তু এগুলো খুব দামি? এ ছাড়া শিশুর তাপমাত্রা বগলের নিচেও মাপা যায়? এ ক্ষেত্রে বাচ্চার বগলের নিচে থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে।
পরিমাপ যাচাই করম্নন- ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রাকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা হয়? যদি আপনার শিশুর তাপমাত্রা পায়ুপথে ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, বগলে ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, অথবা মুখে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয় তা হলে বুঝবেন আপনার শিশুর জ্বর হয়েছে?
জ্বর কমানো
শিশুর যে কোন অসুখে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন? শিশুর জ্বর কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ান।
স্পঞ্জ বাথ করান
শিশুকে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্পঞ্জ বাথ করাবেন? পানি শরীর থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যাবার সময় শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে যার ফলে জ্বর কমে যায়? কখনও বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না কারণ এতে শিশুর কাঁপুনি ওঠে? কাঁপুনি প্রকৃতপক্ষে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে যার ফলে স্পঞ্জ বাথের পুরো উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
শিশুকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাওয়ান
জ্বর হলে শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রম্নত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, ফলে তার শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল ক্ষয় হয়? যদি তার ডায়রিয়া থাকে তা হলে আরও বেশি তরল ক্ষয় হয়? সুতরাং নিশ্চিত করবেন আপনার শিশু যেন এসময়ে তরল পান করে? শিশুকে ঠাণ্ডা তরল পান করাবেন, গরম নয়, আর তাকে একবারে অনেক পান না করিয়ে, অল্প করে ঘন ঘন দেবেন।
এ সময়ে শিশুর খাবারে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে পারেন, শিশুকে সুপ, জাউ ও হালুয়া খাওয়াবেন? যেসব শিশু বুকের দুধ খায়, তাদের নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াবেন, এতে শরীরে তরলের অভাব পূরণ হবে? যদি শিশুর জ্বরের সাথে ২৪ ঘণ্টার বেশি ডায়রিয়া থাকে তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন।
শিশুকে হালকা পোশাক পরান
শিশুকে লেপ, কাঁথা, তোশক ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রম্নত বেড়ে যাবে, এর ফলে জ্বরের অবনতি ঘটবে? তাই আপনার শিশুকে হালকা পোশাক পরাবেন, এবং ঘুমানোর সময় একটা পাতলা কম্বল বা চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে দেবেন? শিশুকে পছন্দমতো খেতে দিন
জ্বর হলে শিশুরা খেতে চায় না? যদি শিশু জ্বরের সময় খেতে না চায়, তাকে খাবার জন্য বেশি জোরাজুরি করবেন না? যদি আপনার শিশু নির্দিষ্ট কোনো খাবার খেতে চায়, তাকে সেই খাবার খেতে দেবেন।
শিশুকে ঘরে রাখুন
শিশুর যতদিন জ্বর থাকে, তখন তাকে বাইরে বেড়াতে না দিয়ে ঘরে রাখা সবচেয়ে ভালো? শিশুর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবার ২৪ ঘণ্টা পর তাকে স্কুলে যেতে দিতে পারেন? তবে অনেক ক্ষেত্রে জ্বর চলে যাবার পরও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়।
হ
জ্বর থেকে শিশুর খিঁচুনি হলে কী করবেন
* দেরি না করে শিশুকে হাসপাতাল বা নিকটবর্তী শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন? বাসায় রেখে অযথা সময় নষ্ট করলে শিশুর সমূহ ক্ষতি হতে পারে এমনকি শিশুর মৃত্যুও হতে পারে? শিশুর মাথা একদিকে কাত করে রাখবেন।
* শিশুর মুখের লালা মুছে দেবেন।
* শিশুর জিভে যেন কামড় না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
* জ্বরের কোনো ডুস বা সাপোজিটরি থাকলে তা দেবেন।
* জ্বর বেশি হলে পানি দিয়ে স্পঞ্জিং করবেন? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে খিঁচুনি কমানোর ওষুধ দেওয়ার জন্য? এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হয়? কেননা বাসায় যতেœর অভাবে বা অসতর্কতার কারণে আবার খিঁচুনি হতে পারে? আর বারবার খিঁচুনি হলে শিশুদের মস্ত্মিষ্কের ক্ষতি হয়? কাজেই প্রথম ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত
অনেকে বাসায় কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক, জুতো মারা ইত্যাদি করে থাকে, যা ঠিক নয়? অনেকে মনে করেন শিশুকে ভূতে ধরেছে বা জিনে আছর করেছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
পরীক্ষা
শিশুর জ্বরের কারণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে? প্রথম অবস্থায় রক্তের এবং প্র¯্রাব পরীক্ষা করা? বারবার খিঁচুনি হলে পিঠের মেরম্নদ- অংশের পানি নিয়ে পরীক্ষা (এলপি করে সিএসএফ অ্যানালাইসিস করা, মেনিনজাইটিস হয়েছে কি না জানার জন্য) করতে হবে? এ ছাড়া এপিলেপসি বা মৃগীরোগ কি না তা জানার জন্য ইইজি করা।
পরামর্শ
জ্বর থেকে শিশুর একবার খিঁচুনি হলে, এ ধরনের শিশুর পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত্ম খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা থাকে? তাই শিশুকে নিয়ে যেখানেই যাবেন সঙ্গে প্যারাসিটামল ও ডায়াজিপাম সিরাপ বা বড়ি সঙ্গে রাখবেন।
মনে রাখবেন, আপনার অবহেলার কারণে আপনার সন্ত্মানের মস্ত্মিষ্কে গুরম্নতর ক্ষতি হতে পারে? ঘন ঘন খিঁচুনি হলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধীও হতে পারে।