নাসির উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
জুলাই আন্দোলনের কর্মী পরিচয়ে পরিচিত আল মাহমুদ ওমর। অন্যজন আইমান তাকিব—সাবেক ছাত্রশিবির কর্মী, এখন রাজনীতির বাইরে। দু’জনই তরুণ, এলাকার চেনা মুখ। ঈদের তৃতীয় দিনে নিজের স্কুলের রি-ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলেন পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে। পুরোনো দিনের গল্পে ভরা সেই মিলনমেলা শেষ হলো রক্তাক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে।
পুরনো অভিমান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি আইডিয়াল ল্যাবরেটরি স্কুলের সেই অনুষ্ঠানে আইয়ুব আলী নামের এক সাবেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ওমরের দীর্ঘদিনের ক্ষুদ্র দ্বন্দ্ব নতুন করে তীব্র হয়। “সিনিয়রকে সালাম না দেওয়া”– এমন তুচ্ছ অভিযোগকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় তর্কাতর্কি। একপর্যায়ে আইয়ুব আলী ও তাঁর সহযোগীরা ওমরকে হুমকি দেন—পোস্ট না মুছলে “হাত-পা গুড়িয়ে দেওয়া হবে।
”মিছিলে শেষে প্রথম ধাক্কা ৫ জুলাই—জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিন। হাজিরহাট বাজারে মিছিল শেষে বিক্রমপুর ক্রোকারিজের সামনে ওমর ও আইমানকে ধরে ফেলেন আইয়ুব আলী। কথার অবকাশ না রেখেই প্রথমে ওমরকে ঘুষি মারেন, থামাতে গেলে আইমানও ঘুষির শিকার হন। উপস্থিত লোকজনের হস্তক্ষেপে প্রথম দফার সংঘর্ষ থামে বটে, কিন্তু বিপদ শেষ হয়নি।সিটি বেকারির সামনে অতর্কিত আক্রমণ কয়েক মিনিট পর বাসার পথে সিটি বেকারির কাছে পৌঁছাতেই ১০–১৫ জনের একটি দল ওমর ও আইমানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মারধর করতে করতে তাঁদের টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ‘জায়েদ টেলিমিডিয়া’ নামের একটি ঘরে। সেখানে আইমানের গলা চেপে ধরা হয়, আর ওমরের গলায় ধারালো ব্লেড চালানোর চেষ্টা হয়। শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় গলা না কেটে ওমরের বুকে কেটে যায়।এই ভয়াবহ দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় ধরা পড়ে, পরে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে।
রাজনীতির ছায়া এরপর গল্পের মোড় ঘুরে যায়। হামলার পর দুই তরুণের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয় ছাত্রলীগের ট্যাগ। থানায় সোপর্দ করা হয় তাদেরকেই।
আইমানের মা, সাবেক মহিলা জামায়াত নেত্রী উম্মে কুলছুমের ক্ষোভ, “যে দলের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেই দলই আজ আমার ছেলেকে ছাত্রলীগ বানিয়ে পুলিশের হাতে দিয়েছে।”জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে পরিচিত ওমর স্থানীয় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি।
তাঁর পরিবারও স্থানীয়ভাবে সম্মানিত—জগবন্ধু মাতাব্বর বাড়ির বড় ছেলে তিনি।নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাউপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, “দু’পক্ষই আমাদের লোক। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমরা পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।”
কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, “দু’পক্ষের মারামারির ঘটনায় দুইজনকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে রাতেই জামায়াতের লোকজন এসে তাদের ছাড়িয়ে নেয়।”রি-ইউনিয়নের পরের অস্থিরতাপুরোনো বন্ধুদের পুনর্মিলনী যে একদিনের আনন্দে শেষ হবে—সে আশা করেই সবাই এসেছিল। কিন্তু একটি অবহেলিত সালাম থেকে শুরু হওয়া বিরোধ গড়াল রক্তাক্ত হামলায়, ছড়িয়ে পড়ল রাজনীতির গুজব। কমলনগরের মানুষ এখনো অবাক—একটি তুচ্ছ অভিমান যে এত বড় সহিংসতার জন্ম দিতে পারে, কে ভেবেছিল!