তানভীর আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
রাশিয়া বিশ্বকাপের উম্মাাদনায় উদ্বেলিত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। গত ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া মহোৎসব-কে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফুটবল প্রেমীরা ফুটবল উম্মাদনায় ডুবে আছে।
বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন দেশে ফ্যান ক্লাব গড়ে উঠলেও মূলত আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের ফ্যান ক্লাবের সংখ্যা বেশী। এর পাশাপাশি জার্মানী-ফ্রান্স ও পর্তুগালের কিছু ফ্যান ক্লাব থাকলেও তা অত্যন্ত নগন্য।
মূলতঃ বিশ্বখ্যাত ফুটবল প্লেয়ার ম্যারাডোনা ও পেলে’র অসাধারণ ফুটবল শৈলীতে মুগ্ধ হয়ে সে আশির দশক থেকে এখনও পর্যন্ত চট্টগ্রামবাসী এই দুই দলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
চট্টগ্রামের বকশিরহাটের প্রবীণ ও স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জব্বার বলেন, “সে আশির দশক থেকে বিশ্বকাপ দেখছি টেলিভিশনে। তখন থেকেই মনের অজান্তে কেন জানি ব্রাজিল টিম ও পেলেকে ভালো লাগে। এই ভালো লাগা আজও বহমান। হয়ত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবে। গত বিশ্বকাপের ব্রাজিলের বিপর্যয়ের পর এবার ব্রাজিলের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন ষষ্ঠ বারের মত শিরোপা জিতবে ব্রাজিল এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশ্ব ফুটবলের এই মহোৎসবের আনন্দে শামিল হয়েছে চট্টগ্রামের সাবেক তারকা ফুটবলারও। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের সাবেক কৃতি খেলোয়াড় সুরজিত দাশ টিংকু বলেন “সেই ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনার সমর্থক”। আশা রাখি সকল বাধা অতিক্রম করে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতবে।
চট্টগ্রামের প্রবীণরা যেমন বিশ্বকাপ উম্মাদনায় ভাসছে তেমনি তরুণ ফুটবল প্রেমীরাতো সেই উম্মাদনায় রীতিমত আবেগের বহিঃপ্রকাশ নানাভাবে ব্যক্ত করছেন। চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন খলিফাপট্টি এলাকায় তরুণ আর্জেন্টিনার সমর্থকরা প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে পতাকা বানিয়ে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। খলিফাপট্টির বাসিন্দা রিদোয়ান আহমেদ বলেন, আমি আমার বাসার সাথে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগিয়েছি। এছাড়া আমাদের এলাকা আর্জেন্টিনার সমর্থকরা প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে পতাকা লাগিয়েছে।
বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে পাড়া মহল্লার এই উম্মাদনায় বাড়তি আকর্ষন হচ্ছে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় দল বেঁধে খেলা দেখা। নগরীর জামালখান, পাঠানটুলী, মাদারবাড়ী, আল ফালাহ গলি, পাথরঘাটা সহ অন্যান্য এলাকায় বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
বিশ্বকাপ নিয়ে নগরবাসী আনন্দে উদ্বেলিত হলেও অনেক ফুটবলপ্রেমী দেশের করুণ অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নগরীর সুন্নিয়া মাদাসা এলাকায় বসবাসরত রাকিব বলেন “আমরাও চাই বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে। কিন্তু ফুটবল ফেডারেশন অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত, সাংগঠনিক দুর্বলতা, দুরদৃষ্টি ও সুদুর প্রসারী পরিকল্পনার অভাবে বাংলাদেশে ফুটবল আজ মৃতপ্রায়।”
The Greatest Show on the earth খ্যাত বিশ্ব ক্রীড়া আসরে এই মহোৎসব শেষ হবে জুলায়ের ১৫ তারিখ। এই দীর্ঘ এক মাস চট্টগ্রামবাসী ফুটবল উম্মাদনায় ডুবে থাকলেও চট্টগ্রামবাসী মনের অন্তকোণে যে স্বপ্ন লালন করেন তা হল এই বিশ্ব সেরা ক্রীড়া আসরে তাদের প্রিয় বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করবে। সেই স্বপ্ন সার্থক করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তা বলার অবকাশ রাখে না। সেই দায়িত্ববোধ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্ব ফুটবল দরবারে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে এটাই এখন চট্টগ্রামবাসী সহ সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৫জুন ২০১৮/ইকবাল