January 3, 2025, 7:49 am

সংবাদ শিরোনাম
সেনাপ্রধান খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় হিলিতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় সমাজসেবা দিবস পালন কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা নেই দুদিন, বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা লামায় তিনদিন পর নিখোঁজ স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার চিলমারীতে কৃষক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত বামনায় নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে বিএনপি’র ৩১ দফার বিকল্প নেই -ব্যারিস্টার জামান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত নিম্নআয়ের মানুষ শিবচরে বিআরবি ক্যাবল বিক্রয় কেন্দ্রে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ; প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বনার্ঢ্য আয়োজনে নীলফামারীতে ছাত্রদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

দিনাজপুর রেলওয়ের অসাধু কর্মচারীদের দুর্নীতি ॥ সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব

মাসউদ রানা, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের কিছু অসাধু রেলওয়ে কর্মচারী-কর্মকর্তার যোগসাজসে ও দুর্নীতির কারণে সরকার প্রতি বছর হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তারা সরকারি রেলওয়ের স্লিপার, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বিক্রি করছে সবই। সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে ঘর বরাদ্দ থাকলেও সেখানে বসবাস করছে সাধারণ পাবলিক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ের বেশির ভাগ কর্মচারীরা রেলওয়ের কোয়াটারে বসবাস করে না। কিছু অসাধু রেলওয়ে কর্মচারী কর্মকর্তারা দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ভাড়া দিয়েছে ওই সমস্ত সরকারি কোয়ারটারগুলো। এছাড়াও রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। রেলওয়ে প্লাটফর্মের আশেপাশে গড়ে উঠেছে বাসাবাড়ী। যা ইতোমধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সুধি মহলের প্রশ্ন এই ঘরবাড়িগুলো কার? কারাই বা বসবাস করছেন?। ওভার ব্রীজ থেকে শুরু করে রেলওয়ের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০টির মতো অলিখিত বাড়ি। শুধু বাড়ি নয় এখানে প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও। কে দিয়েছে এই অবৈধ্য বিদ্যুৎ সংযোগ? দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন সুপারেন্টটিনটেন্ড (এস.এস) আব্দুল জব্বারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমি এ সব বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। আপনি আইওডাব্লিউর কাছে বিস্তারিত জানতে পারেন। এ সব আমার আওতায় পড়ে না। দিনাজপুর রেলওয়ের আইওডাব্লিউ মো. তারেকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজী নন।
যুগের পর যুগ একই জায়গায় চাকুরী করার সুবাদে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহারাজ্য। রেলওয়ে কোয়াটারে অবৈধভাবে সাধারণ মানুষকে ভাড়া প্রদান, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, চুক্তিভিত্তিক বেসরকারি ভাবে ট্রেন পরিচালনা ষ্টেশনের টয়লেট নিয়ে ব্যবসা, প্লাটফর্মে চায়ের স্টলগুলির নিয়মের কোন বালাই নেই-চলছে কালো বাজারে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রির মহাউৎসব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লাইন খালাসি শ্রী শিব প্রসাদ ৬ বছর আগে অবসর গ্রহণ করেছেন, তবুও সরকারি রেলওয়ে কোয়াটার জবর দখল করে রেখেছেন। নিয়ম না থাকলেও অনিয়ম করেই রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, দিনাজপুর শাখা সভাপতির পদ ধরে রেখেছেন শিব প্রসাদ। শ্রমনীতি অনুযায়ী সাংগঠনিক উক্ত পদে শুধুমাত্র কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা সিলেকশন বা ইলেকশন এর মাধ্যমে পদাধিকার পান। আনোয়ারুল ইসলাম মঞ্জু এস.এম গ্রেড-৪, যুগের পর যুগ ধরে দিনাজপুর রেল ষ্টেশনে রাজনৈতক ছত্রছায়ায় অবস্থান করে দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্যের হোতা সেজেছেন। শিব ও মঞ্জু গ্র“পের ভয়ে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখ খুলতে সাহস পান না। রেল শ্রমিকরা সহজেই বাসা অ্যালোটমেন্ট পান না। যদিও কোনোভাবে পেয়ে যান তাহলে কৌশলে তাদের বিতাড়িত করা হয়। কারণ বেশি ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে পাবলিকের নিকট টাকা উত্তোলন করা হয়। পাবলিককে রেলওয়ের বাসা ভাড়া দেয়ার কয়টি নমুনা স্বরূপ সরকারি কোয়াটার নম্বর ও নাম তুলে ধরা হলো: (১) টি-৬৪ ডি, দাদন ব্যবসায়ী বুড়ি ও মঞ্জু মাদক বিক্রেতা (দুই পরিবার) (২) ৫৭ এবিসি, মহরি ইসমাইল (৩) ৪৯ এবিডি, নিজাম কাপড় ব্যবসায়ী (৪) ৬০ ই ব্লক এবিসি, দাদন ও ভারতীয় কাপড় ব্যবসায়ী শহিদুল, মাদক ব্যবসায়ী আঞ্জু। দিনাজপুর রেলওয়ে কর্মকর্তা আই.ও.ডাব্লু মো. তারেক জানান, মোট কোয়াটার দিনাজপুর রংপুর খোলাহাটি, মিরবাগ ও বিরলসহ ৭১টি। তার মধ্যে ট্রাফিক কোয়াটার ৩৪টি, ইঞ্জিনিয়ারিং কোয়াটার ৩৭টি, কোয়াটারগুলিতে বেসরকারি লোকজনদের ভাড়া নিয়ে বসবাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে মূল বিদ্যুৎ মিটার সংরক্ষিত আছে। কিন্তু জ্বলছে হিটার, ঘুরছেনা মিটার! অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে বেশি বেশি বিদ্যুৎ খরচ হওয়ায় প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে ইলেকট্রিক ফোরম্যান রফিকুল ইসলাম, পার্বতীপুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি শিব-মঞ্জু (এস.এম) গ্র“পের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ১১ মার্চ ২০১৮ থেকে বেসরকারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাহাত ও রিয়ন এন্টারপ্রাইজ পরিচালনাকারী কাঞ্চন ও উত্তরবঙ্গ মেইল ট্রেন-এস. এম. গ্রেড-ফোর আনোয়ারুল ইসলাম মঞ্জু সরকারি চাকুরি করার পাশাপাশি বেসরকারি কাউন্টারের টিকিট বিক্রির দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি? এ ব্যাপারে ২২ মার্চ ২০১৮ ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি এই বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে দিনাজপুর রেলস্টেশনে। কিছুদিন আগে অলিখিতভাবে আন্তঃনগর ট্রেনের ৩টি কালোবাজারী টিকিটের টেন্ডার দেয়া হয়েছে। প্রথম টেন্ডার সরকারি কর্মচারী এস.এম. গ্র“প, দ্বিতীয় টেন্ডার মানিক-রতন, ষষ্টিতলা গ্র“প, তৃতীয় টেন্ডার পেয়েছেন ডাউয়া-আনিস গ্র“প।
ইতিপূর্বে টিকেট কালোবাজারী চক্রের নাম ও মোবাইল নম্বরসহ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যা স্থানীয় প্রশাসন আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি সম্পর্কে অবগত আছেন। সরকারি রাজস্ব বাঁচাতে অসাধু কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল ও রেল মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দিনাজপুরবাসী।

 

 

 

 

 

প্রাইভেট ডিচেকটিভ/১০এপ্রিল২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর