চলতি বছরই মাঠে নামতে যাচ্ছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে ভুয়া ফেসবুক, পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা উত্তোলন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারসহ নানা ধরনের সাইবার অপরাধ। কিন্তু বেশি ক্ষেত্রেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে সাইবার অপরাধকারীরা। বিশেষ করে জঙ্গী সংগঠনগুলোর জঙ্গীবাদ অপ-প্রচার, পর্নোগ্রাফি ব্যাবহার করে নারীদের কলঙ্কিত করে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়া ও একাউন্ট হ্যাকিং করার ঘটনায় গড়ে উঠেছে সাইবার অপরাধের আন্ডার ওয়ার্ল্ড। সাইবার অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উদেশ্যে গঠিত হচ্ছে দেশব্যাপী পুলিশের বিশেষ ইউনিট সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশ সদর দফতর পুলিশের বিশেষ ইউনিট সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো গঠন করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে । প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী সিআইডির অধীন এ ইউনিটটির নেতৃত্বে থাকবেন একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এর মোট জনবল হবে ৫০৫ জন। নতুন সাইবার ক্রাইম ইউনিটে একজন ডিআইজি ছাড়াও ৩ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ৫ জন এসপি (পুলিশ সুপার), ৮ জন অতিরিক্ত এসপি, ৩৮ জন এএসপি, ৮৫ জন পরিদর্শক, ১৮০ জন এসআই, ৬০ জন এএসআই এবং ১০০ জন কনস্টেবল থাকবে। ইতিমধ্যে সিআইডি কার্যালয়ে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভের অর্থায়নে ২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। সেটিকে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর প্রধান কার্যালয় করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর পুলিশের এই বিশেষ ইউনিটটি সারা দেশে কাজ শুরু করবে এবং নতুন বছরের শুরুতেই কাজ করতে পারবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশাবাদী।
সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বিভাগে সীমিত পর্যায়ে রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক সাইবার অপরাধ নিয়ে একটি টিম কাজ করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষায়িত সাইবার ইউনিটের জনবল ৬৭ জন। তার মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক ও এসআই পদমর্যাদার) ১৬ জন। তাদের তদারকির জন্য রয়েছেন ৪ জন সহকারী কমিশনার (এসি), ২ জন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এবং একজন ডিসি। ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ ইউনিটে মাসে প্রায় এক‘শ সাইবার সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ আসে। রাজধানী ঢাকার ৪৯টি থানায়ই সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত মামলা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ ইউনিটের পক্ষে এতো অভিযোগের তদন্ত দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর হচ্ছে না। সেই প্রেক্ষিতে ডিএমপির সাইবার ইউনিটের জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে পুলিশের উর্ধতন পর্যায়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নতুন বছরের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এই নতুন ইউনিটের কাজ শুরু করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্ট আশাবাদী। তাতে সাইবার অপরাধ করে কেউই রেহাই পাবে না এবং সাইবার সংক্রান্ত অপরাধও কমে আসবে। দেশে সাইবার অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশকিছু সদস্য বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে বড় ধরনের কোন সাইবার অপরাধ দমনে বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করা হয়নি। ফলে সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে সাইবার সংক্রান্ত ধরনের অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশে পৌনে ৭ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাই আড়াই কোটি। এ অবস্থায় দেশে সাইবার অপরাধ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ওই ধরনের অপরাধের শিকার মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ মামলার আশ্রয় নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এক জরিপে বলা হয়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীর মধ্যে ৭৭ শতাংশই ফেসবুককেন্দ্রিক সাইবার অপরাধের শিকার।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিলম্বে হলেও সরকার সাইবার ক্রাইম দমনে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি প্রশংসনীয় ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাসেরও উদ্যোগ নিয়েছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যাবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওসব সরকারের অপরাধ দমনমূলক পদক্ষেপ কার্যকর করা গেলে সাইবার অপরাধ কমে আসবে, যা নতুন বছরে তার সুফল ভোগ করা সম্ভব হবে।