ডিটেকটিভ ডেস্কঃঃ
এক গোলে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ফাইনালের দূরত্ব ছিল মাত্র কয়েক মিনিটের। ৮৬ মিনিটের মাথায় পেনাল্টিতে গোল খেয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভাঙল বাংলাদশের। ১-১ ব্যবধানে ড্র করেও সমীকরণ অনুযায়ী সাফ থেকে ছিটকে যেতে হলো লাল-সবুজদের।
অন্যদিকে, প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে হিমালয়ের দেশ নেপাল।
এদিন, ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলে আধিপত্য দেখায় নেপাল। আক্রমণেও এগিয়ে ছিল নেপাল। তবে শুরুতে গোল করে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল বাংলাদেশ।
অবশ্য ম্যাচের শুরুতেই গোল খেয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের একজনকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পেয়ে যায় নেপাল। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিলে সেই যাত্রায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। এরপর সাত মিনিট না যেতে সেই ফ্রি কিকের সুবিধা কাজে লাগিয়ে গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ।
৯ মিনিটে সুমন রেজার গোলে লিড নেয় বাংলাদেশ। মাস্ট উইন ম্যাচে ৪-১-৪-১ ফরম্যাশনে দল সাজায় কোচ অস্কার ব্রুজন। একাদশে মতিন মিয়ার বদলে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন সুমন রেজা। সুযোগ কাজে লাগান দারুন এক গোলে। জামাল ভুইয়ার ফ্রিকিক থেকে হেড করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন এই স্ট্রাইকার। জাতীয় দলের জার্সিতে এটাই সুমন রেজার প্রথম গোল।
গোল খেয়ে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের সীমানায় বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল নেপালি আক্রমণভাগ। কিন্তু রক্ষণ ও গোলকিপার আনিসুর রহমানের দৃঢ়তায় গোল হয়নি। বাংলাদেশের আক্রমণও ছিল নেপালি সীমানায়। তবে প্রথমার্ধে গোলের সুযোগ নেপালই বেশি সৃষ্টি করেছে।
এরপর নিজেদের রক্ষণে নজর দিয়েছে বাংলাদেশ। বেশ কয়েকবার আক্রমণ করে নেপাল। তবে দুদফায় বাংলাদেশকে রক্ষা করেন তপু বর্মণ। এর মধ্যে ২৩তম মিনিটে ফের ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। তবে নেপালের অঞ্জন বিস্তার ফ্রি কিক অনেকটা লাফিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন আনিসুর রহমান জিকো। দুই মিনিট পর বক্সের ডান দিক দিয়ে অরক্ষিত ফরোয়ার্ড সাদউদ্দিন তাড়াহুড়ো করে শট নেন। বল বেরিয়ে যায় দূরের পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি নেপাল।
প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি আক্রমন চালায় বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া নেপাল, তাদের কয়েকটি আক্রমন প্রতিহত করেছেন গোলরক্ষক জিকো।
এক গোলে পিছিয়ে থাকা নেপাল বিরতির পর আক্রমণে ধার বাড়ায় নেপাল। সুযোগ তৈরি ফেলে ৫২ মিনিটেই। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটের কারণে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। দুই মিনিট বাদে বাংলাদেশও সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু নেপালের গোলরক্ষক বাংলাদেশকে গোল পেতে দেয়নি।
এরপর বাংলাদেশকে কয়েক দফায় রক্ষা করেন গোলরক্ষক জিকো। নেপালের বেশ কয়েকটি আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন তিনি। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে লাল কার্ড দেখে বসেন তিনি। মূলত উইঙ্গার রাকিব হোসেনের ভুলের খেসারত দিতে হয় জিকোকে। রাকিবের মিস পাস কভার করতে গিয়ে ডি বক্সের বাইরে দুর্ভাগ্যবশত বল তার হাতে লেগে যায়। ফলে লাল কার্ড দেখতে হয় তাকে।
বাংলাদেশ দলের সর্বনাশের শুরুটা হয় মূলত তখনই। গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো ৭৯ মিনিট লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন।
এরপর পরিবর্তিত গোলকিপার নিয়ে খেলা শুরু হলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। জিকো ফেরার কিছুক্ষণ পর ফের ভুল করে বসে বাংলাদেশ। বিপজ্জনক জায়গায় নেপালের এক ফুটবলারকে ফাউল করে বসেন ডিফেন্ডার সাদউদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ওই পেনাল্টিটি প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কিন্তু কিছুই করার ছিল না বাংলাদেশের। আর ওই এক পেনাল্টিতে সাফের ফাইনালের স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের।
পেনাল্টির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৮৮ মিনিটে গোল তুলে নিয়ে নেপালকে সমতায় ফেরান অঞ্জন বিস্টা। ম্যাচে ফেরে নেপাল। বাকি সময়ে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ১-১ গোলের ড্রয়ের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় জামাল ভূঁইয়াদের।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ অক্টোবর। সেদিন নেপালের প্রতিপক্ষ ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যকার জয়ী দল।
//ইয়াসিন//