আমদানি চালের প্রভাবে অবৈধ মজুদ চাল নিয়ে বিপাকে মিল মালিকরা
ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
অবৈধ চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। চলছে সাঁড়াশি অভিযান। ফলে অবৈধ মজুদ চাল নিয়ে মিল মালিকরা বিপাকে পড়েছে। বিপদ এড়াতে এখন মজুদ চাল সরাতে বেপারি ও পাইকারদের কাছে ধর্না দিতে শুরু করেছে। তবে নিয়মিত পাইকাররা তাতে আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছেন না। কারণ মিলারদের চড়া দামের চালে তাদের আগ্র কম। যদিও পিঠ বাঁচাতে সরকারের সাথে বৈঠকে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন মিলাররা। তবে অস্থির চালের বাজারে এখনো স্বস্তি ফিরে আসেনি। বরং কোথাও কোথাও চালের দাম বেড়েছে। চাল বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের চালের বড় আড়তগুলো এখন অনেকটাই ক্রেতাশূন্য। ব্যবসায়িরা বরং এখন বেসরকারিভাবে আমদানি চালের দিকে ঝুঁকছে। প্রতিদিন স্থলবন্দর দিয়ে শত শত টন চাল দেশে ঢুকছে। শুধু স্থলবন্দর দিয়েই নয়, কলকাতা বন্দর দিয়ে মাদার ভেসল ও লাইটার ভেসলে করেও নৌবন্দর দিয়ে দেশে চাল প্রবেশ করছে। তাছাড়া বিনা মার্জিনে চাল আমদানির সুযোগ থাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে চালের নতুন নতুন এলসি খোলা হচ্ছে। বর্তমানে ভারতে প্রতি টন চাল ৪২০-৪৬০ মার্কিন ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। দাম কমে আসায় চাল আমদানির পরিমাণও বাড়ছে। মিল মালিকরা যে চাল নিয়ে কারসাজি করছে এটা বুঝতে পেরেছে সরকার। বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। অবৈধ মজুদ চাল রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এই ভয়ে মিলাররা মজুদ কমাতে এখন চালের দামও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে দাম যে হারে কমানো উচিত ছিল মিলাররা তা করেননি। আবার দাম কমানোর ঘোষণাও সব মিলার এখনো কার্যকর করেনি।
সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় মিলাররা চালের বস্তাপ্রতি ১শ টাকা দাম কমালেও পাইকারি বিক্রেতারা নামমাত্র হ্রাস করা দামে নতুন করে চালের অর্ডার দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। তারা মনে করেন, চালের দাম মিলগেটে শুধু ২ টাকা নয়, প্রতি কেজিতে আরো ৩-৪ টাকা কমানো উচিত। তাহলে আমদানি করা চালের সাথে দেশি মজুদ চালের বাজারমূল্যে একটা সামঞ্জস্য তৈরি হবে। নতুবা পাইকাররা মিলারদের চাল না কিনে আমদানি করা চাল বিক্রিতেই নজর দেবে। সারাদেশে ২০ হাজার মিলার রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই ধান ও চাল দুটোই প্রক্রিয়াজাত করে। তার মধ্যে শতাধিক অটো রাইস মিলার নিজেদের উৎপাদিত চালকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বাজারে চাল সরবরাহ করে। ব্র্যান্ড মিলারদের বাজারে একচেটিয়া ব্যবসায় দামও হাঁকছেন ইচ্ছেমতো। তবে ওসব ব্র্যান্ড মিলারদের পাশাপাশি বিভিন্ন মিলারের বিরুদ্ধে উৎপাদন সক্ষমতার বেশি ধান ও চাল মজুদের অভিযোগও রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের অনেকের গুদামে অবৈধ মজুদের সন্ধানও পেয়েছে। তবে মিলারদের কারসাজি আরো গভীরে। তারা মজুদ করলেও সেটা অনেক সময়ই নিজেদের গুদামে মজুদ না রেখে বাজার থেকে কেনা ধান-চাল কৃষক বা ফড়িয়ার মাধ্যমে গোপন স্থানে মজুদ রাখেন। যা চোখে পড়ে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
সূত্র আরো জানায়, চাল বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার উদ্যোগী হলেও এখনো পাইকারি ও খুচরা পর্যাতে তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। কারণ পাইকারদের আগের মজুদ শেষ হয়নি। ফলে খুচরা পর্যায়ে তার প্রভাব পড়তে আরো সময় লাগবে। পাইকাররা এখন মিলারদের কাছে কম যাচ্ছে এবং আমদানি চালের প্রতিই বেশি ঝুঁকছেন। কারণ আমদানি চালে কমেছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা। কিন্তু দেশি মজুদ চালে কমেছে ২ টাকা। যেখানে বেশি মুনাফা পাবেন পাইকাররা সেখানেই যাবেন। ফলে মিলাররা এখন চাল দু-এক টাকা কমে বেচতে চাইলেও ক্রেতা পাচ্ছে না।
এদিকে চালের অবৈধ মজুদদারদের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অবৈধ মজুদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। অবৈধ মজুদদারদের ভোক্তা আধিকার আইন, অবৈধ মজুদ সংক্রান্ত আইনসহ সব আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে। সম্প্রতি বন্যায় হাওরে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে চালের সংকট দেখা দেয়। কিন্তু ওই সংকট মেটাতে যে চাল আমদানি হচ্ছে তা তুলনামূলক বেশি। কিছুদিনের মধ্যে চালের দাম কমতে শুরু করবে।
তিনি আরো বলেনম এখন চটের বস্তায় চাল আমদানির সরকারি বাধ্যবাধকতার সিদ্ধান্ত আগামী ৩ মাসের জন্য স্থগিত করা হল। এখন যে যেভাবে পারেন চাল আমদানি করেন। আমরা এনবিআর ও কাস্টমসকে বলে দিচ্ছি। কেউ বাধা দেবে না। প্লাস্টিকের বস্তাসহ ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে খুশি চাল পরিবহন করতে পারবেন।