মো. ইসমাইলুল করিম নিজস্ব প্রতিবেদক :
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামায় উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাজার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ত্রিডেবা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার উদ্দিন (তপন মাস্টার)ও ইয়াংছামুখ হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ (বোমাং চীফ সার্কল তথা রাজার সনদ) জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
ত্রিডেবা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার উদ্দিনের সনদ জালিয়াতির বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দায়িত্বরত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও লামা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবুল মনসুর সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। লাইনঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা ইয়াছমিন ও ছাত্র প্রতিনিধি মিছবাহ উদ্দিনের আনা অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করেন।
লিখিত অভিযোগে ছাত্র প্রতিনিধি মিছবাহ উদ্দিন প্রতিবেদক’কে জানান,১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আকতার উদ্দিন তপনের বাবা আলতাপ উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেছেন। আকতার উদ্দিন তপনের বাবা ও তার নিজের নামে এই পার্বত্য তিন জেলায় জায়গা-জমি বা ঘর-বাড়ি কিছুই ছিল না এবং বর্তমানেও নাই। তাছাড়া তারা এই বান্দরবান পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয়। তবে আক্তার উদ্দিন তপন ১৯৯৬-৯৭ ইং সালের দিকে লামায় বেড়াতে আসেন। সেই সুবাদে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। বাবার নামে মিল রয়েছে এমন ব্যক্তির জমাবন্দি সংগ্রহ করে এবং অসত্য তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বোমাং রাজার সনদ সংগ্রহ করেন।
অপরদিকে ইয়াংছামুখ হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন এর বিরুদ্ধে স্থায়ী বাসিন্দার বোমাং রাজার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করেছেন রবিউল হাসান নামক এক ব্যক্তি। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে দায়েরকৃত অভিযোগে রবিউল হাসান উল্লেখ করেন, মো. নাজিম উদ্দিনের বাবার নামে বান্দরবান জেলার অধীনে কোন জায়গা-জমি ও ঘরবাড়ি ছিল না এবং বর্তমানে নাই। তাছাড়া তারা বান্দরবান পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয়। ১৯৯২ সালের দিকে নাজিম উদ্দিন লামা মাতামুহুরী কলেজে লেখাপড়া করতে এসে বমু বিলছড়ি এলাকায় পরে লামা মধুঝিরি নামক স্থানে হোসেন আহম্মদ এর বাড়িতে এসে গৃহ শিক্ষক হিসেবে (লজিং) থাকতেন। ওই সময় বোমাং রাজার স্থায়ী বাসিন্দা সনদ সংগ্রহে নাজিম উদ্দিন ভূয়া ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন রবিউল।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আকতার উদ্দিন তপন কাছে জানতে চাইলে প্রতিবেদক’কে বলেন, ডিসি সনদ দিয়ে চাকরি করে আসছি ২৫ বছর, বোমাং রাজার সনদ সঠিক আছে। বোমাং রাজা সকল কিছু জেনে শুনে স্থায়ী বাসিন্দার এই সনদ প্রদান করেছেন,বাকী সিদ্ধান্ত তদন্ত কমিটি করবে। যারা অভিযোগ করছে তারা তো অন্য উপজেলা লোক তারা কিভাবে লামায় স্থানীয় বাসিন্দা হয়ে। এই বিষয়ে অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, এগুলো হচ্ছে লামা অন্য দুই শিক্ষক জাল সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি করছে তা প্রমাণ হয়েছে। আমার বোমাং রাজার সনদ সঠিক আছে। ভুয়া ও জালিয়াত হলে রাজার দিচ্ছে তিনি জানবে আমার কাছে যেটা আছে সেটা দিয়ে প্রমাণ করবো।