খামার ব্যবসায় শিক্ষিত যুবকরাও ঝুঁকছে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
কৃষি ও পশুপালন নিয়ে প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে উচ্চশিক্ষিত যুবকরাও এখন খামার ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন।
শখের বশে গরু প্রতিপালন শুরু করে চার বছরে পুরোদস্তুর খামার ব্যবসায়ী বনে গেছেন মোহাম্মদ আলী শাহিন নামে এমনই একজন; মোহাম্মদপুরের বছিলায় গড়ে তুলেছেন মেঘডুবি অ্যাগ্রো নামে গরুর খামার।
মোহাম্মদ আলী শাহিন এখন মেঘডুবি অ্যাগ্রোর মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক; তার সঙ্গে খামারের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তেজগাঁও কলেজ থেকে মার্কেটিংয়ের স্নাতক ফুফাতো ভাই তারেক মোহাম্মদ।
তারেক বলেন, “আমরা ভাবি খামারি হবেন একজন অশিক্ষিত মানুষ, কিন্তু একজন সুশিক্ষিত যুবকও যে এই পেশায় আসতে পারে সেই মানসিকতার অভাব রয়েছে।
মেঘডুবি অ্যাগ্রো খামারে রয়েছে প্রায় তিনশ গরু-মহিষ। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন মেঘডুবি অ্যাগ্রো খামারে রয়েছে প্রায় তিনশ গরু-মহিষ। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন “এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত, আমাদের দেখাদেখি এখন অনেক উচ্চশিক্ষিত ছেলেরা খামার করছে।”
তারেক জানান, মোহাম্মদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটিতে ৫২ কাঠা জমির গড়ে তোলা হয়েছে মেঘডুবি অ্যাগ্রো।
তারা মূলত মাংসের চাহিদা মেটাতে গরু পালন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এক হাজার ৮০০ গরু রয়েছে খামারে।
“এছাড়াও গাভী রয়েছে ১৮০টি, যেগুলো থেকে প্রতি দিনে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ লিটার দুধ মিলছে।”
ঢাকার এই খামার ঘুরে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিছন্ন পরিবেশে সারি করে রাখা শত শত গরু; বেঁধে রাখা প্রতিটি গরু পাচ্ছে পর্যাপ্ত স্থান; রয়েছে আরামদায়ক বিছানা; সর্বক্ষণ বাতাস দিচ্ছে ফ্যান; কোনও ধরনের মোটাতাজাকরণ ওষুধ ছাড়া প্রাকৃতিক খাবারেই হচ্ছে গরু প্রতিপালন।
খামারে প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হয় গরুর খাবারের দিকেও। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন খামারে প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হয় গরুর খাবারের দিকেও। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন তারেক জানান, দুই বিঘা জমি নিয়ে বাড্ডাতে মেঘডুবি অ্যাগ্রোর একটি ডেইরি ফার্ম এবং কুষ্টিয়ার হালশাতে আরেকটি খামার রয়েছে।
খামারে গরু প্রতিপালনের ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “হাটের গরুদের ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা হয়; ওগুলোকে ঠিকমত খাবার ও পরিচর্যা করা হয় না। অনেকেই এসব গরু ক্রয় করে প্রতারিত হন, মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।”
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু কিনে কুষ্টিয়ার খামারে নিয়ে বড় করার পর ঢাকায় আনা হয় জানিয়ে তারেক বলেন, “অসুস্থ কোনো গরু আমাদের খামারে বিক্রির জন্য রাখি না।
“আমরা এখানে যতœ করে, প্রাকৃতিক উপায়ে গরু বড় করে থাকি। ক্রেতারা আমাদের খামারে এসে প্রতিপালনের প্রক্রিয়া দেখেশুনে গরু কিনতে পারেন।”
খামারটিতে রয়েছে জার্সি, হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, উলবারি, কাংরেজ, হালিকার, গির, দেশালসহ নিজস্ব উপায়ে ব্রিড করা বিভিন্ন জাতের গরু।
খামারে পশুগুলোকে আরামদায়ক শীতল পরিবেশ দিতে লাগানো হয়েছে পানির ঝরনা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন খামারে পশুগুলোকে আরামদায়ক শীতল পরিবেশ দিতে লাগানো হয়েছে পানির ঝরনা। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন তারেক জানান, গরুর খাদ্য তালিকায় রয়েছে খড়, চিটাগুড়, গম, চালের খুদ, ভুষি, ডাবলি, ছোলা, কুড়া, খৈল, ধান ভাঙ্গা, খড়, কাঁচা ঘাস ছাড়াও শাক-পাতা জাতীয় খাবার।
ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু থেকে এক হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়, যেখানে দেশি গরু থেকে মিলে ৮০০ কেজি পর্যন্ত।
তারেক জানান, গরুর দাম ৬০ হাজার থেকে ১৪ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও, দাম নির্ভর করে গরুটির কতটা সুস্থ তার উপর।
“আমরা চাই একটি পরিপূর্ণভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করা, সুস্থ-সুন্দর গরু ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে।”
খামার পরিচর্যার জন্য সার্বক্ষণিক ৪০ জন কর্মচারী কাজ করেন জানিয়ে তারেক বলেন, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এর মধ্যে বুকিং শুরু হয়ে গেছে।
গরুর খাবারের দাম কমিয়ে দেওয়াসহ সরকারের পক্ষ থেকে খামারিদের পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধিতেও দাবি জানান মেঘডুবি অ্যাগ্রোর সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক।