আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ
ক্ষুধার্ত স্বামীকে শিকলবন্দি করে রাখা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সেই লাভলীর হাতে চাল-ডাল ও ডিমসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর বস্তা তুলে দেয়া হয়েছে।গত ২৯ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ রোববার দুপুরে আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভা পতি শেখ আশিকুর রহমান নাঈম ও তার বন্ধুরা অন্ধপল্লীর ওই ক্ষুধার্ত দম্পতির হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন।জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ট্রেন চলা চল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আখাউড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অন্ধ পল্লীর বাসিন্দারা।উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধনগর গ্রামের অন্ধপল্লীর ৪০টি পরিবারে ছেলে-বুড়ো, শিশু ও মহিলা নিয়ে অন্তত শতাধিক অন্ধ সুবিধাবঞ্চিত ভিক্ষুক আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ট্রেনযাত্রীদের ওপর নির্ভরশীল।ওই অন্ধরা আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন হয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন যাত্রীদের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। করোনা মহামারীর কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় অন্ধপল্লীর বাসিন্দাদের স্টেশনে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।ভিক্ষা করতে গ্রামে বের হলে করোনাভাইরাস আতঙ্কে গ্রামের মানুষ ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।তাই বাধ্য হয়ে দিন আনে দিন খায় অন্ধ জন গোষ্ঠীর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।অন্ধপল্লীর রমজান আলী, ওলি আহম্মদ, হোসেন আলী, লাভলী আক্তার, জোহরা বেগম, হাসিনা আক্তার, নার্গিস বেগমসহ ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকরা প্রাইভেট ডিটেকটিভকে জানান, ঘরে যা সঞ্চয় ও মজুদ ছিল সব ফুরিয়ে গেছে। বাঁচার তাগিদে ভিক্ষা করতে গ্রামে গেলেও ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে কেউ ভিক্ষা দেয় না। ঘরে খাবারের কিছু না থাকায় রান্নাও বন্ধ।কালো মিয়া প্রচণ্ড ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে স্ত্রী লাভলীর কাছে খাবার না পেয়ে তাকে মারধর করে।ঘরের হাঁড়ি-পাতিল ভাঙচুর শুরু করে।অন্ধপল্লীর অন্যদের সহায়তায় দুদিন হল স্বামীকে শিকল বন্দি করে রাখে স্ত্রী লাভলী।শিকলবন্দি কালো মিয়ার স্ত্রী লাভলী আক্তার জানান, গ্রামের এক লোকের বাড়িতে তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতেন।করোনাভাইরাস সংক্র মণ আতঙ্কে ওই বাড়ির লোকজন তাকে যেতে নিষেধ করেছেন।ঘরে চাল-ডাল যা ছিল এতদিনে তা ফুরিয়ে গেছে।আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে রান্নাও বন্ধ। স্বামী, সন্তান নিয়ে উপস দিন কাটছে তাদের।লাভলীর মতো অন্ধপল্লীর অন্য রাও জানান, সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের সবার।উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের বিত্তবানরাও এগিয়ে আসছেন না।চরম বিপাকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অন্ধপল্লীর বাসিন্দারা।অন্ধপল্লীর বাসিন্দাদের মান বেতর জীবনযাপনের সচিত্র প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যমে অনলাইন প্রচারিত হয়।২ ঘণ্টার মধ্যে আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ আশিকুর রহমান নাঈম ও তার বন্ধুরা ওই অন্ধপল্লীর ক্ষুধার্ত দম্পতির হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন।শেখ আশিকুর রহমান নাঈম বলেন, আমি আপাতত অন্ধ পল্লীর বাসিন্দা লাভ লীর পরিবারকে কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি।অন্ধপল্লীর সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছে। সবাইকে খাবার দেয়া প্রয়োজন।লাভলীরা এ খাদ্যসামগ্রী পেয়ে অনেক খুশি বলে তিনি জানান।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৩১ মার্চ ২০২০/ইকবাল