October 5, 2024, 6:27 pm

সংবাদ শিরোনাম
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ভোলা বোরহানউদ্দিনে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেডের দাবিতে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে বগুড়ায় বিএনপির মতবিনিময় সভা! লক্ষ্মীপুরে কুমিরের আতঙ্কে এলাকাবাসী সাংবাদিক পুত্র আবির হোসেন অনন্ত’র জন্মদিন আজ বিল্লাল হুসাইন ক্ষমতা! নাকি আড়ালে ছিলো ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার?

ক্ষমতা! নাকি আড়ালে ছিলো ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার?

উপ-সম্পাদকীয়

 

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দেশের ক্ষমতার লোভ ছিলো নাকি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ছিলো এ নিয়ে একধরনের ধোয়াশা তৈরি হয়। আমি যদি বলি উনার ক্ষমতার কোনো লোভ ছিলনা তাহলে বর্তমানে এই কথাটা অনেকের কাছে একধরনের পাগলের প্রলাপ মনে হতে পারে। কারন, যদি ক্ষমতার লোভ না-ই থাকে তবে কেন জোর করে এতদিন ক্ষমতায় ছিলো? আর কেনইবা তাকে ক্ষমতা ছাড়াতে বাধ্য করা হল? কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন না করে নিজের হাতে ক্ষমতা রেখে একে একে তিন তিনবার লোকদেখানো নির্বাচন দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসলো? প্রশ্ন থেকে যায় অনেক। এ বিষয়ে কথা বললেই আশা করি প্রকৃত সত্যটা বেরিয়ে আসবে, আসলে কি ছিলো তার উদ্দেশ্য এবং কিসের কৌশলে আজকের এই পরিনতি!
২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়ারে বসার পর থেকেই জনগণের বাকস্বাধীনতা হরন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক পেরেশানি, সিটি নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউপি নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে সারা বাংলার আমজনতার সম্প্রীতির মাঝে বিভেদ সৃষ্টি, জেল জুলুম, গুম খুন ও হত্যা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধী বিচার এগুলো আমরা সবাই জানি। এরপর পিলখানা বিজিবি হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হেফাজতের ঘটনা, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সহ যতগুলো যৌক্তিক দাবি আদায়ের মিছিল মিটিং হয়েছে তাতে নির্মম ও অমানবিক নির্যাতন। সবশেষে ২০২৪ এর কোটা সংষ্কার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোমহর্ষক ঘটনা। নিরীহ ও সাধারন ছাত্রছাত্রীদের উপর অমানবিক অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা আমাদের সবারই জানা।
সেই ২০০৮ থেকে বর্তমান ২০২৪ একটানা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছরের উনার রাজনৈতিক জীবন, শাসনামল, রাজত্ব দেখলে স্পষ্টতই বুঝা যায় এই দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি উনার বিন্দু পরিমাণ ভালবাসাও ছিলনা। যদি দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি বিন্দু পরিমাণ ভালবাসা থাকতো তাহলে তিনি এতটা নির্দয়, এতটা নিষ্ঠুর, এতটা নির্মম কখনোই হতে পারতেননা। রাষ্ট্রনায়ক ও রাষ্ট্রশাসকের নামে ছিলেন প্রতিশোধের নেশায় মত্ত। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ, পরিবারের সদস্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিশোধ। উনার পিতা এই দেশের জন্য এতকিছু করেছেন এরপরেও এই বাঙালির হাতে স্ব-পরিবারে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এই বাংলায়, এই বাঙালি উনার পিতা সহ উনার পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে। সেদিন কেউ প্রতিবাদ করেনি, সেদিন কেউ এগিয়ে আসেনি, সেদিন কেউ রাস্তায় নেমে উনার পিতা এবং পরিবারের হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান ধরেনি। সেদিনও আওয়ামিলীগ ছিলো, দলের নেতাকর্মী ছিলো, এদেশে মানুষ ছিলো অথচ কেউ কোনো শব্দ পর্যন্ত করেনি। এইযে হতাশা, ক্ষোভ আর হারানোর বেদনা এই সবকিছু থেকেই উনি হয়ে উঠেছেন প্রতিশোধ পরায়ণ। এজন্য উনার ভেতরে দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি দিনে দিনে শুধু ঘৃণাই লালন করে গেছেন। আর তাই উনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার একটাই উদ্দেশ্য এবং উনার মিশন ভিশন ছিল দেশটাকে তছনছ করে দেয়া। দেশের জনগণকে নিজেদের মধ্যে বিভেদ বিভাজন সৃষ্টি করে, খুনাখুনি হানাহানি লাগিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে দেশটাকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানিয়ে অথবা কোনো পরাশক্তির হাতে তুলে দিয়ে দেশত্যাগ করা। উনি না ভালবেসেছেন এই দেশকে, না দেশের জনগণকে, না উনার রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগকে। আওয়ামিলীগ রাজনৈতিক দলটাকে একটা ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করেছেন, আর ক্ষমতার চেয়ারটাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট। শান্তির নামে চেয়েছেন সংঘাত, বার বার ৭১ এর চেতনা আর ৭৫ এর স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী দলের লোকদের মগজ ধোলাই করেছেন। নয়তো যেকোনো একটা ইস্যু হলেই উনি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সাথে সাথেই থামাতে পারতেন, দেশের প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করতে পারতেন অথচ তা না করে সরাসরি উনার দলীয় আওয়ামী এবং ছাত্রলীগকে উস্কে দিয়েছেন। প্রতিহত এবং মোকাবেলার নামে ছাত্রলীগকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সবকিছু যদি আওয়ামী আর ছাত্রলীগই করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি জন্য? কি দায়িত্ব এসব বাহিনীর? এই দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য প্রথমেই উনার প্লান কাজে লাগিয়েছেন লোকাল নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীক দিয়ে। বাংলার মানুষের একে অন্যের সাথে যেই সম্প্রীতির বন্ধন ছিলো, লোকাল নির্বাচনে যেভাবে আনন্দ ফুর্তিতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন দলীয় প্রতীক দিয়ে প্রথমেই সেই সম্প্রীতিতে ফাটল ধরিয়েছেন। প্রার্থী পছন্দের হলেও দলীয় প্রতীকের কারনে অনেককেই রাজনৈতিক পথ বেছে নিতে হয়েছে। আবার প্রার্থী অপছন্দের হলেও সেই একই কারনে পক্ষ নিতে হয়েছে। এভাবে গ্রাম পাড়া মহল্লা হাটবাজার সহ গোটা বাংলায় মানুষের মাঝে সম্পর্কের দুরত্ব তৈরি করেছেন। পরের প্লান শিক্ষাব্যবস্থা। কথায় আছে যেই জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত। এই দেশ এই জাতি যেন উন্নতি করতে না পারে, বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াতে না পারে সেজন্য শিক্ষা কারিকুলামই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এমন সব কারিকুলাম যোগ করেছেন যাতে মেধার বিকাশ কখনোই না হয়। জাতির সাথে তামাশা করার জন্য দিয়েছেন অটো পাশ বিশ্বের বুকে বানিয়েছে হাসির পাত্র। অনলাইন ক্লাসের নামে ছাত্রছাত্রীদেরকে করেছেন মোবাইলমুখী, হাতে তুলে দিয়েছেন স্মার্টফোন, পড়ার টেবিল ফেলে সারাক্ষণ স্মার্টফোনে ব্যাস্ত, আর এই স্মার্টফোনের আসক্তি ব্রেইন বিকশিত হওয়ার পরিবর্তে হচ্ছে অস্বাভাবিক প্রতিবন্ধী। জাতি মেধা শূন্য থাক, মেধা শূন্য থাকলে আগামীতে আর নেতৃত্ব দেয়ার কেউ থাকবেনা, এই দেশের হাল ধরার মত আর কেউ জন্ম নিবেনা এভাবেই দেশের অধঃপতন নিশ্চিত।
এরপরেই হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একটা রাষ্ট্রে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকে তবে সেই রাষ্ট্রে দখলদারি ঝগড়া মারামারি খুনাখুনি হানাহানি লুটপাট চুরি ছিনতাই বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকবে। আর এমন চলতে থাকলে সেই রাষ্ট্র অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে, মাথা তুলে দাড়াবার আগেই অন্যকোনো রাষ্ট্র তার দখল নিবে। এজন্য কৌশলে পুলিশ সহ অন্যান্য বাহিনীর হাই কমান্ডে নিজের পছন্দের লোকদেরকে বসিয়ে তাদের নির্দেশে অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে করেছে জনবিদ্বেষী। অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারী হচ্ছে আদেশের গোলাম, চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে তাদেরকে কঠোর ভুমিকা পালন করতে হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী, দেশের আইন কানুন শান্তি শৃঙ্খলা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাহিনী হচ্ছে পুলিশ। এই পুলিশ বাহিনীটাকে ছাত্রদের সামনে ভিলেনরুপে হাজির করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সম্পূর্ণ জনবিদ্বেষী এবং বিতর্কিত করেছে ক্ষমতাচ্যুত সরকার হাসিনা। যেন পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস ভক্তি শ্রদ্ধা সবকিছু উঠে যায়। আর এমন হলে পুলিশকে সবসময় ঘৃণা এবং তাচ্ছিল্যের চোখে দেখবে, দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে, জনতা কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাবে, নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি হানাহানি লুটপাট অসামাজিক কার্যকলাপ সহ বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকবে। আর এভাবেই দেশ আস্তে আস্তে ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।
২৪ এর কোটা সংষ্কার একটা সামান্য আন্দোলন, ছাত্রছাত্রীদের যেই দাবি ছিল তা সরকার ইচ্ছে করলেই মাত্র ১০ মিনিটে সমাধান করে দিতে পারতো কিন্তু তিনি তা করেননি। ওই যে বলেছি উনি শান্তি নয় বরং সংঘাত চায়। নিজের ইগো আর প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদ হয়ে ভুলে গিয়েছিলেন উনি একজন রাষ্ট্রনায়ক, একজন সরকার, একটা রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রছাত্রীদের যৌক্তিক দাবিটাকেও বিবেকের চোখে দেখতে পারেননি। যখন চীন সফর শেষে দেশে এসেছিলেন যদি এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি প্রটোকল সহ আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যেতেন! তাদের সামনে দাঁড়িয়ে যদি বলতেন বাচ্চারা আমি এখন এইমুহূর্তে কোনো প্রধানমন্ত্রী না, আমি কোনো রাষ্ট্রনায়ক না, তোমরা আমার সন্তান আর আমি তোমাদের মা হিসেবে তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমি দেশে ছিলামনা অথবা ব্যস্ততায় তোমাদের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়নি, এখন সময় পেয়েছি তাই আমার বাচ্চাদের সামনে একজন মা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। এখন বল তোমাদের কি চাওয়া, কি দাবি, কি আবদার, কি করলে তোমরা খুশি। ব্যাস, আর কিছুই লাগতোনা, সামান্য এইটুকু কাজ করলে আজ তিনি বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বে প্রশংসায় ভাসতেন। সুধীমহল সুশীলসমাজ সবার কাছে উনি বিশ্বের একজন নামকরা রাষ্ট্রনায়ক হতেন। উনার সামান্য এইটুকু আচরণেই ছাত্রছাত্রীদের দাবি ৮০% কমে যেত এবং এটাই সত্যি। কিন্তু উনি তা করলেন না। উল্টো তাদের কয়েকজন প্রতিনিধি ডেকে যা তা ব্যবহার করলেন। ছাত্ররা বাতিল চায়নি বরং সংষ্কার চেয়েছিলো। অথচ তাদেরকে দুই চার কথা বুঝ না দিয়ে উনার ইগোতেই পড়ে রইলেন। যারা দাবি নিয়ে গিয়েছিলো তারা কেউ রাজাকার বা রাজাকারের সন্তান এমনকি রাজাকার ফ্যামিলির কেউ ছিলনা, ওরা মেধাবী ছিল, মেধার মূল্য চেয়েছিলো। তাহলে এই রাজাকার শব্দটা কোন যুক্তিতে, কোন আক্কেলে, কোন বিবেক বুদ্ধিতে সেখানে উচ্চারণ করা হয়েছে? লেগে গেল আগুন গোটা বাংলায়, ছাত্রসমাজ ক্লাস বর্জন করে সবাই রাস্তায় নেমে পড়লো। মিছিলে মিছিলে উত্তাল ঢাকা সহ পুরো বাংলাদেশ। তবুও তিনি নমনীয় হননি, উল্টো তাদেরকে থামানোর নামে লেলিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী ও ছাত্রলীগকে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের হাতে ছিলনা কোনো অস্ত্র, তারা রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি করেনি, কোনো ভাঙচুর করেনি, কোনো অগ্নিসংযোগ করেনি, কোনো স্থাপনায় আঘাত করেনি, রাষ্ট্রদ্রোহি কোনো কাজ করেনি। শুধুমাত্র নিজেদের অধিকার আদায়ে যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিলো। আর এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে নিজের গুন্ডা পেটুয়া বাহিনী দিয়ে তাদেরকে করেছে রক্তাক্ত। ভেবেছিলো ২০১৮ এর মত এটাও এভাবেই শেষ করে ফেলবেন। কিন্তু ছাত্ররা যে এবার দাবি আদায় না করে ঘরে না ফেরার প্রতিজ্ঞা করেছে। যেই বিষয়টা মাত্র ১০ মিনিটে সমাধান করতে পারতো সেটা নিয়ে গেল এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে। উনি ভুলে গিয়েছিল এরা সেই ছাত্র যারা ৫২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ এমনকি ৯০ এ হুংকার দিয়ে বিশ্বকে জানান দিয়ে তাদের বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। সবকিছু ভুলে উনি শুধু রক্ত দেখতে চেয়েছে, তাজা রক্ত। উনার জেদ, প্রতিশোধের নেশা উনাকে উন্মাদ বানিয়ে দিয়েছিলো। উনার বাবা সহ উনার ফ্যামিলিকে স্ব-পরিবারে হত্যার দৃশ্য উনার চোখের সামনে ভেসে উঠতো আর উনি পাগল হয়ে যেতেন। যেই বাবা এই দেশের জন্য এতকিছু করেছে সেই বাবাকেই এই বাঙালি স্ব-পরিবারে হত্যা করেছে, সেদিন কেউ প্রতিবাদ করেনি, এই বাঙালিকে এই দেশকে উনি তছনছ করে দিবেন। এই চিন্তা থেকেই কখনোই সমঝোতা নয়, শান্তি নয় বরং প্রতিহিংসায় সব শেষ করে দিতে চেয়েছেন। ক্ষমতার প্রতি উনার বিন্দু পরিমাণ লোভ ছিলনা, ক্ষমতা তো ভালবাসা দিয়ে অথবা কোনো রক্তপাত না ঘটিয়ে প্রশাসন দিয়েই জোর করে থাকতে পারতেন। কিন্তু উনি চেয়েছেন ভাইয়ের হাতে ভাইকে, বন্ধুর হাতে বন্ধুকে, সন্তানের হাতে পিতাকে, পিতার হাতে সন্তানকে, চাচার হাতে ভাতিজাকে, ভাতিজার হাতে চাচাকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখবেন। আর তাই ছাত্রদের এই আন্দোলনকে না থামিয়ে প্রশাসনের সাথে আওয়ামী ও ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছেন। উনি জানতেন উনার দলের লোকেরা আন্দোলন করলে অনেক হতাহত হবেন নিহত হবেন কিন্তু তবুও উনি উস্কে দিয়েছেন। যদি দলের প্রতি দলের লোকের প্রতি এতটুকুও ভালবাসা মায়া মহব্বত থাকতো তবুও একটা লোকের গায়ে আঁচড় লাগুক সেটা চাইতেন না। পুলিশের হাইকমান্ড দিয়ে অধীনস্থদেরকে আদেশের গোলাম বানিয়ে নামিয়ে দিলেন মাঠে। ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, কাদানেগ্যাস, জলকামান দিয়ে অত্যাচার জুলুম নির্যাতন কতকিছু করলেন তবুও ছাত্ররা পিছু হটেনি। অবশেষে নেট ও বিদ্যুৎ অফ করে কয়েকদিন পর্যন্ত চালালেন গণহত্যা, এ যেন সেই একাত্তরের কালরাত্রির পুনরাবৃত্তি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি এমনকি ছোট ছোট মাসুম বাচ্চা সহ শত শত লাশের মিছিল। কত শত মায়ের বুক খালি হলো, মা তার সন্তান হারালো, বোন তার ভাইকে হারালো, স্ত্রী বিধবা হলো, সন্তান তার পিতাকে হারালো, বাবা মা তাদের আদরের সোনামণিকে হারালো, কত-শত পঙ্গু হলো, কত-শত আহত হয়ে হাসপাতাল এবং ঘরের বিছানায় পড়ে রইল। আহারে বাংলাদেশ! স্বাধীন বাংলাদেশে একাত্তর পরবর্তী এমন বিভীষিকাময় ঘটনা আর দ্বিতীয়টি কেউ দেখেনি। এত অত্যাচার জুলুম নির্যাতন ও সহপাঠী হত্যার পরেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দমে যায়নি, পিছু হটেনি। যতই শক্ত হাতে দমন করতে চেয়েছে ততই যেন শিক্ষার্থীরা নতুন শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে। কথায় বলে মানুষের পাপের ঘর যখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন তার পতনের জন্য সামান্য কারনই যথেষ্ট। শেখ হাসিনার ঠিক তেমনই হয়েছে। উনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য মিশন ভিশন আর কিছুই পূরণ হলনা। ক্ষমতার চেয়ারটাকে শক্ত সাপোর্ট বানিয়ে দলটাকে একটা ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করেও আর এই বাংলার অস্তিত্বকে নিজ হাতে বিলীন করে দিতে পারেনি। বিক্ষুদ্ধ জনতার তোপের মুখে দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী রেখে শতশত প্রটোকলে থেকেও ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো। এখন ক্ষমতায় না থেকেও বিদেশে বসে এই দেশে কিভাবে গোলযোগ বাধিয়ে রাখা যায় সার্বক্ষণিক সেই চিন্তায় ব্যস্ত। বিদেশে বসে মিডিয়ায় একেক বার্তা দেয় আর ব্রেইন ওয়াস পাবলিক তাতেই উচ্ছ্বসিত ও উত্তেজিত হয়ে এখনো ধ্বংস লীলায় মত্ত।

লেখক ও কলামিস্ট
এস এম মিজানুর রহমান মামুন
নির্বাহী সম্পাদক
দেশেরবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর