December 27, 2024, 2:08 am

সংবাদ শিরোনাম
মধুপুরে অবৈধভাবে মাটি কাঁটার অপরাধে ৬জনের জেল জরিমানা প্রবাসীকে হয়রানির অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীকে হয়রানির অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যাল্ডিং শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে নব নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ ঝিকরগাছা উপজেলায় যুব অধিকার পরিষদের কমিটি ঘোষণা শার্শার উলশী ইউনিয়ন ভিত্তিক ৬ষ্ঠ হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ১১ বছর পর দেশে ফিরলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির আইন সম্পাদক লিয়াকত সাজাভোগের শেষে ভারত থেকে দেশে ফিরলো ২৬ বাংলাদেশি পুরুষ -নারী বেনাপোল থেকে শুভ উদ্বোধন হলো রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের নবজাতককে পাওয়া গেল রাস্তার পাশে

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে সোহরাওয়ার্দীতে ৭ মার্চের জনসমুদ্রে শেখ হাসিনা

মোঃ ইকবাল হাসান সরকারঃ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং  তাঁর সংগ্রামী জীবনের অবদান মুছে ফেলার সব রকম চেষ্টা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে স্বীকৃতি পাওয়া তার প্রমাণ। গতকাল বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো জনসভা করল আওয়ামী লীগ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এতিমের টাকা চুরি করে, যারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। দেশকে আর ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে না পারে। যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তারা সতর্ক থাকবেন। এ জন্য দেশবাসীকে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক যেন যুব সমাজকে নষ্ট করতে না পারে। এ জন্য অভিভাবক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ধর্মীয় নেতাদের সজাগ থাকতে হবে। আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। এ জন্য দেশবাসীর সহায়তা প্রয়োজন।

 

৪৭ বছর আগে যে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দীতে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে শুনিয়েছিলেন ইতিহাসের অমর কবিতা, ঠিক সেই দিনটিতে ইতিহাসের সাক্ষী হতে রাজধানীর সব পথ এক হয়ে মিশে গিয়েছিল সেখানে। বেলা ১টার দিকেই পুরো সমাবেশ এলাকা পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। মঞ্চে তখন পরিবেশিত হচ্ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ উৎসবমুখর পরিবেশকে আরও সাজিয়ে তোলে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সুরের ব্যান্ড বাদ্য। ঢাকঢোলের বাদ্যের সুরের তালে নেতা-কর্মীদের নৃত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। আর ব্যানার, ফেস্টুনের সঙ্গে কয়েক হাজার কর্মীর লাল-সবুজের টি-শার্ট ও মাথায় সবুজ ক্যাপ পরে জনসভায় যোগদান অন্যরকম মাত্রা দেয়।

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভার একাংশ ছবিঃ প্রাইভেট ডিটেকটিভ

 

জনসভায় রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আশপাশের জেলা গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী থেকেও নেতা-কর্মীরা বাস, ট্রেন, ট্রাকযোগে ঢাকায় আসেন। পরে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে-গেয়ে জনসভাস্থলে যান তারা। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপক শোডাউন করতে দেখা গেছে। জনসভায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পরিবেশ এবং ভাষণের আবহ ফুটিয়ে তুলতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর একটি অস্থায়ী ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির পরনে সাদা পাঞ্জাবি আর তার ওপর কালো কোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান বেলা ৩টায়। কবি নির্মলেন্দু গুণ আবৃত্তি করেন ‘স্বাধীনতা শব্দটি কেমন করে আমাদের হলো।’

বেলা ৪টা ৪০ মিনিটে ভাষণ শুরু করেন শেখ হাসিনা। প্রায় ৪০ মিনিটের ভাষণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিবৃত্ত, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে জেলহত্যার ঘটনা, পরের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনার ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিল উন্নয়নের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান।   জনসভায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের, দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে। আমাদের লক্ষ্য জনগণের উন্নয়ন। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু এর আগে যারা সরকারে ছিল, সেই জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দেশ তো এত উন্নত হয়নি। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণ হবে। বাংলাদেশ যেন কারও কাছে ভিক্ষা করে না চলে, তার ব্যবস্থা করছি। বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ, তাঁর সংগ্রামী জীবনের অবদানকে মুছে ফেলার সব ধরনের চেষ্টা করেছে সব সরকারই। আমার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা জীবনবাজি রেখে এই ভাষণ প্রচার করেছে। ইতিহাসও যে প্রতিশোধ নেয়, আজ তা প্রমাণ হয়েছে। এ জন্য তাদের স্যালুট জানাই। তিনি বলেন, যে জাতির পিতার নামটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সংগ্রামের মধ্য থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছিল, এই ৭ মার্চের ভাষণ আজ ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, আড়াই হাজার বছরের যত ভাষণ, তার মধ্যে গবেষণা করে ব্রিটিশ সাংবাদিক লেখক জ্যাকব এপ্রিল গবেষণা করে ৪১টি ভাষণ বাছাই করেছিল, যার মধ্যে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ স্থান পেয়েছে। এই ভাষণে বাঙালি জাতির ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস, মুক্তির জন্য সংগ্রামের ইতিহাস, পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, অত্যাচার ও নির্যাতনের ইতিহাস একদিকে উঠে এসেছে, অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় করণীয় জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের কাজ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। ভবিষ্যতে যা করব, তাও মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। কৃষক-শ্রমিক-তাঁতী, কামার-কুমার সবার জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করছে। দলিত, হরিজন ও হিজড়াদেরও অনুদান দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। চাল উৎপাদনে চতুর্থ। এভাবে বাংলাদেশকে যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়, সে ব্যবস্থা করছি। ৪৯টি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করেছি। প্রবৃদ্ধি অর্জনে সারা বিশ্বের পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ, সেই সম্মান আমরা পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, জেনারেল জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন, তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারেননি। কারণ একটাই; তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করতেন না। উন্নয়নে বিশ্বাস করতেন না। তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে রাষ্ট্র চালাতে চাইতেন। তাদের নিজেদের উন্নতি হয়েছে।

নেতাদের বক্তৃতা : সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, একটি ছোট দেশকে বিশাল দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীন করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। সারা বিশ্বে আজ বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে গেছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করেনি, তারপরও সরকার টিকে আছে। একটি দেশের নির্বাচন হয়, সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, একটি ভাষণ এনে দিল স্বাধীনতা। বদলে দিল একটি জাতির ভাগ্য। নিরস্ত্র বাঙালিকে পরিণত করেছিল সশস্ত্র যোদ্ধায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে আবারও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কোনো ফর্মুলায় কাজ হবে না। আগামী নির্বাচন হবে পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের পরাজিত করার নির্বাচন। প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ এটি। বিশ্বের অনেক বড় বড় নেতা ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতো না। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন।

সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ মার্চ স্বাধীনতার বীজ বপন হয়েছিল। আজ এটি বিশ্বের সম্পদ। বাঙালির গৌরব। যারা স্বীকার করবে না, তারা স্বাধীনতার চেতনাকে অস্বীকার করে। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রত্যয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাব। সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াত নতুন ষড়যন্ত্রে নামতে পারে। ঐক্যবদ্ধভাবে এদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, এ ভাষণই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। এই স্থান থেকেই স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, এ কে এম রহমতুল্লাহ, আবুল হাসানাত, হারুনুর রশীদ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, মহিলা লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। মমতাজ, রথীন্দ্রনাথ রায়, শফি মণ্ডল, আলম দেওয়ান, তমালিকা চক্রবর্তী ও বর্ষা দেশাত্মবোধক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন।

ওবায়দুল কাদেরের দুঃখ প্রকাশ : আওয়ামী লীগের জনসভার শুরুতেই যানজটের জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের সহনশীল হওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অন্য জনসভাগুলো ছুটির দিনে শুক্রবার ও শনিবার করেছি। কিন্তু এ দিনটি সব বাঙালির সম্পদ।

গতকাল ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এ দিনের কর্মসূচি শুরু করে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভানেত্রী  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।

 

 

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৮মার্চ২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর