আনু আনোয়ার,পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
বিয়ের প্রলোভনে পড়ে হিন্দু যুবকের প্রতারনার ফাঁদে পা দিয়ে ঘর পালানো মুসলিম স্কুল ছাত্রী সোনিয়ার স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থেমে গেছে। ওই ঘটনার কথা মনে হলেই আতৎকে উঠছে। একদিকে প্রেমিকার প্রতারণা অপরদিকে জিম্মি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার নাটকীয়তার ভয়ে ঘুমাতে পারছে না। লোক লজ্জার ভয়ে স্কুল ছেড়ে দিয়ে নিরবে নিভৃতে চোখের পানি জড়াছে। বিয়ের প্রলোভনে হিন্দু যুবকের সাথে ঘর বাধার স্বপ্নে বিভোর সোনিয়া এখন পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে মুখ দেখাতে পারছে না। গত ২৬ আগষ্ট (সোমবার) প্রেমিক হ্নদয় হালদারের সাথে ঘর ছেড়ে কুয়াকাটায় এসে আবাসিক হোটেল আল মামুন ৪০৪ নম্বর কক্ষে ওঠে সোনিয়া। হোটেলে অবস্থানের এক পর্যায়ে সোনিয়াকে হোটেল কক্ষে তালাবদ্ধ রেখে সটকে পড়ে প্রেমিক হৃদয় হালদার। পরে ঘটনাটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কয়েক যুবক তালাবদ্ধ রুম খুলে সোনিয়াকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এঘটনায় সোনিয়ার বাবা ছগির বাগার মোটরসাইকেল বাহিনীর ক্যাডার চরচাপলীর সাগর মৃধাসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মহিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামী প্রতারক প্রেমিক হৃদয় হালদারকে মঙ্গলবার আটক করেছে পুলিশ। পরিবারের সম্মান বাচাঁতে হিন্দু ছেলের সাথে মেয়ের পালিয়ে আসার ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিয়ে শুধু মাত্র টাকা ছিনতায়ের অভিযোগ এনে মহিপুর থানায় এজাহারভুক্ত করেন অটোরিক্সা চালক বাবা ছগির বাগার। সোনিয়া পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনয়নের সোনাতলা গ্রামের ছগির বাগার মেয়ে। সোনিয়া পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেনীতে পড়ে।
সোনিয়া সাংবাদিকদের জানান, একই বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিন্দু যুবক হ্নদয় হালদারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক চলে আসছে গত ৩ বছর ধরে। প্রেমের সম্পর্কের এক পর্যায়ে সোনিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় প্রেমিক হ্নদয় হালদার। সোনিয়াও বিয়ে করতে রাজি কিন্তু বাধঁ সাধে ধর্ম। এমন টানা পোড়নের এক পর্যায়ে হ্নদয় হালদার সোনিয়াকে জানায় সে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে সোনিয়াকে বিয়ে করবে। এরই প্রেক্ষিতে ২৬ আগষ্ট (সোমবার) সকালে স্কুলে যাবার কথা বলে পরিবারের অজান্তে ঘরে থাকা দেড় লাখ টাকা নিয়ে প্রেমিক হ্নদয় হালদারের সাথে ভাড়াটিয়া মটর সাইকেল যোগে কুয়াকাটা সৈকতে গিয়ে পৌছায়। সৈকতে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি শেষে মটর সাইকেল চালক রাসেলের সহযোগিতায় বেলা ১১টার দিকে হোটেল আল মামুনের চতুর্থ তলায় ৪০৪ নম্বর কক্ষে ওঠেন সোনিয়া ও হ্নদয়। হোটেলে সময় কাটিয়ে সন্ধায় পরিবহন যোগে ঢাকায় পাড়ি দিবেন দুজনে এমনটাই কথা ছিল। ঢাকায় গিয়ে হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে সোনিয়াকে বিয়ে করবে প্রেমিক হ্নদয়। হোটেল কক্ষে দুজনে প্রায় আধা ঘন্টা অবস্থানও করেন। এরপর প্রেমিক হ্নদয় হালদার সোনিয়াকে হোটেল কক্ষে তালাবদ্ধ রেখে পালিয়ে যায়। এরপরই সাগর মৃধাসহ ৪যুবক রুমের তালা খুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাথে থাকা দেড় লাখ টাকা নিয়ে যায়। ওইদিন দুপুরে ট্যুরিষ্ট পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সোনিয়ার জবানবন্দি অনুযায়ী সাগর মৃধাকে খবর দিয়ে নিয়ে আসলে সোনিয়া সাগর মৃধাকে চিহ্নিত করেন। এ সময় দেখা যায় সোনিয়া ও হ্নদয় হালদারের নামে হোটেল রেজিষ্টারে কোন রুম বুকিং নেই। সোনিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। মহিপুর থানা পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোনিয়াকে ওইদিন রাত আটটার সোনিয়াকে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনার একদিন পর মঙ্গলবার রাতে মামলা নেয়া হয়। তবে মামলার এছাহারে পুরোঘটনাটি এড়িয়ে গিয়ে স্কুল পড়–য়া পর্যটকের টাকা ছিনতাই উল্লেখ করায় কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেন এ ঘটনায় কুয়াকাটার উপর বিরাট প্রভাব পড়বে। মুল ঘটনাটিকে মামলার এছাহারে স্পট করা উচিত ছিল।
এ বিষয়ে মহিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. সোহেল আহম্মেদ জানান, মামলার এছাহারভূক্ত আসামী হ্নদয় হালদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৩০ আগস্ট ২০১৯/ইকবাল