নিজস্ব প্রতিবেদক-সিলেটঃচিঠি বা সেল ফোনের মাধ্যমে কল করে হত্যার হুমকি আমাদের দেশে ডাল ভাতের মতোই কিন্তু আপনার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে কাফনের কাপড় সম্বলিত একটি খাম যখন একজন বৃদ্ধ মায়ের হাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি দিয়ে চলে যায় এবং সেই চিঠিতে আপন ছেলেকে খু*ন করা হবে উল্লেখ তাকে তখন সেই মায়ের অবস্থা কেমন হবে?
ঠিক ঐ রকমই একটি ঘটনা ঘটেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মোঃ আখলাক হোসেন চৌধুরীর নিজ বাড়িতে, চারখাই ইউনিয়নের কনকলস গ্রামে ।ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৯ মে ২০২৫ ইং বিকাল সাড়ে ৫,৩০ মিনিটের সময়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় চারখাই ইউনিয়নের কনকলস গ্রামের নিজ বাড়ির সামনের পুকুর হতে ওযু করে ঘরে যাচ্ছিলেন জাহানারা বেগম চৌধুরী। এ সময় মোটরসাইকেলযোগে আসা দুই অজ্ঞাত ব্যক্তি তাহার মুখোমুখী হয়ে আখলাক চৌধুরীর মায়ের খোজ করলে তিনি তাহার পরিচয় দেন তখন তারা একটি খাকি রঙের প্যাকেট দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
জাহানারা বেগম জানান, “আমি ঘরে গিয়ে নামাজ শেষে প্যাকেটটি খুলে দেখি কাফনের কাপড়ের মত একটি সাদা কাপড় এবং বলপেন দিয়ে হাতে লেখা একটি চিঠি। চিঠি পড়ে আমার বুক কেঁপে উঠে আমি তাৎক্ষণিক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই।
চিঠিতে আমার ছেলে আখলাক হোসেন চৌধুরী দেশে ফিরলে তাকে হত্যা করা হবে বলে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া এই চিঠিতে আমার ছেলের জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কথা উল্লেখ করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ পরিচয় দেয়া হুমকিদাতারা লিখেছে— “তোমার ছেলে দেশে আসলে সুযোগ মতো তাকে খতম করে ফেলা হবে।”
জানা যায়, মোঃ আখলাক হোসেন চৌধুরী বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড জামায়াতের কর্মী এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্য জামায়াতের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন।তিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার পতন আন্দোলন সহ মানবাধিকামূলক বিভিন্ন সভা সেমিনারে সরাসরি অংশগ্রহন করেছিলেন এবং তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতেও এ বিষয়ক প্রতিবাদী লেখালেখিতে সরব ছিলেন।
জাহানারা বেগম বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জানালে স্থানীয়ভাবে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি বিয়ানীবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন , জিডি নং ৩৯, তারিখ ০১/০৬/২০২৫ ইং।
এই বিষয়ের সত্যতা জানতে চাইলে, বিয়ানীবাজার থানার একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। হুমকির উৎস এবং উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া প্রয়োজনে প্রবাসী ব্যক্তির নিরাপত্তার দিকটিও খতিয়ে দেখা হবে।”
একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,এমন হুমকির ঘটনা দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় নতুন কিছু নয়, তবে একজন বৃদ্ধা মায়ের হাতে সরাসরি হুমকি চিঠি পৌঁছে দেওয়া বেশ উদ্বেগজনক এবং পরিকল্পিত কিছু ঘটনার ইঙ্গিত দেয়।
আর সেই কারণেই প্রশ্ন উঠছে, বিদেশে অবস্থানরত রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী ও তাদের পরিবার কি এখন দেশে নিরাপদ? এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকার সচেতন মানুষ।