অনলাইন ডেস্কঃ
সাত লাখ ১০ হাজার ৪৬৮ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত এই পুনর্বাসন হয়।
এর মধ্যে ব্যারাক হাউজ নির্মাণের মাধ্যমে এক লাখ ৬৮ হাজার ৪৮টি পরিবার, নিজ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে এক লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩ পরিবার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সাত হাজার ৯২টি ঘর, আম্ফান ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার একশ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
বুধবার (৮ জুন) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীনদের কক্সবাজারের খুরুশকূলে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২০টি বহুতল ভবনে প্রথম পর্যায়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে ৬৪০টি পরিবারকে। আরও ১১৯টি ভবন নির্মাণের কার্যক্রম চলমান।
এর আগে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে ভূমি-গৃহহীন ও অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর আমি ২০ মে সেন্টমার্টিন পরিদর্শন করি। সেখানে গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের নির্দেশনা প্রদান করি। আমার নির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার দান করা জমিতে পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট চার হাজার ২৩৭টি গৃহ (বীর নিবাস) নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গৃহায়ণ তহবিলের মাধ্যমে ঘর নির্মাণ করে ৮৮ হাজার ৭৮৬টি পরিবারকে করা হয়েছে পুনর্বাসন। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ গৃহহীন পুনর্বাসিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশের সব ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
পুনর্বাসিত পরিবার যেন ভবিষ্যতে মালিকানা নিয়ে কোনো জটিলতায় না পড়ে সে জন্য জমির মালিকানা স্বত্বের রেজিস্টার্ড দলিল, কবুলিয়ত, নামজারি, খতিয়ান ও দাখিলা হস্তান্তর করা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোথাও উপযুক্ত খাস জমি পাওয়া না গেলে জমি কিনে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ৮৩টি উপজেলায় ১৭১ দশমিক ৮৭ একর জমি কেনা হয়েছে। যার মূল্য ১১৭ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা।
এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ যেমন তৃতীয় লিঙ্গ, বেদে, মান্তা, ভিক্ষুক, কুষ্ঠরোগী, হরিজন জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না- এ দর্শনের আলোকে সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।