সানজিম মিয়া – গঙ্গাচড়া প্রতিনিধি
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এক প্রভাবশালী কর্তৃক সুকৌশলে প্রতারণায় ফেলে এক অসহায় দিনমজুরের বসতবাড়ির জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি বাড়ি থেকে জোর পূর্বক জমি দখলের প্রতিবাদ করায় ভুক্তভোগী পরিবারের বৃদ্ধনারীসহ ২ জন নারীকে আহত করেছে সেই প্রভাবশালী মহল। আহতদের হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী দিনমজুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের উত্তরপানাপুকুর কাচারি পাড়ার মৃত তরনী কান্তর পুত্র শ্রী নলিন চন্দ্র (৪৮) তার বসতবাড়ির মাত্র সাড়ে তিনশতক জমিতে বাড়ি করে স্ত্রী-সন্তান ও অসহায় বৃদ্ধ ফুপুকে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করে অতিকষ্টে জীবযাপন করে আসছে।
নলিন ইট ভাটায় দিনমজুর শ্রমিক হিসেবে কাজ করার শুবাদে একই এলাকার প্রভাবশালী মোঃ তারা মিয়ার পুত্র একরামুল হক মামুন তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তার শেষ সম্বল বসতভিটার জমিটুকু কৌশল অবলম্বন করে নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নেন।
অভিযোগকারী নলিন চন্দ্র জানান, মামুন আমার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে আমরা সংখ্যালঘু সে আমার প্রতিবেশী তাই আমি তার সাথে চলাফেরা করতে থাকি কিন্তু তার উদ্দেশ্যে অসৎ ছিলো সেটা আমি বুঝতে পারি নাই। সে প্রথমে ভাল আচরণ করে তার একটি পুরাতন মোটরসাইকেল আমাকে ব্যবহারের জন্য দেয়। আমি কাজ শেষে শখ করে সে মোটরসাইকেলটি চালাতাম। হটাৎ একদিন মামুন বলে মোটরসাইকেলটা তোমাকে একবারে দিয়ে দিলাম, তুমি ৫০ হাজার টাকা আমাকে মোটরসাইকেলের দাম দিবে। আমি টাকা পাব কই বললে সে পরে পরিশোধ করিও আর তা নাহলে এনজিও থেকে লোন নিয়ে দিবো সেখান থেকে আমাকে পরিশোধ করিও।
পরে সে আমাকে এনজিও থেকে লোন করে দেয়ার কথা বলে আমার আইডি কার্ডের ফটোকপি, ছবি ও জমির কাগজপত্রের ফটোকপি নেয়। কিন্তু পরে এনজিওর লোন নিয়ে দেয় নাই এবং আমি মোটরসাইকেলের টাকা নিজের আয় থেকে পরিশোধ করতে পারছিলাম না। এ অবস্থায় সে কিছুদিন পর আমাকে জানায় আমার পাওনা টাকা লাভসহ ১ লক্ষ হয়েছে। এত টাকা দিবো কিভাবে। তখন সে আমাকে বলে তুমি যেভাবে পাও আমার টাকা দ্রুত পরিশোধ করবে। আমি তার চাপে মানসিকভাবে ভেঙে পরি। এর কিছুদিনপর সে আমাকে গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ মাঠে ডাকলে আমি সেখানে চলে আসি তখনই মামুনগং মোটর সাইকেল যোগে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফাকা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়। সে আমাকে দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে বলে এবং যাতে বিষয়টি অন্যকে না জানাই এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।
এর কিছুদিন পর আবার গঙ্গাচড়ায় সাব রেজিস্ট্রার অফিস মাঠে নিয়ে যায় এবং বলে তোমার বসতবাড়ির যে জমি টুকু আছে তা আমি ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিবো তুমি দলিল দাও আমাকে। তোমার কাছে ১ লক্ষ পাবো সেটা বাদ দিয়ে বাকি ৬০ হাজার টাকা দলিলের পর আমি দিবো। আমি বললাম আমার আর কোন জায়গা জমি নাই আমি বাড়ি করে কোথায় থাকবো। তখন সে আমাকে ধমক দিয়ে বলে তোমার থাকার ব্যবস্থা করা হবে, তুমি জমি দলিল করে দাও এবং ৫ বছর ওই জমিতে থাকবে এবং টাকা হলে আমাকে দিলে জমি ফেরত দিবো। এ কৌশলে মামুন তার লোকজন আমাকে নানা ধমক দিয়ে আমার চলতি বছরের ২৪ শে মে বসতবাড়ির জমিটুকু দলিল করে নেয়।
বিষয়টি ভয়ে স্ত্রী বা আত্মীয়কে জানাতে পারি নাই। এমনকি সে ৬০ হাজার টাকাও আর দেয় নাই। পরবর্তীতে সে জমি দখলে নিতে আমার বাড়ির পাশে গাছ লাগিয়ে বেড়া দিতে গেলে সব জানাজানি হয়। আমি কাজের কারণে বাহিরে থাকার সুযোগে সে প্রায় আমার বসতবাড়ি ভেঙে দিয়ে জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। গত ১৬ আগস্ট আমি কাজে বাহিরে থাকার সুযোগে জমি দখলে নেওয়ার জন্য তার লোকজন নিয়ে বেড়া দিতে গেলে আমার স্ত্রী ও ছোট সন্তান বাঁধা দিলে মামুন ও তার লোকজন আমার স্ত্রীকে মারপিট করে শ্লীতাহানী ঘটায়। আমার সাথে থাকা আমার ৯০ বছরের বৃদ্ধ ফুপুকে তাদের কবল থেকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও মারপিট করে আহত করে এবং আমার বাড়ির বেড়া ভাঙচুর করে। স্থানীয় লোকজন আমাকে সংবাদ দিলে আমি দ্রুত বাড়ি যেয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় আমার বৃদ্ধ ফুপু ও স্ত্রীকে গঙ্গাচড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাই। এ ঘটনায় আমি মামুনসহ তার সহযোগী হারুন, তারা, চান, বাদশার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
নলিন আরো বলেন, মাত্র ৫০ হাজার টাকার মোটরসাইকেল আমাকে দিয়ে আমার বসবাসের জমিটুকু লিখে নিলো। এখন জমি দখলে নিতে ভয়ভীতিসহ মারপিট করছে। আমি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে আমার জমি ফেরত চাই। এলাকার বাসিন্দা সোহানা, মিজান, জেসমিন, ফেরদৌস,বকুল, ধরা চন্দ্র, আরতী রানীসহ অনেকে জানান, মামুন গরীবের বসতবাড়ির জমি লিখে নিয়ে অন্যায় করেছে, এখন ওই জমি দখলে নিতে বাড়ি ভাঙচুরসহ তাদের মারপিট করেছে। এটার সঠিকভাবে তদন্ত করে গরীবের জমি ফেরত দেওয়া উচিৎ।
এ ব্যাপারে মামুনের দেখা পাওয়া না গেলেও তার সহযোগি হারুন মিয়া বলেন, নলিন জমি মামুনের কাছে বিক্রি করেছে, সে জমিতে নলিনের বাড়ি থাকায় তার ঘরের পাশ দিয়ে গাছ লাগানো হয়েছে। গাছ সংরক্ষণের জন্য বেড়া দিতে গেলে তারা বাঁধা দেয়। এতে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয় তবে তাদের মারপিট বা বেড়া ভাঙচুর করা হয় নাই।
এব্যাপারে গংগাচড়া মডেল থানার ওসি দুলাল হোসেনের বরাত দিয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ- পরিদর্শক আব্দুর রউফ বলেন, মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।