ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
১৪ বছরের কিশোরী মনিরা মহন্ত। নিরাশ্রয় হয়ে ঘুরেছে আশ্রয়ের আশায়। স্বজনদের কাছেও মিলেনি আশ্রয়। স্বজনসহ প্রতিবেশীরাও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ বিষয়টি গণমাধ্যমের দৃষ্টিগোচর হয়। দৈনিক প্রথম আলোর বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি মামুনুর রশিদের পাঠানো তথ্যে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘মেয়েটি এখন যাবে কোথায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর থেকেই সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নজরে আসে বিষয়টি। অবশেষে ‘মাইনোরেটি ওয়াচ’ নামক একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়নের প্রতিষ্ঠিত মানব কল্যাণকামী অনাথালয়ে মঙ্গলবার(১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আশ্রয় মিললো কিশোরী মনিরা মোহন্তের।
মঙ্গলবার সকালে নওগাঁ থেকে মনিরা মোহন্তকে মাইনোরিটি ওয়াচের সহসভাপতি টি. কে. পাণ্ডে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে অবস্থিত মানব কল্যাণকামী অনাথালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়নের কাছে তাকে বুঝিয়ে দেন।
মনিরা মোহন্ত জানায়, আমার রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের কাছে আশ্রয় না পেলেও এই আশ্রমে আশ্রয় পেয়ে আমি আনন্দিত। এই আশ্রমই এখন আমার পরিবার। আমি এখানে থেকে পড়াশোনা করে অনেক অনেক বড় হতে চাই।
মাইনোরিটি ওয়াচের সহসভাপতি টি. কে. পাণ্ডে বলেন, নিরাশ্রয় অসহায় এই মেয়েটির জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে আমরা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় মানব কল্যাণকামী অনাথালয়ের সন্ধান পাই। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করে সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে মনিরাকে তাঁর কাছে বুঝিয়ে দিই। মনিরার বিবাহের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মাইনোরিটি ওয়াচ মনিরার অভিভাবক হিসেবে দায়-দায়িত্ব পালন করবে।
উল্লেখ্য, ১৪ বছর বয়সের কিশোরী মনিরা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের হুলিখালী গ্রামের স্বপন কুমার মোহন্তের মেয়ে। বাবা স্বপন কুমার মোহন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কীর্তণ গাইতেন। তার মা বুলবুলি রাণী মোহন্ত ছিলেন গৃহিণী। ২০০৮ সালে বুলবুলি রানী মোহন্ত পরকীয়া প্রেমের জের ধরে ধর্মান্তরিত হয়ে এলাকার এক মুসলমান ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তখন মনিরার বয়স ছিল পাঁচ বছর। এরপর ক্ষোভে বাবা স্বপন কুমার মোহন্ত নিরুদ্দেশ হন। দিদিমা (নানি) বিনার (৬৭) কাছে কিছুদিন ছিল মনিরা। পরে উত্তম রায় নামের নওগাঁ শহরের একজন ব্যবসায়ী মনিরাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে বেড়ে ওঠে সে। উত্তম রায়ের বাড়িতেই সে কাজ করত। সম্প্রতি উত্তম রায়ের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিনি মনিরাকে তার বাড়িতে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ১৪ হাজার টাকাসহ মনিরার নিজ বাড়ি হুলিখালীতে তাকে পাঠিয়ে দেন। হুলিখালীতে গিয়ে মনিরা তার বাবা-মায়ের খোঁজ শুরু করে। ওই দিন বিকেলে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সে মায়ের কাছে যায়। উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের লাউবাড়িয়া গ্রামে তার মা ঘর-সংসার করছেন। সেখানে তার মা তাকে আশ্রয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে মনিরা তার দিদিমার (নানি) আশ্রয়ে থাকতে চাইলে তার দিদিমাও তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। কারণ তিনি নিজেই অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা। এরপরই বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে।