জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জুবায়ের হত্যা মামলার রায় ॥ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক আসামীদের হুমকীতে নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার
আরিফ সুমন, কলাপাড়া প্রতিনিধি
মায়ের মমতাস্পর্শে সাজানো গোছানো রয়েছে ছোট্ট শোয়ার রুমটি। পড়ার টেবিলে বইগুলোও রয়েছে তেমনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে সরকারী উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা হয়ে উজ্বল করবে বাবা-মায়ের মুখ। কিন্তু ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের অভ্যান্তরীন দন্ধে শেষ হয়ে যায় তারুন্যে উচ্ছল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ বাবুর জীবন প্রদীপ। ভেঙ্গে যায় একজন স্বপ্নচারী বাবার স্বপ্ন। বিশাল শূন্যতা আর নোনা জলে ভাসে মমতাময়ী মায়ের বুক।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরশহরের মদিনাবাগের নৌ-বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের দুই ছেলের মধ্যে ছোট জুবায়ের। খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বাবা-মায়ের স্বপ্নপুরনে ভর্তি হয়েছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। কিন্তু ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের অভ্যান্তরীন দন্ধে জুবায়েরকে কুপিয়ে, পিটিয়ে হত্যা করে নিজ দলের কর্মীরা। হত্যার তিন বছর পরে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলার রায়ে প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মোহাম্মদ রইছ ও জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাহবুব আকরামকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এছাড়াও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দু’জনকে দেয়া হয় খালাস।
আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধ হাইকোর্টে আপিল করেন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদুল ইসলাম রাজু। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানি শেষে ২৪ জানুয়ারি এ মামলার রায় প্রদান করেন। হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাাপ্ত আসামীদের আপিল ও ডেথরেফারেন্সের শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ মামলার রায়ে পাঁচজনের ফাঁসি বহাল রেখে দু’জনের কারাদন্ড ও চারজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। তবে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের অনেকেই পলাতক থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জুবায়েরের পরিবার।নিহত জুবায়েরের বাবা তোফায়েল আহমেদ বলেন, মামলার রায় নিয়ে কোন মন্তব্য করবনা। তবে পুর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে কৌশলীদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্বান্ত নিব। ইন্টারপোলের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে রায় কার্যকর করা হলে আমার সন্তানের আতœা তৃপ্ত হবে। তিনি অরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকার আর্থিক সহায়তাসহ সহমর্মিতা জানানো হলেও সরকার কিংবা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোন সহমর্মিতা বা খোজ নেয়া হয়নি।
রাশেদুল ইসলাম রাজু ছাড়া বাকি ৪ পলাতক আসামী দীর্ঘদিনেও গ্রেফতার না হওয়ায় তাদের অব্যাহত হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে জুবায়েরের ফুপাতো ভাই লুৎফুল হাসান রানা জানান, ন¤্র, ভদ্র বিনয়ী, মৃদুভাষী জুবায়েরকে কেউ হত্যা করতে পারে এটা কল্পনারও বাইরে।