ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার দায়ে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের নীরব ভুমিকার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার চড়াইখোলা ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে হোসনে আক্তার জাহান মৌসুমী’র সাথে কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের দক্ষিন চাঁদখানা শাহপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম শাহ’র ছেলে ও কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজের প্রভাষক আহাদ আলী শাহ’র ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকলোভী আহাদ আলী ও তার পরিবার সদস্যরা মৌসুমীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এরই জেরে গত ৫ আগস্ট রাতে এক সন্তানের জননী মৌসুমী স্বামী আহাদ আলী শাহ’র শারীরিক নির্যাতনের ফলে মারা যায়। এ মৃত্যু রহস্য ধামাচাপার চেষ্টায় এলাকায় মৌসুমী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার প্রচারনা চালিয়ে প্রথমে মৌসুমীর মরদেহ রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার মৃত্যু অনেক আগে ঘটেছে। এ মৃত্যু’র দায়ভার এড়ানোর চেষ্টায় মৌসুমীর মরদেহ নিয়ে ঘাতক স্বামী ও তার পরিবার সদস্যরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে বলে রোগীর নাম খাতায় অন্তর্ভুক্ত করে। ভর্তির পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক অনেক আগেই সে মারার গেছে বলে ঘোষনা করলে তারা সু-কৌশলে জরুরী বিভাগ থেকে পালিয়ে যায়। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রোগী মৃত্যু’র কারণ কি? তা নিশ্চিত হতে রংপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশে খবর দেয় এবং মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে পুলিশকে ময়না তদন্তের আবেদন করে মেীসুমীর বাবা। কোতোয়ালি থানা পুলিশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়না তদন্ত করে। ময়না তদন্ত শেষে মৌসুমী’র লাশ নিয়ে নিজ গ্রামের পরিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ব্যাপারে রংপুর কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলা নং-১৩৭। গত ৩০ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজর ফরেনসিক বিভাগ মৌসুমীর মরাদেহের ভিসেরা (পিএম নাম্বার-১৮০/০৫) রির্পোট পেশ করেন। ভিসেরা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে লাঠি’র আঘাতে মৃত্যু হয়েছে মৌসুমীর। রংপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ এ হত্যাকন্ডের ঘটনাস্থল জেলার কিশোরগঞ্জ থানা’র অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মামলাটি সেখানে পাঠায়। এ প্রতিবেদনটি কিশোরগঞ্জ থানায় আসলে নিহত মৌসুমীর বাবা মকবুল হোসেন বাদী হয়ে এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) এর ৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে নীলফামারী অতরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান, মৌসুমী আক্তার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মৌসুমীর বাবা সাংবাদিকদের জানান, মেয়ের ঘর-সংসার ও জীবন বাঁচাতে আমি জামাতার পরিবার সদস্যদের সাথে বহুবার দেন-দরবার করেও মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না। এ হত্যাকন্ডের মামলা সংশ্লিষ্ট থানায় দায়ের করা হলেও এখনো অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ তেমন কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমার মেয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতারে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ হত্যাকান্ডের অভিযুক্ত আহাদ আলী জানান, বিদ্যুতের শর্ট-সার্কিটজনিত কারণে আমার স্ত্রী’র মৃত্যু হয়েছে। তাকে শারিরিক নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে শশুরবাড়ীর লোকজন।