কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের রাবাইতারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। দুই স্কুলের যৌথ মাঠে ইজারার শর্ত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে নিয়মিত পশুর হাট পরিচালনা করছেন ইউনিয়নের খড়বাড়ী হাট ইজারাদার। এ নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্তে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করলেও স্কুল মাঠে পশুর হাট পরিচালনা বন্ধ করেননি ইজারাদার। প্রতি সপ্তাহেই স্কুল মাঠে চলছে জমজমাট পশুর হাট।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বড়ভিটা ইউনিয়নের খড়িবাড়ী হাটে গিয়ে দেখা যায় রাবাইতারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌথ মাঠে গরু ছাগলের জমজমাট হাট বসেছে। তবে ইজারাদার কৌশলে বিদ্যালয় ভবনের কাছে কাঠের দোকান বসিয়ে অদূরেই স্কুল মাঠেই পশুর হাট পরিচালনা করছেন। দুপুর থেকেই হাট জমে ওঠায় মাঠের কোনও অংশই ফাঁকা নেই। ফলে শিশুদের খেলার পরিবর্তে মাঠে চলে পশু বিক্রির ‘খেলা’। অথচ মাঠে পশুর হাট বসানোর অভিযোগ তদন্তে উপজেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে গত জুলাই মাসে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রায় একমাস ধরে তদন্ত কাজ করছে।
স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানো নিয়ে অভিযোগকারী স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক নুর ইসলাম বলেন,‘ স্কুল মাঠে নিয়মিত ও প্রকাশ্যে জমজমাট পশুরহাট চললেও তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার কাছে অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এবং রাবাইতারি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে স্কুল মাঠে পশুর হাট পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে শুধু ইজারার শর্ত নয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও খেলাধূলার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। আমি অভিযোগ করায় এখন তদন্তের নামে আমাকেই হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে, অযথা কালক্ষেপন করা হচ্ছে। আমিসহ স্কুলের সকল অভিভাবকের দাবি, মাঠ থেকে পশুর হাট সরানো হোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় দুটির কয়েকজন শিক্ষক জানান, ইজারাদার রেদওয়ান শেখ লিংকন রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাউর রহমান শেখের আপন ভাতিজা। প্রধান শিক্ষকের আপন জেঠাতো মূলত প্রধান শিক্ষকের মদতেই স্কুল মাঠে হাট বসানো হচ্ছে। এতে গরু ছাগলের মল-মূত্রের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। গোবর ফেলে দিলেও মুত্র মাটিতে শুষে নেওয়ায় দূর্গন্ধ থেকে যায়। এছাড়াও মাঠ নোংরা থাকায় ছেলে-মেয়েরা স্কুলে এসে খেলাধুলাও করতে পারে না।
জানতে চাইলে রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাউর রহমান শেখ ইজারাদার তার ভাতিজা স্বীকার করে বলেন, ‘ অনেক আগে থেকেই এই স্কুল মাঠে পশুর হাট বসে আসছে।’
আর রাবাইতারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়শা খাতুন ঝামেলায় পড়ার ভয়ে মন্তব্য করতেও রাজি নন। তিনি বলেন, ‘ আগেরও এমন অভিযোগ হয়েছিল কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। আমি কিছু বলে ঝামেলায় পড়তে চাই না। মাঠে পশুর হাটের কারণে সমস্যা হয় কিনা আপনারা সরেজমিন এসে দেখে যান।’
বিদ্যালয় মাঠে গরু ছাগলের হাট বসানোর বসানোর বিষয়ে ইজারাদার রেদওয়ান শেখ লিংকন জানান, করোনাকালে হাট বাজার সম্প্রসারিত করতে বলায় স্কুল মাঠে হাট নেওয়া হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ আমাদের সরিয়ে নিতে বললে আমরা নেবো।
স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানোর অভিযোগের তদন্তের দায়িত্বে থাকা ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি অভিযোগের তদন্ত করেছি। খুব শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
স্কুল মাঠে প্রকাশ্যে পশুর হাট চললেও অভিযোগকারীর কাছে প্রমাণ চাওয়া কতটা যৌক্তিক, এমন প্রশ্নে এই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘ ওই স্কুল মাঠে পশুর হাট বসে এটা সকলেই জানে। ইউএনওসহ উপজেলার সকলে বিষয়টি অবগত। তারপরও আমাকে যেহেতু তদন্ত করতে বলা হয়েছে আমি বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবো।’
এ বিষয়ে জানতে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাসকে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।