মো: আল-আমিন, পঞ্চগড় সংবাদদাতা:
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ইসলামবাগ গ্রামে গত বছরে ব্রিজের কাজ শুরু হয়। গত ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। একটি ব্রিজ হবে এই স্বপ্ন অনেক দিনের ওই এলাকার সাধারণ মানুষের। স্বপ্নপূরণে কাজও শুরু হয়। ব্রিজ করার যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কয়েকদিন কাজ করলেও হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে কেটে উধাও হয়েছেন ঠিকাদার। এতে এলাকাবাসীর স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার পথে।
জানা যায় গত বছরে ইসলামবাগ ও গুয়াবাড়ী মধ্যবর্তী স্থানে এই ব্রিজটির কাজ শুরু হয়। শুরুর পর থেকে কাজে যথেষ্ট গতি ছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ব্রিজটির নির্মাণের যাবতীয় কাজ বন্ধ। ব্রিজ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মালামাল নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পালিয়েছেন। দেশের অনেক জায়গায় সেতু নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করা হয়নি। অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে এমন অনেক সেতু। শুধু তাই নয়, সেতুর কাজ শেষ হলেও এর দুই পাশের সংযোগ সড়ক না করায় কাজে আসেনি।
বিপুল অর্থ খরচ করে সেতুর কাজ আংশিক করার ঘটনা অহরহই দেখা যায়। সংযোগ সড়কের অভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের সেতু ব্যবহার করা যাচ্ছে না এমন নজিরও হরহামেশাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যায়। এসব ঘটনা অজানা নয় ইসলামবাগ ও গুয়াবাড়ী এলাকার মানুষের। তাই তারা উদ্বিগ্ন। শেষ পর্যন্ত কি তাদের স্বপ্নের ব্রিজটি পাওয়া হবে না, অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ব্রিজে চলাচল উপযোগী করে তোলা হবে না এসব আশঙ্কা ও উদ্বেগ এলাকাবাসীকে সারাক্ষণ তাড়িত করে বেড়াচ্ছে। এই একটি ব্রিজ এলাকাবাসীর বহু দুর্ভোগ লাঘব করতে পারে। কিন্তু এর কাজে যে কালো মেঘের ছায়া পড়েছে। যোগাযোগে অন্তহীন দুর্ভোগ। কবে দুর্ভোগ যাবে তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা।
কয়েক গ্রামের মানুষ এটি ব্যবহার করবে। এটি না থাকায় ভোগান্তি অষ্টপ্রহর লেগেই থাকে। ব্রিজ না থাকায় এলাকাবাসীকে নিত্য যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তা সামান্য ঘটনা নয়। কৃষিপণ্যসহ নানা পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। হেঁটে রাস্তা পারাপারেও যন্ত্রণার শিকার হতে হয়। চলাচলে আরও সমস্যা। এই রাস্তা দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারতেছে না।
এটি রীতিমতো এখন মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
পারাপারে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে সেতুর কাজ কবে শেষ হবে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ইসলামবাগ ও গুয়াবাড়ী গ্রামসহ অন্য গ্রামের মানুষ। তারা চাইছে ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ করে ভোগান্তিমুক্ত করা হোক। সরেজমিনে দেখা যায়, অসমাপ্ত ব্রিজ। এ যেন গ্রামবাসীর জন্য গলার কাঁটা হয়ে আছে।
শ্রমজীবি ও সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়া কৃষিজমির ফসল পরিবহনসহ নানা কাজে ব্রিজটি আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু ব্রিজটির কোন কাজ না করেও রাস্তা কেটে ঠিকাদার গেছেন পালিয়ে। বাকি কাজ অনিশ্চয়তায় ভরা।
গুয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা কানন জানায়, ব্রিজটির কাজ না করেই ঠিকাদার কিভাবে পালিয়েছেন আমার অজানা। এদে স্থানীয়দের মন ভেঙে পড়েছে। ব্রিজ হলে দুর্ভোগ থাকত না।
আরেক বাসিন্দা মমিন বলেন, গ্রামের প্রায় লোকের যাতায়াতের এটি রাস্তা । এই রাস্তাটি কাটার পর থেকে অনেক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। রাস্তাটি ঠিক হবে কিনা সন্দেহ। ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য বলেন, এই ব্রিজটির কাজ শেষ না করে ঠিকাদার পালিয়েছেন। ব্রিজের সব মালামাল নিয়ে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। অনেকের ধারণা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আওয়ামীপন্থি হওয়ায় কাজ ফেলে পালিয়েছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মাইদুল ইসলাম শাহকে সরাসরি অবগত করা হলে তিনি বলেন আমার জায়গাটা অজানা। তবে ব্রিজটির কাজ করার মেয়াদ শেষ হয়নি। রাস্তা কাটা নিয়ে দুর্ভোগে কথা বললে তিনি বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসতে হবে। প্রয়োজনে বিকল্প রাস্তা করে দিতে হবে। ব্রিজের কাজ না করে ঠিকাদার পালিয়ে যেতে পারেন না। আপনারা যেহেতু বলেছেন তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করার চেষ্ঠা করব। আগামী পশুদিনের সরেজমিনে যাব।
যেখানে ব্রিজটি করার সকল দায়িত্ব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সেখানে ব্রিজটির বিষয়ে তথ্য অজানা। সেখানে কবে ব্রিজটির কাজ শুরু কি না তা সন্দেহ থেকে যাওয়ার কথা।