কক্সবাজারে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থার (বাইসস) গোপন বৈঠক থেকে আটক ১৯ ইউপি সদস্যের মধ্যে ১৫ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় অপর চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে ওই ১৫ জনকে কক্সবাজার আদালতে পাঠানো হয়।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজীম নোমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের কলাতলী সড়কের হোটেল মোটেল জোনের ইউনি রিসোর্টের পঞ্চম তলার বলরুমে গোপন সভা থেকে ১৯ ইউপি সদস্যকে আটক করার কথা জানায় পুলিশ।
ওসি ফয়জুল আজিম নোমান বলেন, রাতে আটক ইউপি সদস্যদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আটক ১৫ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং অপর চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে
গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিরোধিতাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের কলাতলী এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে সরকারবিরোধী আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক নেতা গোপন বৈঠক করার খবর পায় পুলিশ। পরে পুলিশের একটি দল সন্দেহজনক হোটেলটি ঘিরে ফেললে বেশ কয়েকজন কৌশলে পালিয়ে যায়। এসময় হোটেলটির সম্মেলন কক্ষে অবস্থানকারী ১৯ জন ইউপি সদস্যকে পুলিশ আটক করে। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির নেতা। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিরোধিতাসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউনি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা (বাইসস) কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী নিজেই। তিনি বলেন, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানরা সভায় অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় সভা শেষে অতিথিরাসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি সেখান থেকে চলে আসলেও কক্সবাজার জেলার কিছু সংখ্যক ইউপি সদস্য সেখানে অবস্থান করছিলেন।
আটক হয়ে থানায় যাওয়ার সময় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জহির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, পূর্বনির্ধারিত সময় অনুসারে শুক্রবার ইউপি সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাইসস জেলা শাখার আলোচনা সভা ছিল। আমরা প্রায় ৭০ জনের মতো ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলাম। সেখানে দেশের ক্রান্তিকালে কীভাবে কাজ করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। হঠাৎ অতর্কিতভাবে পুলিশ ও সমন্বয়ক পরিচয়ে কিছু উশৃঙ্খল যুবক ঢুকে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইলসহ শরীর তল্লাশির পর আটক করে। যদি আমাদের গোপন বৈঠক থাকতো তাহলে সড়কের পাশে হোটেলে এত বড় অনুষ্ঠান হতো না। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
সভায় পুলিশ-সমন্বয়ক যৌথ তল্লাশি থেকে বের হওয়া মহেশখালীর ইউপি সদস্য সেলিম বলেন, আমাদের বাইসসের আলোচনা সভা ছিল। মেম্বারদের মাঝে সব রাজনৈতিক দলের মানুষও ছিল। কিন্তু অকারণে এভাবে আমাদের ভাইদের আটক করা হয়েছে, এর তীব্র নিন্দা জানাই।
ইউনি রিসোর্টে অবস্থান করা এক পর্যটক দম্পতি বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে এ হোটেলে উঠেছিলাম। হঠাৎ বেশকিছু যুবক হোটেল ঘেরাও করে। পরে পুলিশ হোটেলে আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয়ে হোটেলে ঢোকেন অনেক তরুণ। আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না। তাই চলে যাচ্ছি।