শীত আসা মানেই পিঠা- পুলি খাওয়ার দিন আশা। এমন কিছু ভাবনাই তো বাঙালির মানসপটে জায়গা করে নেয়। শীতল আমেজ নিয়ে আসা বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসেন পিঠা বিক্রেতারা। সেই সাথে হাঁস, মুরগী, লেয়ার, কোয়েল পাখির ডিম, পাপড়, রসুন ভাজা, পেয়াজু, চিংড়ী মাছের বড়াসহ নানা ধরণের মুখরোচক খাবার। অনেকে পেশা পরিবর্তন করে বসেছেন পিঠা সহ এসব বিক্রির দোকান নিয়ে।
কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার মোড়ে এবং গ্রামে ভ্রাম্যমাণ দোকানে মাটির চুলায় তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পিঠা। এরমধ্যে রয়েছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, তেল পিঠা, পাটি সাপটা, পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। পিঠা তৈরি করে সংসার চালান অনেকেই। একেক ধরনের পিটের দাম হয় একেক রকম। সাধারণত ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চালের গুঁড়া, নারিকেল কুরানো, খেজুর গুড়, লবণ, সামান্য পানি দিয়ে ভাপা পিঠা বানানো হয়। গোলাকার এ পিঠার জন্য ছোট ২টি বাটি, ২টুকরো পাতলা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ঢাকনা দেওয়া হাড়ির ফুটন্ত পানির ভাব (৩/৪ মিনিট) দিয়ে তৈরি করা হয় এসব পিঠা। চালের আটা পানিতে মিশিয়ে মাটির খোলায় তৈরি করা হয় চিতুই পিঠা। অতি সাধারণ এ পিঠাটি গুড় বা ঝাল মসলা দিয়ে খেতে খুবই মজা। আর এসব রসনায় অনেকেই ভিড় করেন দোকান গুলোতে। ক্রেতারা অনেকেই সেখানেই দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন। আবার অনেকেই প্যাকেটে করে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য এসব পিঠার স্বাদ নেওয়া কষ্টকর কিছু না।
এদিকে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ধুম পরে যায় হরেক রকমের পিঠা বানানোর। ভোর বা সন্ধ্যায় নারীরা চুলোর পাশে বসে দুধ-পুলি তেলপুয়া পিটা সহ বিভিন্ন পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসলে তাদের পিঠাপুলি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে। গ্রাম অ লে শীতের পিঠা তৈরি করতে যে উৎসবের সৃষ্টি হয় সে তুলনায় শহরের খুব কমই চোখে পড়ে পিঠাপুলির বাহার। এছাড়া শহরের পথে ঘাটে বা ফুটপাতে পিঠা কেনাবেচা হয় পুরো শীতকাল জুড়েই। পৌর শহরের পাটহাটি, থানা মোড়, পূর্ব বাজার, পেট্রোল পাম্প, পোস্ট অফিস মোড়, গুনাইগাছ মোড়, বাকরের হাট, বছির মার্কেট। উপজেলার হাতিয়া চৌমুহনী বাজার, পুরান অনন্তপুর, দুর্গাপুর বাজার, পাঁচপীর বাচজার, মিনা বাজার, ঠাকুরবাড়ি, যমুনা বাজার, থেতরাই বাজার, আদর্শ বাজার, বজরা বাজার, মন্ডলের হাট, মোল্লাহাট, পান্ডুল বাজার, খোঁচাবাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন ছোট-বড় হাটবাজারে অস্থায়ী পিঠের দোকান। শীত আসলেই এসব দোকান বসে, তারা বাড়তি রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
ভাপা পিঠা বিক্রেতা ভুট্টু মিয়া জানান, প্রতিদিন বিকেলে রাস্তার পাশে চুলে বসিয়ে গরম গরম ভাপা পিঠা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। ক্রেতাদের আগমন ঘটে অনেক, ফলে চাহিদানুযায়ী বানানো হয়ে থাকে।
পিঠা সহ মুখরোচক খাবার বিক্রেতা আলম মিয়ার জানান, বেচা-বিক্রি বেশ ভালোই। তাই অনেকেই শীতের মৌসুমে পিটা বিক্রিকে পেশা হিসেবে পেছে নিয়েছে। শীতের বিকেলের পর পরই ভাপা পিঠা সহ মুখরোচক খাবার বিক্রির দোকানগুলোতে স্বাদ নিতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সের শ্রেণী পেশার মানুষজন।
পিঠা খেতে আসা আবু বক্কর জানান নানা ব্যস্ততার কারণে বাসায় পিটা তৈরি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই শেষমেশ পিঠার দোকান থেকেই তিনি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য পিঠা কিনে নিয়ে যান। সাধারণত বিকেলের নাস্তা হিসেবে পিঠাই বেশ ভালো লাগে। কম বেশি প্রতিদিনই খেতে আসা হয়।