নিজস্ব প্রতিবেদক-সিলেট ঃ
অবশেষে নিখেঁজের ৭ দিন পর মিলেছে সিলেটের কানাইঘাটের পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের মরদেহ। মুনতাহার প্রতিবেশী ও সাবেক গৃহশিক্ষিকা,তার মা,ও নানী তিনজন মিলেহত্যা করে মুনতাহাকে। হত্যার পর মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেন তারা। রোববার ভোর রাতে মাটিতে পুঁতে ফেলা মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলার সময় হাতেনাতে গৃহশিক্ষিকার মাকে আটক করে স্থানীয়রা। এ সময় গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় মুনতাহার লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
এ ঘটনায় মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া,তার মা আলিফজান বিবি,ও নানী কুতুবজান বিবিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।এরপর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- নিজাম উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, আটককৃত তৃতীয় ব্যক্তির পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। ।
৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর রোববার (১০ নভেম্বর) ভোর চারটার দিকে মুনতাহার নিজ বাড়ির পুকুরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের ধারণা, পূর্ব শত্রুতার জেরে মুনতাহার সাবেক গৃহ শিক্ষিকা তাকে অপহরণ করে হত্যা করেন।প্রতিবেশি ও মুনতাহার শিক্ষক সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল তার পরিবারের উপর। এছাড়া মার্জিয়ার উপর চুরির অপবাদ দেওয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকন্ড ঘটতে পারে।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, গত রাতেই (শনিবার) সন্দেহবশত আমরা মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা ধরে নিয়ে আসি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিলো। তখন হাউস টিউটরের বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য রাতেই আমরা মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের বলি।
তিনি বলেন, ভোরের দিকে মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাড়ির পাশের একটি ছড়ার মাটি খুঁড়ে মুনতাহার মরদের পাশের পুকুরে ফেলে দেন ওই হাউস টিউটরের মা আলিফজান বিবি। সাথেসাথে স্থানীয়রা আলিফজান বিবিকে আটক করে আমাদের খবর দেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং গৃহশিক্ষিার মা ও তার নানিকে ধরে নিয়ে আসি।
মুনতাহা চাচা কয়সর আহমেদ জানান, মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া পুর্ব শত্রæতার জেরে অপহরণ করে হত্যা করে। পরে, বাড়ির পাশে ডোবায় কাঁদার নিচে পুঁতে রাখে। ভোরের দিকে দিকে সুমির মা আলিফজান বিবি সেই লাশ সরিয়ে নিতে গেলে জনতার হাতে আটক হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো রফিকুল ইসলাম জানান, মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৩ নভেম্বর রাতেই মুনতাহাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ডোবায় ফেলে রাখা হয়। সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনার সাথে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভোরেই সুমির ঘরব আগুন লাগিয়ে দেন। আর দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে মুনতাহার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, মুনতাহার নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্ঠা করছিল। কিন্তু কোনো ক্ল্যুলু পাচ্ছিল না। শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে করে। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশেপাশে মাটি খোড়া আছে কী না খোঁজ নিতে বলেন।
তিনি বলেন, পুলিশের তথ্যমতে মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা রোববার রাতভর মাটিখোড়া কোনো জায়গা আছে কী না খুঁজতে থাকেন। ফজরের আজানের আগ মুহুর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধাকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখে আটকানো চেষ্টা করেন। এসময় সে দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান।
আটকের পর সে জানিয়েছে, মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিল। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিল।
আফসার উদ্দিন বলেন, মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশি ছিল। একসময় ভিক্ষা করে মার্জিয়ার মা ও নানি। একসময় মুনতাহাকে বাড়িতে পড়াতো মার্জিয়া। মার্জিয়া স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়ায় বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতো। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন।