সমাবেশে খালেদা জিয়া : নির্বাচনে ইভিএম নয়, চাই সেনাবাহিনী
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) হবে না, ইভিএম চলবে না, ইভিএম বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। শুধু মোতায়েন করলে হবে না। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্টেরিয়াল পাওয়ার দিয়ে টহল দিয়ে জনগণ যেন নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে সে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সেটাতেই তাদের (সরকার) ভয়।’
গতকাল রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। গত ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালন করে বিএনপি। এ উপলক্ষে ওই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের জন্য আমাদের দাবির কথা দিয়েছি। সেখানে বলেছি যদি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয়, তাহলে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে। আজ নির্বাচন কমিশনার কেন বলে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না, ইভিএম হবে। তার মানে সরকার যা বলছে তাই তাঁরা করতে চায়।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ সরকার এ দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। ধ্বংস করে দিয়েছে। এ সরকার ২০০৮ সালে কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। আজ ৭০ টাকা কেজি চাল খাচ্ছে কেন মানুষ।’ তিনি বলেন, ‘তরিতরকারি, সবজির দাম ৭০ টাকার নিচে নয়। পেঁয়াজ ১০০ টাকা পর্যন্ত চলে গেছে। এ দুরবস্থায় মানুষ কী করে জীবন যাপন করবে। প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে। কেন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত? জিনিসপত্রের দাম বাড়লে ট্রান্সপোর্ট খরচ বেড়ে যায়। একজন রিকশাওয়ালা ভাইকেও চাল ডাল তরি তরকারি কিনে খেতে হয়। স্বাভাবিক তার পক্ষে ভাড়া না বাড়ালে কোনো উপায় থাকে না। অন্য ট্রান্সপোর্টের একই অবস্থা। সেজন্য জনগণের জীবন আজ দুবির্ষহ হয়ে উঠেছে। তাঁরা কথা দিয়েছিল তাঁরা বিনামূল্যে সার দিবে। বিনামূল্যে সার তো দেয় না, আমাদের সময়ে যে মূল্য ছিল তারচেয়ে পাঁচগুণ বেশি দামে এখন সার কিনতে হচ্ছে কৃষককে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কৃষকও আজ মহাকষ্টে দিন যাপন করছে। ফসলের দাম তারা সরকারের কাছ থেকে ঠিকমতো পাচ্ছে না। সরকার আজ কৃষককে মারার ব্যবস্থা করেছে। সাধারণ নিরীহ মানুষকে মারার ব্যবস্থা করেছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তারপরও সারা দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করেছে। অথচ মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে টেন্ডার (দরপত্র) করা হয়নি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশে আসতে সরকার বাধা দিচ্ছে। বিএনপির সমাবেশে লোক আসতে বাধা দিয়ে সরকার ছোট মনের পরিচয় দিয়েছে।
নির্দলীয় সরকার না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচনবর্জন করে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ‘সহায়ক সরকারের’ দাবি তুলেছে তারা।
কিন্তু বিএনপির দাবি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, ভোটের সময় শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।
এই পরিস্থিতিতে দেড় বছর পর জনসভায় এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।
“হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের বলব, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলুন।
গত বছরের ১ মে শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতার পর গতকাল রোববারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করলেন খালেদা জিয়া।
এই সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে সরকার পরিকল্পিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
সমাবেশে জনসমাগমে পথে পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার নিন্দা জানান খালেদা। বেলা ২টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভা শুরুর এক ঘণ্টা পর
খালেদা জিয়া সমাবেশস্থলে পৌঁছান। এ সময় চার দিক থেকে তার নামে স্লোগান ওঠে। তিনি হাত উঁচিয়ে নেতা–কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও জাতীয় সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এই সমাবেশ ডাকা হলেও এতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্ব পায়।
মঞ্চের পেছনে লাগানো ব্যানারে লেখা ছিল– ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভা’।
জনসভার জন্য উদ্যানে ৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ করে বিএনপি। মঞ্চের চারপাশে বসানো হয়ে সিসি টিভি ক্যামেরা। মঞ্চের সামনে ৩০ ফুট জায়গায় বেষ্টনি দেওয়া হয়।
পুরো জনসভা সুশৃঙ্খল রাখতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছিল।
জনসভা ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশ–পাশের এলাকা সাজানো ছিল নানা রঙের ব্যানার–ফেস্টুনে। এসব ডিজিটাল ব্যানারে ছিল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল এই জনসভার পুরো কার্যক্রম সমন্বয় করেন। তাকে সহযোগিতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।
এই সমাবেশ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ২৩টি শর্ত দিয়েছিল বিএনপিকে।