December 21, 2024, 7:27 pm

সংবাদ শিরোনাম
পার্বতীপুরে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা ২০২৪ অনুষ্ঠিত বাংলাভিশন ডিজিটালের নির্বাহী সম্পাদকের বিরুদ্ধে নাবিলের অপপ্রচারের প্রতিবাদ হিলিতে বিজিবি দিবসে বিএসএফকে মিষ্টি উপহার বিজিবির কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা গ্রেপ্তার পটুয়াখালীতে বাড়ির সীমানা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত-৬ গভীর রাতে আশ্রায়ন প্রকল্পের শীতার্তদের পাশে হাকিমপুরের ইউএনও অমিত রায় যশোরে জামিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার অনুষ্ঠানের ভিডিও নিয়ে তোলপাড় পটুয়াখালীতে রাখাইনদের ধান লুটের ঘটনা মিথ্যে দাবী করে যুবদল নেতার মানববন্ধন ভারত সীমান্তের ইছামতী নদীর তীর থেকে ৩ বাংলাদেশী যুবকের লাশ উদ্ধার সেন্টমার্টিন দ্বীপে শতাধিক ইট-পাথরের স্থাপনা : ২০৪৫ সালের মধ্যেই সাগরে তলিয়ে যাবার আশংকা

জনবলের অভাবে গুণগতমান পরীক্ষা ছাড়াই বাজারে চলছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ

জনবলের অভাবে গুণগতমান পরীক্ষা ছাড়াই বাজারে চলছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

গুণগতমানের কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই বাজারে চলছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ। নিম্নমানের ওসব ওষুধে মারাত্মক ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য। অ্যালোপ্যাথিক, হোমিও, আর্য়ুবেদিক ও ইউনানিসহ দেশে মোট ৭শ’ ১৯টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। ওসব কোম্পানিগুলোর বাজারজাত করা ওষুধের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগেরই মান পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সঙ্কটের কারণে সবগুলো ওষুধের মান পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শুধুমাত্র ওষুধ কোম্পানি তাদের নিজস্ব পরীক্ষাগারে মান পরীক্ষার ওপর নির্ভর করেই ওষুধ বাজারজাত করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বাজারে ১ হাজার ২শ’ প্রকার ওষুধের প্রায় ২৭ হাজার ব্র্যান্ড রয়েছে। তার মধ্যে গত বছর ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ১৯৩টি নমুনা। বর্তমানে পরীক্ষা ছাড়া বাজারে রয়েছে ১৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ। দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসীর সংখ্যা ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৮০টি। তার মধ্যে বিপুলসংখ্যকই অনুমোদন ছাড়া। ওষুধ প্রশাসন মাত্র ৬১ হাজার ৯৪৫টি ফার্মেসী পরিদর্শন করতে পেরেছে। জনবল না থাকায় বাকি ৬১ হাজার ৭৩৫টি পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। শুধু ফার্মেসী মনিটরিং নয়, জনবল সঙ্কটের কারণে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সকল কার্যক্রমে বিঘœ ঘটছে। ২০১৫ সালে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ৯ হাজার ৮১২টি নমুনা পরীক্ষা করলে ১৮ হাজার ব্যান্ডের ওষুধই পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া লাইসেন্স পরিদর্শন, মাঠপর্যায়ে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ, কারখানা পরিদর্শন, মোবাইল কোর্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী ওষুধ বিক্রির জন্য ড্রাগ লাইসেন্স নিয়ে ফার্মেসী খুলতে হয়। প্রতিটি ফার্মেসীতে একজন ফার্মাসিস্ট থাকারও বিধান রয়েছে। আর ফার্মেসীতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রিরও নিয়ম নেই। কিন্তু অনেক অদক্ষ লোক ফার্মেসী খুলে ওষুধের ব্যবসা করছেন। তারা অনেক সময় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধের নাম ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। নির্দিষ্ট ওষুধের বিপরীতে অন্য ওষুধ দিয়ে দিচ্ছে ক্রেতাদের। আবার এলাকার অনেক ফার্মেসীর দোকানদার নিজেই ডাক্তার বনে যান। অনেক ওষুধ নির্ধারিত তাপমাত্রার মধ্যে রেখে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু ফার্মেসীগুলোতে সব ধরনের ওষুধ রাখার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলেও রাখা হয়। অনেক ফার্মেসীতে ফ্রিজও নেই। কিন্তু ফ্রিজেই সংরক্ষণ করতে হয় এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করছে। তাতে করে ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। যা ব্যবহার করার পর রোগী ভালো হবার পরিবর্তে তার জীবন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। অনেক ফার্মেসী নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করে। বিশেষ করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সংলগ্ন জেনারেল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের নিম্নমানের ওষুধ দেয়া হয়। ওসব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঘুরে বেড়ান। তারা বিভিন্নভাবে চিকিৎসক ও ফার্মেসী মালিকদের ম্যানেজ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর ওষুধ চিকিৎসাপত্রে লিখতে বাধ্য করে। সেজন্য অসাধু চিকিৎসকগণ ওসব ওষুধ কোম্পানি থেকে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় উপহার সামগ্রী-উপঢৌকন এবং নগদ অর্থ গ্রহণ পান। কোন কোন ওষুধ কোম্পানি বিনোদনের জন্য চিকিৎসকদের বিদেশেও নিয়ে যান। এমনকি অনেক মাদকসেবীও প্রভাব খাটিয়ে ফার্মেসী খুলে বসেছে। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরনের মাদক সংরক্ষণ করে সেবন ও বিক্রি করেন। ফলে দেশজুড়েই অপচিকিৎসা বেড়ে গেছে। সঠিকভাবে তা মনিটরিং করা হচ্ছে না।

সূত্র আরো জানায়, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে প্রকট জনবল সঙ্কট রয়েছে। বর্তমানে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা-১১৮, দ্বিতীয় শ্রেণীর ২৫টি তৃতীয় শ্রেণীর ১১৫টি, ৪র্থ শ্রেণীর ১১২ সহ মোট-৩৭০টি পদ রয়েছে, তার মধ্যে ১ম-২৩, ২য়-১০, ৩য়-৩৯, ৪র্থ-১৫টিসহ মোট ৮৭টি পদ শূন্য রয়েছে। ওষুধের মান রক্ষাকারী ল্যাবরেটরিতে ৬০ পদের মধ্যে ১৮টি শূন্য রয়েছে। অন্যান্য দেশে ওষুধ প্রশাসনের কাজগুলো ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে তা হচ্ছে না, বরং একই ব্যক্তি ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, পরিদর্শন, লাইসেন্স বিতরণের কাজ করছেন। বর্তমানে প্রতি জেলায় ১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। আর পরিদর্শক রয়েছেন ৬৭ জন। তার মধ্যে জেলা পর্যায়ে ৫৭ জন এবং প্রধান কার্যালয়ে ১০ জন। এই অল্পসংখ্যক পরিদর্শক দিয়ে সারাদেশের ওষুধ খাত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে দেশে ১৬৬টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কারখানা রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠান বছরে ২০ হাজার ৪০৬টি টাকার পণ্য ও কাঁচামাল উৎপাদন করে। ২৬৭টি ইউনানী ২০৭ আয়ুর্বেদিক এবং ৭৯টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠানে ৮৫০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করছে। বর্তমানে যে পরিমাণ ওষুধ আছে তার শতকরা ৭০ ভাগ পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। যদিও অধিদফতরের জনবল সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন পদে ২ হাজার লোক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অথচ এখানে লোকবল দরকার প্রস্তাবের চেয়েও ৫ গুণ বেশি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম কিবরিয়া জানান, বর্তমানে অধিদফতরের কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে। নতুন ওষুধ কারখানা স্থাপনে প্রকল্প মূল্যায়ন ও অনুমোদন, জৈব-অজৈব ওষুধের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, ওষুধের বিদ্যমান ও নতুন বেসিসি অনুমোদন, কারখানা পরিদর্শন, কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন, প্রি মার্কেটিং ও পোস্ট মার্কেটিং পর্যায়ে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্ট, মান-নিয়ন্ত্রণ, লেভেল ও কার্টন অনুমোদন, নতুন ওষুধের নিয়ন্ত্রণ, খুচরা মূল্য নিবন্ধন, আমদানিকৃত ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল কাস্টমস থেকে ছাড়করণে প্রত্যয়নপত্র প্রদান, আমদানিকৃত ওষুধের নিবন্ধন প্রদান, ওষুধ রফতানির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, পাইকারি ও খুচরা ওষুধ বিক্রি, ফার্মেসী মনিটরিং এবং ভেজাল ও মানহীন ওষুধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান। তাছাড়া অধিদপ্তরের নিজস্ব কাজ তো রয়েছেই।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর