প্রাইভেট ডিটেকটিভ ডেস্কঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ফৌজদারি মামলার আসামিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
একজন বিচারক বলেন, ‘পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে অন্ধ থাকে? পুলিশ থাকতে পারে, তা না হয় বুঝলাম! ১৩ তারিখে (গত ১৩ অক্টোবর) আটক করে তারপর জেলখানায় নিয়ে (পরদিন ১৪ অক্টোবর) মোবাইল কোর্ট বসান কী করে?।’
এ সময় আদালতে সাজা প্রদানকারী ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও দুজন উপ-পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে তলবকৃতদের পক্ষে শুনানি করেন ফারজানা শারমিন ও মোকবুল আহমেদ।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘অন্য (যে কোনো) মামলায় গ্রেপ্তার করলে নিয়ে যাবেন কোর্টে। তা না নিয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা দিলেন?’।
এ সময় মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ওনাদের মতো লোকদের কারণে মোবাইল কোর্টের ওপর লোকেরা আস্থা হারিয়েছে। যার কারণে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত এসেছে। তাই ওই কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা না দেয়ার আবেদন করছি এবং ওসি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও এমন ঘটনা ঘটায় তাকে প্রত্যাহারের আবেদন করছি।’
তলবকৃতদের আইনজীবী ফারজানা শারমিনকে বিচারক বলেন, ‘আপনারা কি এ বিষয়ে কনটেস্ট (প্রতিদ্বন্দিতা) করবেন?’
আইনজীবী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা কনটেস্ট করব।’
পরে বিচারক বলেন, ‘যেখানে তাদের অপরাধ স্পষ্ট, সেখানে কি করে আপনারা কনটেস্ট করতে চান।’
আইনজীবী ফারজানা শারমিন বলেন, ‘আমি দুঃখিত। আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। কনটেস্ট করতে চাই না।’
বিচারক বলেন, ‘ফাইজলামির একটা লিমিট (সীমা) আছে। এমনিতেই যা মনে চায় করেন। যেখানে দেখছেন এটা কালপেবল রঙ (দণ্ডনীয় ভুল), সেখানে কনটেস্ট করতে চাচ্ছেন?’।
‘১৩ তারিখে (গত ১৩ অক্টোবর) আটক করেন। ১৪ তারিখে (পরদিন) তাকে কোর্টে হাজির করতে হবে। কিন্তু কেন সেখানে মোবাইল কোর্ট বসবে? এটা কোন ধরনের খেলা চলছে? উকিলসহ জরিমানা করা দরকার। এ ধরনের প্র্যাকটিস (আদালতে মামলা পরিচালনা) করবেন না। সরাসরি বার কাউন্সিলে পাঠিয়ে দেবো।’
এরপর আদালত এ বিষয়ে দুপুরে আদেশের সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু আইনজীবী মনজিল মোরসেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য্যের আদেশ দেন।
গত ১৪ অক্টোবর দুই পুড়িয়া গাঁজাসহ ধরা পড়ার কথা বলেন চট্টগ্রামের লোহাগড়া আধুনগরের বেলাল হোসেনকে আট মাসের সাজা দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে মনজিল মোরসেদ এই রিট আবেদন করেন।
পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্য একটি মামলায় গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাতে বেলালকে গ্রেপ্তার করে পরদিন তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু গত ১৪ অক্টোবর মোবাইল কোর্টের এক আদেশে দেখানো হয়, বেলা ১২টা ১০ মিনিটে বেলালকে তার গ্রামের বাড়ির সামনে থেকে দুই পুড়িয়া গাঁজাসহ হাতেনাতে ধরা হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দ তালিকায় তারিখ বলা হয় ১৩ অক্টোবর রাত ৯টা ৫মিনিট। ’
‘স্পষ্ট হয়েছে যে, পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল কোর্ট স্থাপন করে বাদীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী।’