বাগেরহাটে মধুমতির ভাঙন, বিলীন ঘরবাড়ি
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতি নদীর ভাঙ্গন দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দিনে আবারও নতুন করে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত বিলিন হচ্ছে দোকানপাট, বসতবাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমি। উপজেলার মধুমতি নদী সংলগ্ন শৈলদাহ গ্রামসহ আশপাশের অসংখ্য বসতবাড়ি, দোকানপাটসহ ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি। এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বড়বাড়িয়া ও কলাতলা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর ভাঙ্গন দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত ভাঙ্গনে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার পৈত্রিক বসতবাড়ি হারিয়ে এখন বাঁচার তাগিদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে ও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে রাস্তার পাশের খাস জমিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। রাতা রাতি সব কিছু হায়িয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা চরম হতাশার ভুগছেন। এতে নদী পাড়ের বাসিন্দারা চরম হতাশা গ্রস্থহয়ে পড়েছেন।এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও এখনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। এছাড়া শৈলদাহ বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম শেখ, শাহাদাৎ হোসেন, রহমান শেখ, মোমরেজ খান, লিন্টু খানসহ অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে জানান এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী পাড়ের দোকানপাট – ঘরবাড়ি টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। গত কয়েক দিনে মধুমতি নদীর ভাঙনে বাজার ব্যবস্থানা কমিটির অফিসসহ প্রায় ২০-২৫ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের প্রায় ২০-২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় রয়েছেন। নদী ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসের কর্মকর্তা বৃন্দ ও কলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার মতিয়ার রহমানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন এবং ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন তারা। শৈলদাহ বজার খেয়াঘাট ইজারাদার মোঃ রোকন উদ্দীন জানান এভাবে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে বাজারকে আর কোনভাবে রক্ষাকরা সম্ভব হচ্ছে না। এখানকার খেয়াঘাটটি বিলীন হতে বসেছে। এই খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন ওপাড়ের গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, কোটালীপাড়া ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শতশত মানুষ পারাপার হয়। বর্তমানে ভাঙনের কবলে পড়ে খেয়া পারাপারের সময় নানা রকমের দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এ ব্যপারে কতৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথানেই। স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ীদের সাতে কথাহলে তারা জানান মধুমতির ভাঙনের ভয়াবহতা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে অতিদ্রুত ভাঙ্গন রোধে সরকারীব্যবস্থা গ্রহন করানা হলে শৈলদাহ বাজারটি যে কোন সময় মানচিত্র থেকে মুছে যেতেপারে।এলাকাবাসী এ ব্যাপারে কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যপারে কলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার মতিয়ার রহমান জানান, ভাঙন কবলিত স্থানে প্রাথমিক ভাবে বালুর বস্তা দিয়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ভাঙন রোধে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যে কোন সময় নতুন নতুন এলাকা নদী গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। শ্রীঘ্রই ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রতিরোধ মূলক কাজ শুরু করা হবে। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোডের কর্মকর্তারা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন। ভাঙন কবলিত বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের বিধবা শরীফা বেগম কান্ন্াজড়িত কন্ঠে বলেন, বাপ-দাদার কবরসহ আশপাশের প্রায় ৫০টি কবর ও অনেক মূল্যবান গাছপালা, ঘর-বাড়ি এবং জায়গাজমি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে তারা। পরানপুর গ্রামের ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ আঃ হাকিম মোল্লা, ইব্রহিম মোল¬া, আশরাফ আলী শেখ, তৈয়াব আলী শেখ, জাফর ফকির, হরুন ফকির, টিটু খলিফা, আয়ুব আলী, শহিল শেখ, সহঅনেকেই জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে তাদের ঘর-বাড়ি ক্ষেত-খামার সহ সব কিছু হারাতে হয়। ৪-৫ বার বাড়িঘর সরিয়েও শেষ রক্ষা পাননি। গত গতকাল মঙ্গলবার থেকে আবার নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে এলাকায়। এ ব্যাপারে বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ সরদার জানান, কয়েক বছর ধরে অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে পরানপুর গ্রামের প্রায় ৫শত পরিবার ঘরবাড়ি ও জমিজমা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে। এই ভাঙ্গন থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।