January 3, 2025, 2:31 am

সংবাদ শিরোনাম
সেনাপ্রধান খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় হিলিতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় সমাজসেবা দিবস পালন কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা নেই দুদিন, বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা লামায় তিনদিন পর নিখোঁজ স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার চিলমারীতে কৃষক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত বামনায় নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে বিএনপি’র ৩১ দফার বিকল্প নেই -ব্যারিস্টার জামান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত নিম্নআয়ের মানুষ শিবচরে বিআরবি ক্যাবল বিক্রয় কেন্দ্রে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ; প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বনার্ঢ্য আয়োজনে নীলফামারীতে ছাত্রদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

প্রভাবশালীদের পেটে! জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণ

নতুন ও ছোট উদ্যোক্তাদের কোনো কাজে আসছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ উদ্যোক্তাদের ব্যাংকগুলো সাফ জানিয়ে দিচ্ছে জামানতবিহীন কোনো ঋণ নেই অভিযোগ এখনো করপোরেট কালচার থেকে বের হতে পারেনি ব্যাংকগুলো জামানতবিহীন ঋণে ঝুঁকিতে ব্যাংক খাত

প্রাইভেট ডিটেকটিভ ডেস্কঃ

নাজিমউদ্দিন বাবু সিরাজগঞ্জের একজন নতুন উদ্যোক্তা। বড় টার্কি (এক ধরনের বৃহদাকৃতির পাখিবিশেষ) খামার গড়েছেন। এই খামার দেয়ার সময় ব্যাংকের জামানতবিহীন ঋণের কথা জেনেছেন তিনি। খামারের মূলধন জোগাতে এ ঋণের জন্য সিরাজগঞ্জের প্রায় সবকটি সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঘুরেছেন। কিন্তু বিধি বাম! শেষতক তাকে তার জমি, প্রশিক্ষণের সনদসহ সব কাগজপত্র জমা রেখে ঋণ নিতে হয়েছে। তার অভিযোগ, মূলজামানতবিহীন ঋণ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সুবিধা হয়েছে। তারা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নিয়ে যাচ্ছেন। আর নতুন ও ছোট উদ্যোক্তাদের কোনো কাজেই আসছে না এই উদ্যোগ। এ অভিযোগ শুধু নাজিমউদ্দিন বাবুর একার নয়। যায়যায়দিনের অনুসন্ধানে রাজধানী ঢাকা ও রাজধানীর বাইরের কমপক্ষে ২০টি ব্যাংকের গ্রাহক ও ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা যাদেও জন্য করা হয়েছে তারা এ ঋণের সিকি পরিমাণও পাচ্ছেন না। এসব ঋণ চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের পেটে। ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে জানানতবিহীন ঋণের কথা বলা হয়। সার্কুলারে নির্দেশ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতের (এমএসএমই) নতুন উদ্যোক্তারা জামানতবিহীন ঋণ পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা যাদের জন্য প্রযোজ্য তারা এ ঋণের ধারেকাছেও নেই। রবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ব্যাংকে প্রভাব খাটিয়ে এসব ঋণ নিয়ে যাচ্ছেন। জানানতবিহীন ঋণ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ‘কৃষকবাজার’ নামে অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায়ী রাজধানী মিরপুরের উদ্যোক্তা বদরম্নল আহসান। শুরম্নতে ছোট করে ব্যবসা শুরম্ন করেছিলেন। সময়ের ব্যবধানে বেশ সাড়াও পেয়েছেন এই অনলাইন শপে। ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর প্রয়োজনে তিনি ব্যাংকের কাছে জামানতবিহীন ঋণের জন্য যান। একই কপাল তারও। কোনো ব্যাংকই জামানতবিহীন ঋণ দিতে রাজি হয়নি।  তিনি জানান, তার পরিচিত কয়েকজন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী এই ঋণ নিয়ে সুবিধা ভোগ করছেন। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ঋণ চাইতে গেলে তাকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে জামানত ছাড়া ঋণ দেয়া যাবে না। শেষপর্যন্ত্ম আত্মীয় আর বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যবসার পরিসর বাড়িয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে (এমএসএমই) নতুন উদ্যোক্তা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকার একটি তহবিল রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক এ তহবিলের আওতায় নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রধান করে থাকে। বর্তমানে এ তহবিল থেকে নতুন উদ্যোক্তারা সহায়ক জামানত ছাড়াই ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত্ম ঋণসুবিধা নিতে পারেন।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত্ম বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ১৯ হাজার ২৬ কোটি টাকার জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে পুরম্নষ উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা আর নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ১ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।  পরিসংখ্যান অনুযায়ী যাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন তারা না পেলেও তহবিলের প্রায় অর্ধেক অংশই ছাড় করা হয়েছে। অথচ সাতক্ষীরার দেবহাটার নারী উদ্যোক্তা রম্নপালি বেগমও অনেক ঘোরাঘুরির পরও জামানতবিহীন ঋণ পাননি। প্রশ্ন হচ্ছে এত জামানতবিহীন ঋণ যাচ্ছে কোথায়?  রম্নপালি বেগম জানান, তার একটি গরম্নর খামার ও একটি মাছের ঘের আছে। আরও একটি পোল্ট্রি খামার দিতে চান তিনি। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ঋণ খুব জরম্নরি হয়ে পড়েছে তার। জামানতবিহীন ঋণের খবর পেয়ে ২৫ জানুয়ারি তার স্বামী লিটনসহ গিয়েছিলেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পারম্নলিয়া শাখায়। কিন্তু ওই শাখার ব্যবস্থাপক সরাসরি জানান, কৃষি ব্যাংক এ ধরনের কোনো ঋণ দেয় না। জামানতবিহীন ঋণ না নিয়েই ফিরে আসেন তারা। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে যায়যায়দিনের কাছে ঘটনা অস্বীকার করেন শাখা ব্যবস্থাপক দেবদাস সরকার। তিনি বলেন, তারা জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছেন। এই প্রকল্প ভালোভাবেই চলছে। আর রম্নপালি বেগমকে এমন কোনো কথা বলা হয়নি বলেও দাবি তার। সংশিস্নষ্টরা জানান, তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ পেতে হলে তাদের জামানত হিসেবে ব্যক্তির সম্পত্তি কাগজপত্রাদি ও প্রতিষ্ঠানের দলিলপত্র দাখিল করতে হয়। এর পাশাপাশি ব্যাংক স্টেটমেন, প্রজেক্ট প্রোফাইল, ব্যালেন্সশিট, ক্রেডিট রিপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন নম্বর, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিভিন্ন সংগঠনের মেম্বারশিপ ইত্যাদি জমা দিতে হয়। জানা যায়, দেশের শিল্প-বাণিজ্যের ৮০ শতাংশই এসএমই হিসেবে বিবেচিত। বিপুল কর্মসংস্থানও আছে এ খাতে। বর্তমানে দেশে প্রতিষ্ঠিত অনেক বড় শিল্প উদ্যোক্তাই তাদের ব্যবসা শুরম্ন করেছিলেন এসএমই হিসেবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তারা বড় শিল্প গড়ে তুলেছেন। কিন্তু এসএমই খাতের অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দিতে চান না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শেখ মো. সেলিম যায়যায়দিনকে জানান, এক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই ঘাটতি আছে। ব্যাংকগুলোর সমস্যা হলো তারা শক্ত গ্রাহক ছাড়া জামানতবিহীন ঋণ দিতে ভয় পায়। অন্য দেশে প্রত্যেক নাগরিকের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর থাকে, আমাদের নেই। ব্যাংকগুলো এজন্যই জামানতবিহীন ঋণ দিতে ভীত থাকে। তারা এখনো করপোরেট কালচার থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। আর উদ্যোক্তাদের সমস্যা হলো যিনি উদ্যোক্তা তিনি প্রয়োজনীয় ক্যাপাসিটি নিয়ে ব্যাংকে যান না। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রশিক্ষণের অভাব আছে। বেশিরভাগই ব্যবসা খাতে তাকে কীভাবে এগুতে হবে সেটি জানেন না। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ঋণ নিতে গেলে পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে জানতে হবে। ব্যাংক কি চায় সেটা জানতে হবে। ব্যাংকগুলোকেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। অনেক ব্যাংকই এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। আবার অনেক ব্যাংক বিষয়টি নজরের নিচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা জামানতবিহীন ঋণ নারী উদ্যোক্তারা কতটুকু পাচ্ছেন জানতে চাইলে উইমেন্স এন্ট্রেপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ওয়েব) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল যায়যায়দিনকে বলেন, জামানতবিহীন ঋণ নিতে গিয়ে বেশ ভোগান্ত্মির শিকার হচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। একেবারেই যে পাচ্ছেন না তা বলা যাবে না। কিছু পাচ্ছেন। তবে তার পরিমাণ খুবই কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নারীদের মাঝে জামানতবিহীন ঋণ বিতরণের যে অঙ্ক দেখিয়েছে তা পুরোপুরি বাস্ত্মবসম্মত নয় বলেও মন্ত্মব্য করেন তিনি। দেশের শীর্ষ একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, তারা উদ্যোক্তাদের পাশে থাকতে চান। কিন্তু জামানতবিহীন ঋণ দিতে চান না। ঋণ নিতে হলে জামানত বা শর্তের মধ্যে থাকতে হবে। তবে নতুন উদ্যোক্তা নয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ঋণ নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশিস্নষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জামানতবিহীন ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ছে ব্যাংকিং খাতে। কেননা এমনিতেই জামানত নিয়েও ব্যাংকের বড় বড় ঋণের বিপরীতে আদায় হয় না। হলমার্ক, বিসমিলস্নাহসহ বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ধকল ব্যাংক খাতকে এখনো ভোগাচ্ছে। এর বাইরে জামানতবিহীন ঋণ বেড়ে যাচ্ছে যা ঝুঁকির পরিমাণ আরও বাড়ানো হচ্ছে এ খাতে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে এখন থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

 

 

 

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৮মার্চ২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর