বাংলাদেশী পাসপোর্টে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টায় রোহিঙ্গারা
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
s
বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা। এর আগে কমপক্ষে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গা রয়েছে। বিদেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এবং তাদের অপরাধের দায় বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা এমন ৭ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরই প্রশাসনের সর্বস্তরে কঠোর নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নির্যাতনের মুখে গত দুই দশক ধরেই পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছে। গত এক বছর আগে তাদের অনেকেই সাগরপথে মালয়েশিয়ায় গেছে। অতীতেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে এসে বাংলাদেশী সেজে পাসপোর্ট করে সুযোগ বুঝে মধ্যপ্রাচ্যে চলে গেছে। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই সুযোগ মতো বিদেশে পাড়ি দেয়ার কৌশল নিচ্ছে। তাদেরকে সহযোগিতা করছে এক শ্রেণীর দালাল। দালালদের মাধ্যমে জন্মসনদ নিয়ে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করছে। তাছাড়া অতীতে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের অনেকেই স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশে গেছে। স্থানীয় ভাষা এবং চেহারায় যথেষ্ট মিল থাকার ফলে কক্সবাজারের বাসিন্দাদের থেকে তাদের আলাদা করা কঠিন। মালয়েশিয়ায় যাওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পরিচয়ে সেখানে অবস্থান করছে। সাম্প্রিিতক সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে অনেক রোহিঙ্গা আটক হয়। তাছাড়াও প্রতি বছর হজ মৌসুমে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে পাড়ি দিচ্ছে। আবার অনেকেই ওমরাহ ভিসায়ও যাচ্ছে। সৌদি সরকার আকামা (কাজ করার অনুমোদন) দেয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের পপ্রতি সদয় হওয়ায় সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে তারা। শুধু সৌদি আরবেই এখন প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীও রয়েছে।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সামজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বিশাল সমস্যা। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হলেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। তাই কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের জন্যেও জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি পুলিশ ভেরিফিকেশনে কঠোর হতে বলা হয়েছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে সংশ্নিষ্টদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে আগে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা হলেও এখন অন্যান্য বিভাগেও একইভাবে দেখতে বলা হয়েছে। কারণ রোহিঙ্গারা এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও আত্মীয়তা সৃষ্টি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার পর বাংলাদেশে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেই অন্যান্য বিভাগে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সময়ে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেও ধরা পড়ছে। ফলে তারা বিভিন্ন কৌশলে পাসপোর্ট তৈরির সুযোগ নিতে পারে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের পাশাপাশি যে কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা শুধু পর্যটন জেলা কক্সবাজারের নয়, গোটা বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ব্যাপারে এখনই লাগাম টেনে ধরতে হবে। তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি জোরদার এবং নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে চলাচলে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রতিরোধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আদিল চৌধুরী জানান, দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। তাদের যে কোনো অপকর্ম বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, অতীতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি না থাকায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের অনেকেই ওই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। এখন আর সেটি করা সম্ভব হবে না। রোহিঙ্গাদের কেউ সন্ত্রাস ও সমাজবিরোধী কাজ করলে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইতিমধ্যে এই বার্তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রচার করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা যাতে পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিষয় কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।