সজিব তুষার
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী রইছ উদ্দিন শ্যামল, যিনি বাবু নামেও পরিচিত। এক সময় ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে জীবন যাপন করতেন। কিন্তু বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরে তার তিনটি বাড়ি এবং একটি টয়োটা প্রিমিও প্রাইভেট কার রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর নামে তিনি নগরীতে একটি পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য তিনি একটি সাততলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যেখানে তিনি নিজেও বসবাস করছেন।
প্রথমে সরকারি বিদ্যালয়ের পিয়ন পদে চাকরি করা বাবু,পরে মাউশি অফিসে কম্পিউটার অপারেটর পদে পদোন্নতি পেয়ে যান। এরপর থেকেই তিনি আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। তিনি শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তির ফাইল গুলোতে দুর্নীতি করা আরম্ভ করেন।
বিভিন্ন ত্রুটির সুযোগ নিয়ে, তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন।
বাবুর জমি ও বাড়ির মালিকানার বিষয়ে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ শহরের গোয়াইলকান্দি এলাকায় তার প্রথম স্ত্রীর নামে নির্মিত পাঁচতলা বাড়িটি ৭-৮ বছর আগে ২ কোটি টাকায় নির্মিত হয়। বাদেকল্পা এলাকায় ৬ শতাংশ জমিতে নির্মিত সেই সাততলা বাড়ির তৃতীয় তলায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী বসবাস করছেন। এর পাশেই ১৩ শতাংশ জমিতে একতলা বাড়ি এবং আরও দুটি প্লট রয়েছে বাবুর নিজ নামে।
বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে— শ্বশুরের জায়গা কিনে স্ত্রীর নামে বাড়ি বানালেও, শ্বশুরের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বাবু তার শ্বশুর নজরুল ইসলামের কাছ থেকে ৪ শতাংশ জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেন, তবে শ্বশুরের দাবি অনুযায়ী, নিচতলার অংশ তাকে দেওয়া হয়নি। শ্বশুর নজরুল বলেন, ‘‘আমি যখন তাকে তদবির করে চাকরি পাইয়ে দিয়েছি, তখন আমাদের পরিবার ছিল খুব কষ্টের মধ্যে । বাবু বলেছিলেন, জমি বিক্রির পর নিচতলা সে আমাকে দেবে, কিন্তু সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়ে পরে সে কথা রেখেনি। জামাই হওয়ার সুবাদে তাকে কিছু বলতে পারিনি’’
স্থানীয় বাসিন্দা নূরুল আলম বলেন, ‘‘বাদেকল্পা এলাকায় সাততলা কোন বাড়ি প্রথম বারের মতো বাবুই নির্মাণ করেছিলো। উক্ত এলাকার লোকজনের মনে প্রশ্ন তিনি পিয়ন পদে চাকরি করে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন ? শুধু সাততলা বাড়িই নয়, পাশেই আরেকটি একতলা বাড়ি ও কয়েকটি প্লটও রয়েছে। সম্প্রতি ৫০ লাখ টাকায় ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন তিনি।’’
এছাড়া, মাউশি অফিসে কর্মরত এক শিক্ষক জানিয়েছেন, বাবুকে একটি এমপিও ফাইল দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তাকে ১লাখ টাকা দিতে হয়েছে। টাকার বিনিময়ে অবশ্য ফাইলটির সব কাজ দ্রুতই সমাধান হয়ে যায়।
বাড়ি ও গাড়ির মালিক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাবু বলেন, ‘‘কত সাংবাদিক এসেছেন আমার কিছুই হয়নি, আর কিছু করা সম্ভবও হবে না। দুদক আমাকে ডেকেছিল, কিন্তু আমি তাদের কাছে সব হিসাব পরিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছি, তাই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। এসব সম্পত্তি আমার বাবার, আর বাবার মানে আমার, আমি তার একমাত্র ছেলে।’’
মাউশি ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক রওশন আরা খান বলেছেন, ‘‘সম্পদ লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। যদি বাবু সরকারী সম্পদের বিবরণী ফরম পূরণ করেন, তা হলে তার সব কিছু সামনে চলে আসবে। যদি তা অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।