খুলনা শহরের রাস্তা-অলিগলি এমনকি রাজপথেও ময়লা-আবর্জনা ফেলার প্রবণতা শুধু পরিবেশ নয়, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগবালাই এবং বায়ু-পানি-মাটিদূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছড়িয়ে পড়ছে। সুস্থ জীবন ধারণে প্রয়োজনীয় নির্মল পরিবেশ থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা থেকে এলাকাবাসীকে বিরত রাখার বিষয়ে সচেতন করতে আমাদের আজকের পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
আজ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সকাল ০৮.০০ টায় দৌলতপুর রেলস্টেশন ও মহসিন মোড় কাঁচাবাজারে ‘এলাকাবাসীর উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মসূচি থেকে বক্তারা এ কথা বলেন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানের সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মনিরা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা দলের দলনেতা নূর ইসলাম, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক শাজাহান হাওলাদার এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো: ইমরান মিয়া। কর্মসূচি থেকে এলাকাবাসী ও দোকানীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ১,২,৩,৪,৫,এবং ৬ নং ওয়ার্ডের অর্ধশতাধিক এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা বলেন, শহরবাসী নিজের এলাকা নিজে পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নিলে সবাই আগ্রহের সাথে এগিয়ে আসবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জণগণের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরী কারণ অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে খুলনার বসবাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। প্লাস্টিক-পলিথিন-রাসায়নিকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট এবং জলাশয় দূষিত করছে। এ ধরণের দূষণ জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজর দিলে খুলনার দূষণ হ্রাসে অবদান রাখা সম্ভব হবে।
বক্তারা আরো বলেন, শিশু-কিশোরদের যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত রাখতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা যেতে পারে। আমরা খুলনাবাসী চাইলেই নিজ উদ্যোগে নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি। এজন্য নিজেদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। ভবিষ্যতেও আমরা আজকের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেবো, যাতে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। আজকে থেকেই নিজেদের গৃহস্থালীর আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ফেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
কর্মসূচি থেকে এলাকাবাসীর প্রতি ময়লা-আবর্জনা নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলা; গৃহস্থালী বর্জ্য রাস্তায় ফেলা থেকে বিরত থেকে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা; সন্তানদের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে অভ্যস্ত করা; জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে ড্রেন ও সুয়ারেজ লাইনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকা; ময়লা-আবর্জনা সঠিক জায়গায় ফেলতে সবাইকে সচেতন করা; প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করা; এলাকায় কোথাও আবর্জনা জমে থাকলে তা পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়। সেই সাথে দোকানীদের প্রতি দোকানের সামনে একটি ঝুড়ি বা ময়লা ফেলার পাত্র রাখা; ক্রেতাদের ময়লার পাত্রে ময়লা ফেলতে উৎসাহিত করা; রাতে দোকান বন্ধের পূর্বে নিজ দোকানের সামনে ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করা; প্রতিদিনের আবর্জনা স্থানীয় নির্দিষ্ট আবর্জনা ফেলার স্থানে ফেলার আহ্বান জানানো হয়।