রাকিব হোসেন ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ
শেখ মুজিব বাঙালির মহাপ্রাণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে এমনভাবে উজাড় করে দিয়েছিলেন মানুষের জন্য যে, তাঁকে সবাই ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেন। বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে জাতির জনক শেখ মুজিব তাঁর নিজের নামের চেয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামেই সবার কাছে পরিচিত। যেভাবে এই শব্দের মুকুট তাঁকে দেয়া হলো, সে ইতিহাসের পেছনের মানুষ বরাবরই অন্তরালে থেকে গেছেন। প্রায় পাঁচ হাজার দিন কারাগারে কাটিয়েছেন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা– জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। মূলত বাঙালির অধিকার, দাবিদাওয়া আদায়সহ স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়তেই বার বার জেল খেটেছেন তিনি। তাঁর কারাবাস ছিলো জীবনের চার ভাগের প্রায় এক ভাগসমান। এমন ত্যাগী নেতা ছাড়া আর কে হতে পারেন বাংলা ও বাঙালির বন্ধু? সেই চিন্তা থেকেই ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবের হাতে গড়া ছাত্রলীগের মধ্যসারির এক নেতা তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়ার চিন্তা লিখিত আকারে প্রথম প্রকাশ করেন। ১৯৬৮ সালের ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চোধুরী মোশতাক বলেন, “৮ আগস্ট ১৯৬৮-তে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে যে ট্রায়াল চলছিলো, সে ট্রায়ালে আমি তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। তারপর থেকেই আমার মাঝে একটি তাড়না কাজ করেছিলো, শেখ মুজিবুর রহমানকে একটি সুন্দর শ্রুতিমধুর উপাধি দেয়ার। নভেম্বরে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি বুলেটিন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি আর শেখ কামাল। সেখানে দয়ার জন্য একটি আর্টিকেল লিখলাম। সেই আর্টিকেলের শেষে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি লিখেছিলাম।’ ১৯৬৮ সালের ঢাকা কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড বর্ণনা করতে গিয়ে একটি চার পৃষ্ঠার বুলেটিন ছাপানো হয়। চতুর্থ পৃষ্ঠায় ছয় দফার বর্ণনা ছিল যার হেডিং ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর দেওয়া ছয় দফা কর্মসূচি। সেখানেই বঙ্গবন্ধু শব্দটি প্রথম ছাপা আকারে পাওয়া যায় ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে।” সেই লেখা মানুষের কাছে যত টানা প্রচার পেয়েছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে বিষয়টি উঠে এসেছে আরো প্রায় এক বছর পর। ১৯৬৯ সালে যখন ছাত্রলীগের তুখোড় নেতা ও তৎকালীন সভাপতি তোফায়েল আহমেদ নিজে এক সভামঞ্চ থেকে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু বলে সম্বোধন করে প্রথম ঘোষণা করেন। সাবেক ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ জানান, “কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ঋণের বোঝা হালকা করতে চায় । আমি যখন জাতির পক্ষ থেকে প্রিয় নেতাকে উপাধি দিতে চাই, তখন ১০ লক্ষ লোক হাত উত্তোলন করলো। আমি তখন ঘোষণা করলাম, এবার বক্তৃতা করবেন আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।” যাঁরা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর ছিলেন, তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মী ছিলেন, কাছ থেকে তাঁকে দেখবার, বুঝবার সুযোগ হয়েছিলো, তারা আজও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন বিশাল হৃদয়ের সেই মানুষটির অমুল্য অবদান স্মরণ করে। ১৯৬৮ সালের ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চোধুরী মোশতাক বলেন, “যখন বঙ্গবন্ধু নামটি উচ্চারিত হয়, সাথে সাথে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। কারণ এ নামটি আজকে সারা বাঙালি জাতিসত্তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার প্রতীক হয়েছে। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবকে দেয়া বঙ্গবন্ধু উপাধি ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানান ঐতিহাসিক দলিলে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। কেন-না, বঙ্গবন্ধুর নামেই লক্ষ-কোটি বাঙালি, বাংলাদেশের মানুষ নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৭মার্চ২০১৮/ইকবাল