নিবন্ধনের আশায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়ছে রোহিঙ্গারা
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
অন্তত দেড় যুগ আগে এদেশে এসে বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গারা এবার ত্রাণ এবং নিবন্ধনের বুক ভরা আশা নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছেন। তারা এখন টেকনাফের কুতুপালংয়ে গড়ে উঠা অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্পে পাড়ি জমাচ্ছেন। জেলার ৮টি উপজেলার বিভিন্নস্থানে বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দীর্ঘ সময় থেকে বসবাস করা রোহিঙ্গারা বর্তমানে দলে দলে চলে যাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের অস্থায়ী ক্যাম্পে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি স্বীকার করেছে। যেসব রোহিঙ্গা মাত্র কয়েকবছর আগেও বাংলাদেশে একটি বসতি গড়ে তোলার জন্য হাজার হাজার টাকা নির্দ্বিধায় দালালদের হাতে তুলে দিয়ে বিভিন্নস্থানে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছিল সেসব রোহিঙ্গারা এখন নিজেদের সব মালামাল বিক্রি করে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। গত ১৮ অক্টোবর সকালে চন্দনাইশের দোহাজারী শংখব্রিজ সংলগ্ন কলোনি থেকে দুটি পরিবার অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে চলে যায়। যাওয়ার পূর্বে মালামাল নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত রোহিঙ্গা গৃহবধূ আরজিনা খাতুন সাংবাদিকদের জানায়, অন্তত ১২ বছর আগে মিয়ানমার থেকে মা বাবার সাথে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে প্রথমে বসতি তৈরী করে টেকনাফে। এরপর রোহিঙ্গা যুবক আইয়ুবকে বিয়ে করে চলে আসে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা এলাকায়। বিভিন্ন এলাকায় বছর দুয়েক বসবাসের পর গত একবছর আগে বাসা ভাড়া নেয় একই উপজেলার কাটগড়ের শংখপাড়ে গড়ে উঠা একটি কলোনিতে। আরজিনা আরো জানায়, কয়েকদিন আগে ক্যাম্পে চলে গেছে তার স্বামী আইয়ুব। সেখানে পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে স্ত্রী পরিজনসহ আরো কয়েকটি পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। সে অনুসারেই আরজিনারা বাসা ছেড়ে দিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে। তার মতে, অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাসিক যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তাতে একটি পরিবার স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নিবন্ধন কার্ড পেলে ভবিষ্যতে মিয়ানমারে চলে যেতে সহজ হবে। অথবা সে কার্ডেই এদেশেই বসবাস করা যাবে নিশ্চিন্তে। এভাবে শুধু আরজিনা’র পরিবার নয় এখন টেকনাফে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে ত্রাণের কার্ড এবং নিবন্ধনের সুযোগের আশায় শত শত পরিবার দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়ছে টেকনাফের উদ্দেশ্যে। চন্দনাইশ দোহাজারীর একটি শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, তার দোকানে কাজ করার জন্য আবদুল্লাহ নামের এক ছেলেকে রেখেছিল। কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাড়ি পরিচয়ে চাকুরি নিলেও গত ১৫–১৬ দিন আগে হঠাৎ করে আবদুল্লাহ তার মা বাবার সাথে টেকনাফ চলে যায়। চন্দনাইশ উপজেলার সদ্য বিলুপ্ত দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ জানায়, হাতিয়ার খোলা, লালুটিয়া ও মাস্টারঘোনা এলাকায় বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গাদের শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যে টেকনাফে চলে গেছে মর্মে তার কাছে খবর আছে। উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম জানান, তার এলাকার সরকারি পাহাড়গুলোতে বসতি গড়ে তোলা দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার ইতোমধ্যে তাদের বসতি গুটিয়ে চলে গেছে এবং আরো শতাধিক পরিবার চলে যাওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে। হাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীরুল ইসলাম চৌধুরী তার ইউনিয়নে বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গারাও চলে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন চৌধুরী জানিয়েছে, তার ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা থেকে অন্তত অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার চলে গেছে। তিনি আরো জানায়, ত্রাণ এবং নিবন্ধনের সুযোগ পেতেই তারা টেকনাফে পাড়ি জমাচ্ছে। একইভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আরো অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গারা দলে দলে টেকনাফের কুতুপালংয়ের অস্থায়ী শিবিরগুলোতে চলে যাচ্ছে। এদিকে দোহাজারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ বিদ্যুৎ কুমার বড়–য়া রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই তাকে এ ব্যাপারে জানিয়েছেন। আগে থেকে বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়াটাকে শুভ লক্ষণ মনে করছি।