October 9, 2024, 2:22 am

সংবাদ শিরোনাম
প্রশাসন সংস্থা ব্রিটিশ আইনের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা চলতে পারে না-পর্ব ৭ মাতৃভূমির এক ইঞ্চি জমি ছাড় দেওয়া হবে না, পর্ব ৬ স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি রক্ষা করতে হলে প্রতিটি ঘরে সেনাবাহিনী তৈরি করতে হবে(পর্ব-৫) আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ভোলা বোরহানউদ্দিনে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেডের দাবিতে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে বগুড়ায় বিএনপির মতবিনিময় সভা!

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ব্যাপক চাঁদাবাজি, নেতৃত্বে এমপি শিমুলের ভাই পলাশ !

রুহুল আমীন খন্দকার, ব্যুরো প্রধান :

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরটিতে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে স্থলবন্দরে পণ্য আনলেই এখন ট্রাক গুণে চাঁদা তোলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এর নেতৃত্বে রয়েছেন সোহেল আহমেদ পলাশ নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয় এমপি ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের ভাই। তবে সোহেল আহমেদ পলাশ বন্দরে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আনা এক ট্রাক পণ্যের জন্য চাঁদা দিতে হয় ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। আগে চাঁদাবাজি থাকলেও সেটাছিল কম। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডা. সামিল উদ্দিন শিমুল এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তার ভাই পলাশ। এর পর থেকেই বেড়ে গেছে চাঁদার পরিমাণও।চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাইরের ব্যবসায়ীদের চাঁদার পরিমাণ আরও বেশি। শুধু ব্যবসায়ীদেরই নয়, চাঁদা দিতে হয় শ্রমিকদের কেউ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।এদিকে আমদানি-রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে একাধিকবার প্রতিবাদ করেও কোন প্রতিকার পাননি। উল্টো হামলা-মামলার শিকার হতে হয় তাদের। ইতোমধ্যে আমদানিকারক সুলতান মাহমুদ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রেজাউল করিম, শ্রমিক সংগঠনের সহ-সভাপতি জেম বাবুসহ আরো অনেকে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের গত (১০ এপ্রিল) রাত্রে সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকার তালতলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে এমপির ভাই পলাশের পেটোয়া বাহিনীর অতর্কিত হামলার শিকার হন আমদানিকারক সুলতান মাহমুদ। পরে তাকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে ওই রাতেই একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ব্যবসায়ীরা। এরপর শিবগঞ্জ থানার সামনে সমাবেশ করেন সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।একের পর এক এমপির ভাই পলাশের বিভিন্ন প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডে শিবগঞ্জে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ নজমুল কবির মুক্তা ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টুটুল খানও অংশ নিয়ে ছিলেন। পরে হামলার শিকার সুলতান মাহমুদ শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সেই সময় অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে পুলিশ এমপির ভাইয়ের নাম মামলার এজাহারে নেয়নি। তাকে ছাড়াই অন্যান্যদের মামলায় আসামি করা হয়েছে। বাদী সুলতান মাহমুদ বলেছেন, এমপির ভাইয়ের নির্দেশেই তার ওপর হামলা হয়েছিল।এ ব্যাপারে মেসার্স বন্ধু এন্টারপ্রাইজের সত্বাধীকারী সুলতান মাহমুদ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, পলাশের নেতৃত্বে থাকা একদল চাঁদাবাজকে আমার পাথর ভর্তি দশ চাকার ট্রাক থেকে ৫৫০ টাকা ও ছয় চাকার ট্রাক থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাকে বলে এককালীন দশ লাখ টাকা দিতে হবে। এর প্রতিবাদ করায় পলাশের হুকুমে সেতাউর হাজির নেতৃত্বে একদল চাঁদাবাজ সেই সময় আমার ওপরে হামলা চালিয়ে মারপিট করে। স্থলবন্দরে এখন আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি, আমাদের এই দুঃখ দেখার যেন কেউ নেই। আমরা অতিদ্রুত মাননীয় মাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহোদয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।এ দিকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, করোনার কারণে কিছু দিন আগে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিলো। কয়েকদিন আগে আবার শুরু হয়েছে সেইসাথে শুরু হয়েছে আবারও চাঁদাবাজি। এর নেপথ্যে রয়েছে এমপির ভাই পলাশ এবং স্থানীয় জামায়াত-বিএনপির ক্যাডার সেনাউল, সোহবুল, শ্রমিক সমন্বয় কমিটির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম মাস্টার, আয়েশ সর্দারসহ কিছু সংখ্যক অর্থলোভী আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় একটি চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট তৈরী করেছেন। তাদেরকে যথারীতি ট্রাক প্রতি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা করে চাঁদা জমা দিতে হচ্ছে, নচেৎ বিভিন্ন অজুহাতে মামলা-হামলার শিকার হতে হবে।অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বন্দরে ৩১টি শ্রমিক সংগঠন আছে, এসব সংগঠনের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি রয়েছে। সেই কমিটির সভাপতি সাদিকুল মাস্টার ৩১টি শ্রমিক সংগঠন থেকে চাঁদা তোলেন। এর মোটা একটি অংশ যায় পলাশের পকেটে। পাশাপাশি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পলাশের হাতে তুলে দেন। কেউ চাঁদা না দিলে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয় তাদের। বন্দরের শ্রমিক লাল মোহাম্মদ বলেন, আমরা এখানে সারাদিন ঘাম ঝরিয়েও ঠিকমতো পারিশ্রমিক পাই না। সাদিকুল মাস্টার, সেনাউল মেম্বার ও মুখলেশ সর্দার আমাদের নায্য পাওনার টাকাগুলো হাতিয়ে নিচ্ছেন। পলাশের কারণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, একের পর এক এমপির ভাইয়ের চাঁদাবাজির কারণে শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তবে শ্রমিক সমন্বয়ের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুখলেস সর্দার বলেন, যারা এসব অভিযোগ করেছে তারা আমাদের সংগঠনের কেউ না। তাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বলেন, কিছু সমস্যার কারণে আমরা বলে দিয়েছি যার যার লাইসেন্স আছে নিজে নিজে ব্যবসা করবে। আমাদের আর অ্যাসোসিয়েশনের দরকার নাই। তাই এখন কোনো চাঁদা তোলা হয় না। কেউ এখন বলে থাকলে ভুল বলেছে।এ বিষয়ে এমপির ভাই সোহেল আহমেদ পলাশ বলেন, সোনামসজিদ বন্দরে আমি ২০ বছর ব্যবসা করেছি। আমার ভাই এমপি হওয়ার পর দেড় বছর ধরে বন্দরে যাই না। নিজের অফিসটাও কর্মচারীরা চালায়। তাহলে চাঁদা উঠালাম কীভাবে! আমি যদি চাঁদাবাজিতে যুক্ত থাকতাম, তাহলে তো বন্দরে যেতাম। তিনি আরো বলেন, যারা অভিযোগ ছড়াচ্ছে তারা এমপি বিরোধী লোক। এমপির সঙ্গে তাদের দ্ব-দ্ব আছে বলেই আমাকে জড়ানো হচ্ছে।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১১ জুন ২০২০ /ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর