যশোরে ভুল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক বন্ধ
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ভুল অপারেশনে এক প্রসূতির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরের কেশবপুরের মর্ডাণ ক্লিনিক সীলগালা করে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। চলতি বছরের সেপ্টেবর মাসে ভুল সিজারের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন ও কিডনি অকেজো হয়ে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত প্রসূতির স্বামী বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন অফিসের যৌথ সিন্ধান্তে ক্লিনিকে সীলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্লিনিকে ভর্তি থাকা প্রায় বিশ জন বিভিন্ন ধরনের রোগিদের ক্লিনিক থেকে নিয়ে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় জানান, কেশবপুরের মর্ডান ক্লিনিকে ২০ সেপ্টেম্বর উপজেলার সাতবাড়িযা ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে সাইফুল্লাহর স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে সিজার করা হয়। ক্লিনিক মালিক রবিউল ইসলাম ওই রোগি ভর্তি করিয়ে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ডাক্তার আবদুল বারীকে দিয়ে তাসলিমার অপরারেশন করায়। অপারেশনের পর তাসলিমার রক্তক্ষর শুরু হয়। বার বার রক্ত দেয়ার পরেও রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কৌশলে খুলনার একটি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীর স্বজনরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তারা চিকিৎসা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং তাসলিমাকে খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু রোগীর আত্মীয়রা খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করান এবং ২৭ সেপ্টেম্বর গত বুধবার ভোর চারটার দিকে তাসলিমা বেগম মারা যান। ওই ঘটনার অভিযোগে উপজেলা প্রশাসন পৃথক পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে যশোর জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন অফিসে ক্লিনিকের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে রোগির মৃত্যু ঘটেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। জেলা প্রশাসন দুটি তদন্ত রিপোর্টেই মর্ডান ক্লিনিকের লাইন্সেস বাতিল করার সুপারিশ করে স্বাস্থ্য বিভাগের ডাইরেক্টরের কাছে প্রতিবেদন প্রেরন করে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন মর্ডান ক্লিনিক সাময়িকভাবে সীলগালা করে বন্ধ করা সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিভিল সার্জন ডাক্তার দিলীপ কুমার রায়, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ কবির হোসেন পলাশ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ আবু শাহীন ও থানার এস আই রবিউল ইসলাম, এ এস আই শ্যামল সরকারসহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আলোচিত মর্ডান ক্লিনিক বদ্ধ করে দেন। এ সময় ক্লিনিকে ভর্তি থাকা প্রায় ২০ জন রোগিকে উপজেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সিভিল সার্জন ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় জানান, আপাতত ক্লিনিক বন্ধ করা হলো। ডিজি থেকে পরবর্তী নির্শেদ মোতাবেক ক্লিনিক মালিক ও সংশ্লিষ্ট ডাক্তার আবদুল রাবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ক্লিনিক বন্ধ করায় অভিযোগকারী নিহতের স্বামী সাইফুল্লাহ জানান, খুব ভাল লাগছে। তবে ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তারের শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে ওদের হাতে আর কারো মৃত্যু না হয়। অন্যদিকে সিভিল সার্জন সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে কেশবপুর হাসপাতালে এসে কোন ডাক্তার কর্মচারী না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, হাসপাতালে কর্মরতরা ভবিষ্যতে ঠিকমতো যেন অফিস করে তার নির্দেশ প্রদান করেছি। এর আগেও কেশবপুরের মর্ডান ক্লিনিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় কয়েক জন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ১৭ আগস্ট ওই ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে মনিরামপুরের পারখাজুরা গ্রামের আবদুল গণির স্ত্রী মুসলিমা খাতুনের মৃত্যু হয়। কয়েক মাস আগে প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে মর্ডান ক্লিনিকে অব্যবস্থাপনার কারেণে মালিক রবিউল ইসলামকে এক মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন।