ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণ তথা যৌন সন্ত্রাস। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। বাদ যাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরাও। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের সংখ্যা ১৬৮টি। এর মধ্যে ধর্ষণ ৯৭টি, গণধর্ষণ ১৫, ধর্ষণের পর হত্যা ১১, ধর্ষণচেষ্টা ২৮, শ্লীলতাহানি ১২ এবং যৌন নিপীড়ন ৫টি। এ ছাড়া বিয়ের প্রলোভনে যৌনকর্মের পর সন্তানের স্বীকৃতি না দেয়ার ঘটনা ৩টি। পতিতালয়ে বিক্রি একটি, জোরপূর্বক বিয়ে ৫টি এবং নারী উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটেছে ২২টি। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ৬৮৬ জন নারী বা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৯ জন। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১১৩ জনকে। এ জাতীয় নির্যাতন বন্ধে আইন থাকলেও তা কার্যকর নয়। অপরাধীরা শাস্তি না পেয়ে পার পাচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম দেশের ১৪টি জাতীয় দৈনিক থেকে প্রকাশিত ঘটনার সমন্বয়ে একটি পরিসংখ্যান তৈরি করে। সেখানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে ১৯৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। পরবর্তী বছর ২০১৫ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২১ এবং ২০১৬ সালে ৬৮৬ জন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমাজে এই হারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়া খুবই আশঙ্কাজনক। গত ৫ বছরে পাশবিক নির্যাতন ও নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে ১৩ হাজার ১২ শিশু। এরমধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৫২৬ শিশু। আত্মহত্যা করেছে ৭২৭ এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ শিশু। ২০১২ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে এসব শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ৩ হাজার ৩০০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতর বলছে, চলতি বছর প্রথম ৪ মাসে রাজধানীসহ সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১০ হাজার ৩২৪টি। আর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব হচ্ছে, জানুয়ারি থেকে জুন ২০১৭ পর্যন্ত ২৮০ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ছাড়া সংস্থাটির তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে জুন ২০১৭ পর্যন্ত একই সময়ে ২৪৫ জন শিশুকে হত্যা করা হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও আইনবিদরা বলছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়, রক্ষণশীলতার ঘাটতি, পর্নোগ্রাফি এবং কিছু পুরুষের মানসিক বিকৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। শিক্ষা ও চাকরিসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আগের তুলনায় নারীরা তুলনামূলক বেশি প্রকাশ্যে। একই সঙ্গে সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে বিরাজ করছে নিরাপত্তাহীনতা। মানসিক রোগাক্রান্ত কিছু পুরুষ এ পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে নারী ও শিশু। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া, পুলিশে ধরলেও জামিন পাওয়া এবং ধর্ষকদের উপযুক্ত চিকিৎসা না হওয়ায় ধর্ষণের ঘটনায় নিরুৎসাহিত না হয়ে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছে। এমন প্রতিক্রিয়া দেশের বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আইনবিদ, অপরাধ ও সমাজবিজ্ঞানীদের। তারা ধর্ষণের ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রকৃত সত্য তুলে আনতে হবে। এর নিরিখে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বাবা-মা, জনপ্রতিনিধি, সমাজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ সর্বোপরি সরকারকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে না পারলে দেশের অগ্রগতি থেমে যাবে। এদিকে, এ জাতীয় যৌন সন্ত্রাসের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক নেমে এসেছে কর্মজীবী নারী-শিশু ও ছাত্রী-শিক্ষিকা ও গৃহবধূদের মাঝে। শুধু যে রাতের আঁধারে নির্জন রাস্তায় নারীর সম্ভ্রমই লুট করা হচ্ছে- তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তচিন্তার নিরাপদ পরিবেশেও উচ্চ শিক্ষার্থী নারীও নিরাপদবোধ করতে পারছেন না। অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন- এ জাতীয় অপরাধ আগেও ঘটত। এখন তার কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকাশও পাচ্ছে ব্যাপক হারে। এজন্য দায়ী অনেকগুলো বিষয়। আর অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করায় ঘৃণিত এই সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিরোধ না করা গেলে সামনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।